শিশুর ওজন কম হলে কী করণীয়, বাবা-মায়েদের জন্য রইল কিছু পরামর্শ। প্রতীকী ছবি।
ইদানীং শিশুদের মধ্যে ওজন বেড়ে যাওয়ার প্রবণতাই বেশি। অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস এবং শরীরচর্চার অভাবে স্থূলতার সমস্যা এখন ঘরে ঘরে। তবে এর ব্যতিক্রমও আছে। শিশুর সার্বিক বৃদ্ধি ও বিকাশ যে বয়সে হয়, তখনই যদি ওজন কম বা চেহারা শীর্ণকায় হয়, তা হলে চিন্তার ব্যাপার তো রয়েছেই।
শিশুর বয়স এবং ওজন অনুযায়ী ‘বডি মাস ইনডেক্স’ বা ‘বিএমআই’ যদি ৫-এর নীচে হয়, তখন তার চেহারা নিয়ে অভিভাবকদের চিন্তা হতে পারে। অনেক সময়েই দেখা যায় ‘প্রি-ম্যাচিয়োর’ শিশুদের ক্ষেত্রে পরবর্তীতে গিয়েও ওজন তেমন ভাবে বাড়ে না। গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন যদি ভ্রূণ ঠিক ভাবে না বাড়ে, মায়ের শারীরিক কোনও সমস্যা থাকে, সে ক্ষেত্রে জন্মের সময়েই শিশুর ওজন কমে যেতে পারে। এ তো গেল একটা দিক। আবার তেমন কোনও শারীরিক সমস্যা না থাকা সত্ত্বেও, শিশুর ওজন কম হতে পারে। পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালোরি শরীরে না গেলে বা সব পুষ্টিকর উপাদান সঠিক মাত্রায় না পৌঁছলেও এমন হতে পারে।
শিশুর ওজন যে কম, তা বুঝবেন কী ভাবে?
বয়স অনুযায়ী উচ্চতার অনুপাতে শিশুর ওজন কত হতে পারে, তার একটা মাপকাঠি আছে। এর হেরফেরও হয়। তা-ও দেখে নিতে পারেন, হিসেবটা কাছাকাছি হচ্ছে কি না।
৬ মাসের শিশুর গড় ওজন ৭-৯.২ কেজি হতে পারে
৮ মাসের শিশুর গড় ওজন ৭.৮-৯.৮ কেজি হতে পারে
৯ মাসের শিশুর গড় ওজন ৮-১০.৫ কেজি হতে পারে
১ বছরের ছেলে হলে তার ওজন ১০ কেজি বা কিছু বেশি হতে পারে আর মেয়ের ক্ষেত্রে ওজন হতে পারে ৯ কেজির আশপাশে।
৩ থেকে ৫ বছরের ছেলের গড় ওজন ১৪ থেকে ১৭ কেজি হতে পারে, মেয়ে হলে তা ১৪ থেকে ১৬ কেজির কাছাকাছি হতে পারে।
শিশুর ওজন কম হলে কী করণীয়?
ওজন কম মানেই একগাদা খাবার জোর করে খাওয়ালে লাভ হবে না। বরং বারে বারে অল্প অল্প করে খাওয়াতে হবে শিশুকে। এই বিষয়ে আলোকপাত করলেন পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তী।
১) সুষম খাবার বলতে ভাত, রুটি, ডালিয়া, ওট্স খাওয়াতে হবে শিশুকে। সব রকম সব্জি রাখতে হবে পাতে।
২) দুধ মেপে খাওয়াতে হবে। যদি ১ বছর বয়স অবধি ১ লিটারের মতো দুধ খায় শিশু, তা হলে এর পর থেকে ৫০০ মিলিলিটার দুধই খাওয়াতে হবে।
৩) রোজ ফল খাওয়াতে পারলে ভাল। আপেল, কলা, বিভিন্ন ধরনের বেরি, জাম, আঙুর, ন্যাসপাতি, পাকা পেঁপে খুবই ভাল। রোজ ৫০-১০০ গ্রামের মতো ফল খেলে ভাল। ছোট থেকে ফল খাওয়ানো অভ্যাস করলে, পরে গিয়ে সমস্যা হবে না।
৪) ওজন অনেকটা কম থাকলে আলু ও মিষ্টি আলু খাওয়াতে পারেন শিশুকে। অনেক অভিভাবকই ভাবেন, আলু খেলে বুঝি শিশু বেশি মোটা হয়ে যাবে। আলু কী ভাবে খাওয়াচ্ছেন, তার উপর নির্ভর করছে বিষয়টি। রোজের পাতে আলু সেদ্ধ, আলু-মরিচ দিতে পারেন শিশুকে। তেল ছাড়া আলুভাতে মেখে দিন। আলু, সব্জি দিয়ে কম তেল ও মশলা তরকারি রান্না করে দিন। তবে আলু ভাজা, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই বেশি না খাওয়ানোই ভাল।
৫) শিশু যদি খিচুরি খেতে পছন্দ করে, তা হলে বেশি ভাল হয়। চাল, ডাল, বিভিন্ন ধরনের আনাজ দিয়ে তৈরি খিচুরি খেলে শিশুর পুষ্টি হবে।
৬) সামুদ্রিক মাছ খাওয়ালে বুঝেশুনে খাওয়াবেন, তার চেয়ে টাটকা মাছ, চিকেন খাওয়ালে বেশি লাভ। ৫ বছরের আগে অবধি সেদ্ধ খাবারই বেশি দিতে হবে। তার পর থেকে অল্প অল্প করে মশলা দেওয়া খাবার খেতে পারে।
৭) শিশু হয়তো একই খাবার রোজ খেতে চাইবে না। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খাবার দিন। মুগ ডালের চিলা, চিঁড়ের পোলাও, উপমা বানিয়ে দিতে পারেন।
৮) বাইরে থেকে কেনা প্যাকেটজাত মিল্কশেক না দিয়ে, বাড়িতেই বানিয়ে দিন বাদাম দিয়ে মিল্কশেক। এক মুঠো কাঠবাদাম বেশ কিছু ক্ষণ ভিজিয়ে রেখে খোসা ছাড়িয়ে বেটে নিন। এ বার দুধ ঘন করে সেই দুধে কেশর, বাদামকুচি মিশিয়ে বেটে রাখা বাদাম আর চিনি দিয়ে ফুটিয়ে নিন। মিশ্রণটি ঘন হয়ে গেলে ঠান্ডা করে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। চিজ, বাড়িতে বানানো লস্যি, দই শিশুর জন্য উপকারী। দুগ্ধজাত এই সব খাবার শিশুর হাড় মজবুত করবে।