আদরের পোষ্যের বয়স হচ্ছে, কী ভাবে যত্ন নেবেন। ছবি: ফ্রিপিক।
পোষ্যের বয়স হচ্ছে? এই সময়ে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। পোষ্য কুকুর বা বিড়াল হোক, দেখবেন বয়সকালে সেই চনমনে ভাবটা কমতে থাকবে। একই জায়গায় বেশি ক্ষণ বসে থাকবে। খিদে কম হবে। দুর্বলও হয়ে পড়বে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ডায়াবিটিস, ক্যানসার বা আর্থ্রাইটিসের মতো অসুখও হয় পোষা কুকুরের। তাই এই সময়ে তাদের বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।
বয়স্ক কুকুর বা বিড়ালের যত্ন নেবেন কী ভাবে?
১) ঋতুবদলের সময়ে বেশি করে সাবধান থাকতে হবে। হঠাৎ খুব গরম পড়ল অথবা কনকনে ঠান্ডা আবহাওয়ায় এরা মানিয়ে নিতে পারে না। গরমের সময়ে পোষা কুকুর বা বিড়ালকে এমন জায়গায় রাখবেন যাতে তাদের শরীর ঠান্ডা থাকে। সম্ভব হলে ঘরে সবসময়ে পাখা চালিয়ে রাখতে হবে। গরমে খুব কষ্ট পেলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র চালিয়ে দিন কিছু ক্ষণের জন্য। শীতের সময়ে এমন বিছানা করে দিন যাতে শরীর গরম থাকে। জানলার পাশে বা বারান্দায় যেখান থেকে ঠান্ডা হাওয়া আসবে, তেমন জায়গায় পোষ্যের বিছানা রাখবেন না।
২) বয়স হলে খিদে কমে যাবে পোষ্যের। শরীরও দুর্বল হতে থাকবে। এই সময়ে প্রোটিন খাওয়াতে হবে। সিদ্ধ মাংস বা মাছ, ডিমের কুসুম দিতে পারেন। অতিরিক্ত নুন দেওয়া খাবার দেবেন না। চকোলেট বা ক্যাফিন দেওয়া খাবারও নয়। অনেকেই চকোলেট বিস্কুট দিয়ে দেন কুকুর বা বিড়ালকে। এতে তাতের ক্ষতিই হবে। ফল খাওয়ানো যেতে পারে। আম, কলা, আপেলের মতো ফল কুকুরকে দেওয়া যেতে পারে। তরমুজও খাওয়াতে পারেন। তবে গোড়াতেই খুব অল্প পরিমাণে দিয়ে দেখতে হবে, ওর কোনও সমস্যা হচ্ছে কি না। যদি অ্যাসিড বা অন্য সমস্যা না হয়, তা হলে নিয়মিত দেওয়া যেতে পারে ফল। ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন থাকে যা পোষ্যের স্বাস্থ্যের জন্য ভাল।
৩) বয়সকালে দাঁতের সমস্যা হতে পারে। দেখবেন দাঁতের রং হলুদ বা বাদামি হয়ে গিয়েছে, খেতে সমস্যা হচ্ছে, মুখ থেকে দুর্গন্ধ আসছে। শুধু তাই নয় তাদের দাঁত থেকে তৈরি হওয়া সংক্রমণ হৃদ্যন্ত্র ও লিভারেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। দাঁত পড়ে যাওয়া, মাড়িতে ঘা, চোয়াল বেঁকে যাওয়ার মতো সমস্যাও হতে পারে। তাই সপ্তাহে অন্তত ৩ বার পোষ্যর দাঁত মাজানো জরুরি। ডেন্টাল স্প্রে, ডেন্টাল ওয়াইপ ব্যবহার করতে পারেন।
৪) বয়স বাড়লে কানে কম শোনা, দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে যাওয়ার লক্ষণও দেখা দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে নিজে থেকে কোনও আই ড্রপ দেবেন না, অথবা ওষুধ খাওয়াবেন না। অভিজ্ঞ পশু চিকিৎসকের কাছে গিয়ে ভাল করে পরীক্ষা করিয়ে নিন। সম্ভব হলে ঘন ঘন পশু চিকিৎসকের কাছে গিয়ে টেস্ট করাতে হবে। যদি কোনও দুরারোগ্য রোগ বাসা বেঁধে থাকে, তা হলে তা ধরা পড়বে সহজেই।
৫) বাতের ব্যথা, হিপ ডিসপ্লাসিয়া হতে পারে পোষ্যের। যদি দেখেন হাঁটতে চলতে সমস্যা হচ্ছে, তা হলে দেরি না করে পশু চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
৫) বয়স বাড়লে কুকুরদের ওজনও যায় বেড়ে। ওজন যাতে না বাড়ে সে দিকে নজর রাখুন। কুকুরকে নিয়ে হাঁটতে বেরোন নিয়মিত।
৬) বয়স্ক পোষ্যের মন ভাল রাখার দায়িত্বও কিন্তু আপনারই। ওদের একা রাখবেন না অথবা সবসময়ে বাড়িতে একা রেখে চলে যাবেন না। সঙ্গ দিন, ওর সঙ্গে খেলুন। এখন পোষ্যদের জন্য বিভিন্ন রকম খেলনা বেরিয়ে গিয়েছে। সেগুলি কিনে আনুন। হালকা মিউজিক চালিয়ে দিন। পোষ্যের সঙ্গে কথা বলুন, দেখবেন ওদের মন ভাল থাকবে।
এই প্রতিবেদন সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা। পোষ্যের বয়স হলে তার সঠিক যত্ন প্রয়োজন। বয়স, ওজন, প্রজাতি ভেদে ডায়েটও ভিন্ন রকম হবে। তাই অবশ্যই পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।