ছোটদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিতে কী করবেন? ছবি: সংগৃহীত।
নিজের উপর বিশ্বাস থাকলে যেমন অনেক কঠিন কাজ সহজ হয়ে যায়, তেমনই আত্মবিশ্বাসের অভাব যে কোনও মানুষের ব্যক্তিত্ব, কর্মজীবনে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। মনোবিদেরা বলছেন, শিশুর ভবিষ্যতের জন্যই শুরু থেকে তার মধ্যে আত্মবিশ্বাসের বীজ বপণ করা প্রয়োজন।
মনো-সমাজকর্মী মোহিত রণদীপের কথায়, অনেক সময়ে এ ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায় শিশুকে নিয়ে সমালোচনা, অন্যদের সঙ্গে তুলনা টানা। আমাদের সমাজে আত্মপ্রত্যয় অনেকটাই তৈরি হয় অন্যের কথার উপর। কেউ যদি সর্বক্ষণ বলতে থাকেন, তোমার দ্বারা কিছু হবে না। শিশু হোক বা বড় কেউ, কোনও একটা সময় তার মনে হয়, সত্যি কিছু হবে না। নিজের উপর বিশ্বাসের এই অভাব পরবর্তী জীবনেও প্রভাব ফেলে।
কী ভাবে শিশুকে আত্মপ্রত্যয়ী করে তুলবেন?
উৎসাহ
সন্তানের মধ্যে আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে জরুরি হল তাকে উৎসাহ দেওয়া। বাবা-মায়েরা খুদের জীবনের না পারার চেয়ে পারাগুলিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখলে এই কাজ সহজ হয়ে যায়। খুদের ছোটখাটো সাফল্য নিয়ে তাকে উৎসাহিত করলে, সে যে কোনও কাজ খুশি মনে করতে চাইবে।
সিদ্ধান্ত
খুদে বড় হচ্ছে। তাকে সিদ্ধান্ত নিতে শেখানো প্রয়োজন। ২-৩টি জামার মধ্যে তাকে একটি বেছে নিতে বলতে পারেন। দুই থেকে তিনটি পদের মধ্যে তাকে খাবার বাছাই করতে উৎসাহিত করতে পারেন। খুদেকে ধীরে ধীরে বোঝানো দরকার, সে যা বেছে নিচ্ছে, তার ভাল-খারাপ তাকেই বুঝতে হবে।
লক্ষ্যপূরণ
শিশুকে যে কোনও কাজে উৎসাহিত করতে, তার সামনে নির্দিষ্ট লক্ষ্য রাখা যেতে পারে। পড়াশোনা হোক বা অন্য কাজ, তা যেন বাস্তবসম্মত হয়। খুদেকে চেষ্টা করলেই হবে বলে, এমন কাজ দেওয়া উচিত নয় যেটা সে পারবে না।
খুদেকে বলতে দিন
খুদে যা বলতে চায়, তা শোনা প্রয়োজন। তাকে বার বার থামিয়ে দিলে তার বিশ্বাস ধাক্কা খেতে পারে। সে হয়তো সকলের সামনে কিছু বলতে চাইছে বা নাচ করে দেখাতে চাইছে। বাধা না দিয়ে তাকে সেটা করতে দেওয়া দরকার। শিশুর স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশে বার বার বাধা দিলে সে নিজেকে গুটিয়ে নিতে পারে।
কড়া সমালোচনা নয়
কোনও কিছু না পারলে, তা নিয়ে সকলের সামনে সমালোচনা করা ঠিক নয় বলছেন মনো-সমাজকর্মী। শিশুকে ভুলটা ধরিয়ে দিতে হলে বকাবকি না করে, ভাল ভাবে বলা প্রয়োজন। এমন কোনও কথা বলা উচিত নয়, যাতে সে মনে আঘাত পায়। কারণ, সে ক্ষেত্রে শিশু নিজেকে গুটিয়ে নিতে পারে। আবার তার মনে হতে পারে, সে তো কিছু পারেই না। তা হলে চেষ্টা করে লাভ কী?
মোহিত রণদীপ বলছেন, ‘‘শিশুর মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব তৈরি হলে সে জেদি হয়ে উঠতে পারে। আবার হীনন্মন্যতাতেও ভুগতে পারে। কাজটি সে করতে পারে, এই বিশ্বাস হারিয়ে গেলে সহজ কাজ করাও কঠিন হয়ে পড়বে। তাই শুরু থেকেই শিশুর আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিতে নজর দেওয়া দরকার।’’