রানি এলিজাবেথ দ্বিতীয় এবং এডিনবরোর ডিউক রাজকুমার ফিলিপের সম্পর্ক ছাপিয়ে যেতে পারে যে কোনও প্রেমকাহিনি। ছবি: সংবাদ সংস্থা
সব সম্পর্কেই নানা রকম চড়াই-উতরাই থাকে। তবে রানি এলিজাবেথ দ্বিতীয় এবং এডিনবরোর ডিউক রাজকুমার ফিলিপের সম্পর্ক ছাপিয়ে যেতে পারে যে কোনও প্রেমকাহিনিকে। ৭৩ বছরের দাম্পত্যজীবনের ইতি হয়েছিল ৯ এপ্রিল ২০১২ সালে। ৯৯ বছর বয়সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন রাজকুমার ফিলিপ। তবে এই দীর্ঘ দাম্পত্যের সবটাই কি সুন্দর গোলাপের মোড়া? নাহ্! সে পথে ছিল একাধিক কাঁটাও।
ব্রিটেনের রানি জনসমক্ষে চলবেন আগে। রাজকুমার ফিলিপ থাকবেন এক ধাপ পিছনে। ছবি: সংবাদ সংস্থা
এডিনবরোর ডিউক রানির দুঃসম্পর্কের তুতো ভাই ছিলেন। দু’জনে যখন প্রেম করে বিয়ে করেন (১৯৪৭ সালে) তখন এলিজাবেথের রানি হওয়ার কোনও কথা ছিল না। কিন্তু ইতিহাস বদলে তাঁর মাথাতেই বসেছিল ব্রিটেনের মুকুট। তার পর থেকেই তাঁর বিবাহিত জীবন আর পাঁচ জন দম্পতির চেয়ে অনেকটা বদলে গিয়েছিল।
ব্রিটেনের রানি জনসমক্ষে চলবেন আগে। রাজকুমার ফিলিপ থাকবেন এক ধাপ পিছনে। রানি হওয়ার পর ফিলিপকেও সকলের মতোই হাঁটু মুড়ে রানিকে কুর্নিশ জানাতে হবে। প্রকাশ্যে তাঁর হাতও স্পর্শ করা যাবে না। এলিজাবেথের মাথায় মুকুট ওঠামাত্র এমন নানা নিয়মে বেঁধে গিয়েছিল তাঁদের দাম্পত্য! সব নিয়ম খুব একটা ভাল ভাবে নেননি ফিলিপ। স্বামী হয়েও কেন রানিকে কুর্নিশ জানাতে হবে, তা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন । নেটফ্লিক্সের জনপ্রিয় সিরিজ ‘ক্রাউন’-এ বিষয়টি পর্দায় তুলে ধরা হলেও রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠরা অনেকেই এ বিষয়গুলি এড়িয়ে যান। অনেকে আবার বলেন, রাজকুমার ফিলিপ নিজেই রাজবংশীয়। ফলে তিনি রাজপরিবারের নিয়মকানুন ভালই জানতেন। তাই এ সব নিয়ে অহেতুক চর্চা হাস্যকর।
চার্লস এবং ডায়ানার বিবাহবিচ্ছেদের সময়ও ঘোরতর আপত্তি জানিয়েছিলেন ফিলিপ।
তবে যে বিষয়টা রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠেরাও অস্বীকার করতে পারেন না, তা হল রাজকুমার ফিলিপের ছেলেমেয়েদের পদবি নিয়ে আপত্তি। রানি এবং রাজকুমার ফিলিপের দীর্ঘ দিনের বিবাদ এই একটি বিষয়ে নিয়েই চলতে থাকে। কেন চার সন্তানের (রাজকুমার চার্লস, রাজকুমারী অ্যান, রাজকুমার অ্যান্ড্রু এবং রাজকুমার এডওয়ার্ড) পদবি তাঁর পদবি (মাউন্টব্যাটন) না হয়ে উইন্ডসর হবে, তা তিনি কিছুতেই বুঝতে পারছিলেন না। তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমার নিজেকে কীটপতঙ্গের মতো মনে হচ্ছে। গোটা ব্রিটেনে আমি বোধ হয় এক মাত্র পুরুষ যে নিজের সন্তানদের নামও ঠিক করতে পারবে না।’’ রাজকুমার ফিলিপের আপত্তি অবশ্য টেকেনি। ছেলেমেয়েদের নামের পদবি রাজপরিবারের পদবিই হয়েছিল।
এমন নানা বিষয়ে মতবিরোধ লেগেই থাকত রানি এবং তাঁর স্বামীর মধ্যে। বিশেষ করে রানি হওয়ার প্রথম কয়েক বছরে। বিয়ের নয় বছর পর রাজকুমার ফিলিপ একাই পাঁচ মাসের জন্য সফরে চলে যান। কমনওয়েল্থের কিছু দেশ তিনি রানি ছাড়াই ঘুরে এসেছিলেন। শুধু টেলিগ্রাম এবং কয়েকটা আন্তর্জাতিক ফোন কল ছাড়া তাঁদের বিশেষ যোগাযোগ ছিল না। সে সময়ে সম্পর্কে চিড় ধরতে শুরু করেছিল। ‘ক্রাউন’ দেখলে মনে হতে পারে সেই সফরে একাধিক অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন ফিলিপ। কিন্তু এই তথ্যের কোনও রকম প্রমাণ স্বাভাবিক ভাবেই নেই। রাজপরিবারে তাঁর দায়িত্ব ঠিক কী কী, কেন তাঁকে আরও বেশি রাজদায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে না, তা নিয়েও নানা বিবাদ চলত দু’জনের মধ্যে।
কখনও কখনও কানাঘুষো শোনা যেত লেখক ড্যাফনে ডু ম্যরিয়ার এবং ক্যাবারে তারকা হেলেনা কর্বেটের সঙ্গেও তাঁর দীর্ঘ পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। কিন্তু এরও কোনও প্রমাণ পাওয়া যায় না। ‘প্রোফর্মা’ কেলেঙ্কারিতে নাম জড়িয়েছিল রাজকুমার ফিলিপের। ১৯৬১ সালে প্রত্যেক রাতে চলতে থাকে নানা যৌন-পার্টির নাকি নিয়মিত অতিথি ছিলেন ফিলিপ। কিন্তু রাজপরিবার বরাবরই এ বিষয়ে কোনও রকম মন্তব্য করেনি।
রাজকুমার অ্যান্ড্রুর জন্মের পর অবশ্য ফের ধীরে ধীরে মজবুত হতে থাকে রানি এবং ফিলিপের দাম্পত্য জীবন। নানা রকম বোঝাপড়ার মাঝেই তাঁরা কাটিয়ে দেন দীর্ঘ ৭৩ বছর। রাজপরিবারের বহু বিষয়ে নিয়মিত ফিলিপের মতামত নিতেন রানি। চার্লস এবং ডায়ানার বিবাহবিচ্ছেদের সময়ও ঘোরতর আপত্তি জানিয়েছিলেন ফিলিপ। এবং বহু দিন পর্যন্ত তাঁদের বিয়ে টিকিয়ে রাখার সব রকম প্রয়াস চালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি সফল হননি। ৭০ বছরের রাজত্বে রানির পাশে বেশির ভাগ সময় ছিলেন ফিলিপ। রানি নিজে বহু বার বলেছেন, ‘‘আমায় মাটির কাছাকাছি রাখার পিছনে ফিলিপের বড় অবদান রয়েছে।’’