অভিনত্রী প্রিয়ঙ্কা চোপড়া এবং তাঁর মেয়ে মালতী। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
বলিউডের পাশাপাশি হলিউডেও নিজের ব্যক্তিত্ব, অভিনয় ক্ষমতার পরিচয় রেখেছেন তিনি। এক সময়ের বিশ্বসুন্দরী এখন এক শিল্পীর স্ত্রী, মেয়ের মা। পেশাগত-সাংসারিক জীবন সমানতালে সামলাচ্ছেন অভিনেত্রী প্রিয়ঙ্কা চোপড়া। একই সঙ্গে মেয়েকে মানুষও করছেন।
তিনি তারকা বটে, কিন্তু এক জন মা-ও তো! মা-মেয়ের অবসর যাপনের বিভিন্ন মুহূর্ত ছড়িয়ে রয়েছে সমাজমাধ্যমে। কখনও স্বামী নিক জোনাস এবং মেয়ে মালতীকে নিয়ে ছুটি কাটান তিনি। কখনও মেয়ের সঙ্গে খেলা করতে দেখা যায় অভিনেত্রীকে।
সারোগোসির মাধ্যমে জন্ম হয়েছে প্রিয়ঙ্কা এবং নিকের কন্যার। ২ বছরের মালতী মেরিও এখন অনুরাগীদের চর্চায়। প্রিয়ঙ্কা তাঁর সমাজমাধ্যমের পাতায় জানিয়েছেন, মেয়েকে সময় দিতে কখনও আগাম শুটিং শেষ করে ফেলেন তিনি, কখনও তাকে নিয়ে পার্কে যান। একসঙ্গে হাঁটেন, কথা বলেন এবং গল্পও করেন।
কর্মরতা মায়েরা জানেন, সারা দিনের কাজকর্ম সামলে সন্তানের জন্য সময় বার করা কতটা কঠিন। দিনের শেষে সামান্য সময় পড়ে থাকে সন্তানকে দেওয়ার জন্য। এতেই কি খুদেকে ভাল রাখা যায়? কর্মরতা মায়েরা কী ভাবে সন্তানদের সঙ্গ দেবেন, সময় কাটাবেন, পরামর্শ দিলেন মনোবিদেরা।
মেয়ে মালতীর সঙ্গে প্রিয়ঙ্কা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
মনোবিদ স্মরণিকা ত্রিপাঠী বলছেন, ‘‘পেরেন্টিংয়ের সংজ্ঞা ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে। শিশুরা এখন মায়েদের জন্য গর্ববোধ করে। মায়েরা যে বাইরে কাজ করেন, ব্যস্ত থাকেন, সে সব তারা বুঝতে শিখে যায়। তাই মা শিশুকে কত ক্ষণ সময় দিচ্ছেন, তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেই সময়ে সন্তানের সঙ্গে মানসিক বন্ধন তৈরি হচ্ছে কি না।’’ মনো-সমাজকর্মী মোহিত রণদীপের পরামর্শ, দিনের মধ্যে একটি সময় নির্দিষ্ট করা দরকার, যখন মা এবং সন্তান একসঙ্গে সময় কাটাবেন।
কী ভাবে সন্তানের সঙ্গে সময় কাটাবেন কর্মরতা মায়েরা?
সন্তানকে বুঝুন
খুদের সঙ্গে সময় কাটানোর সময় তার মানসিক চাহিদাগুলিকে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন মনোবিদেরা। দিনভর কাছে না পাওয়ায় এক সময় মাকে দেখলে কিছুতেই আর তাকে ছাড়তে চায় না খুদে। এই সময় তার কথা শোনা দরকার, তাকে বলতে দেওয়া দরকার। নিজের কথা পরে বলে, আগে খুদের কথা শুনতে হবে, পরামর্শ স্মরণিকার। অফিসের ব্যস্ততায় সন্তানের ফোন ধরতে না পারলে, মেসেজ বা বার্তায় সে কথা জানানোর পরামর্শ দিচ্ছেন মনোবিদ।
গল্পের বিষয়বস্তু
সন্তানের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তার গল্প শুনতে হবে। তাকে নির্দ্বিধায় মনের কথা বলার সুযোগ দিতে হবে। মোহিত বলছেন, ‘‘শুধু গল্প নয়, শিশু যাতে তার অনুভূতি ব্যক্ত করতে পারে, সে বিষয়ে তাকে উৎসাহিত করা প্রয়োজন।’’
নিয়মানুবর্তিতা
শিশুরা বড়দের দেখেই শেখে। বাবা-মাকে অনুকরণ এবং অনুসরণ করে তারা। তাই মায়ের জীবনে নিয়মানুবর্তিতা জরুরি। মা কী ভাবে অন্যের সঙ্গে কথা বলছেন, কী ভাবে তার কথা শুনছেন, সবটাই লক্ষ করে শিশু। সেগুলিও তার দিনযাপনের অঙ্গ হয়ে ওঠে। শিশুকে সময় অল্প দিলেও,নিজের জীবনযাপনের মাধ্যমেই তাকে ঠিক, ভুল, নিয়মানুবর্তিতা শেখানো যায়।
ধৈর্যচ্যুতি নয়
সারা দিনের পর বাড়ি এসে খুদের বায়নাক্কা সামলাতে গিয়ে বা পড়াতে বসে দ্রুত ধৈর্য হারিয়ে ফেলেন মায়েরা। বকাবকি করে ফেলেন। মনোবিদ বলছেন, মা সন্তানকে কী ভাবে সামলাচ্ছেন, তা খুব জরুরি। বকাবকি করা বা কর্মক্ষেত্রের হতাশা, রাগ সন্তানের উপর গিয়ে পড়াটা কোনও কাজের কথা নয়।
খেলা
মা-সন্তানের একান্ত সময়টা দু’জনেরই হওয়া উচিত, বলছেন মোহিত। এই সময়টা তারা দু’জনে একসঙ্গে খেলতে পারেন, আঁকতে পারেন, রান্না করতে পারেন, হাতের কাজ করতে পারেন। মোবাইল এবং টিভির পর্দা থেকে দূরে কী ভাবে খুদেকে রাখা যাবে, তা মাকেই ভাবতে হবে।
ছুটির দিন
ছুটির দিনে বাড়তি সময় মেলে। তবে তার পুরোটাই খুদের জন্য রাখলে হবে না বলছেন মনোবিদ স্মরণিকা। তাঁর পরামর্শ, ছুটির দিনে এক জন মাকে নিজের জন্য, সন্তানের জন্য এবং পরিবারের জন্য সময় দিতে হবে। এই দিনটিতে পরিবারের সকলে একসঙ্গে ছবি দেখতে পারেন, একসঙ্গে হাঁটতে যেতে পারেন, পছন্দের খাবার খেতে যেতে পারেন।