প্রতীকী ছবি।
করোনা সংক্রমণে সুস্থতার হার অনেক বেশি। শুধু এ রাজ্যে বা দেশেই নয়, সারা বিশ্বেই। জনসাধারণ যাতে আতঙ্কিত না হয়ে পড়েন, তা নিশ্চিত করতে রাজ্য এবং কেন্দ্র, সব তরফেই ওই হারের উপরে জোর দিয়ে প্রচার চালানো হচ্ছে।অনেকেই মনে করছেন, এই ধরনের প্রচার অহেতুক ‘প্যানিক’ এড়াতে সাহায্য করছে। এক দিক থেকে তাই এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে ঠিকই। তবে সুস্থতার হার বেশি এবং মৃত্যুর হার কম দেখে আত্মসন্তুষ্টিতে ভোগার কোনও কারণ নেই বলে সতর্কও করছেন বিশেষজ্ঞেরা। কারণ, পুজোর মরসুমে ওই মানসিকতা ‘বুমেরাং’ হতে পারে। এমনিতেই জনসাধারণের একাংশ এখনও সংক্রমণ রোখার প্রাথমিক নিয়মগুলি পালন করছেন না। সেই অনিয়মে ‘করোনা হলে চিন্তার কী আছে, ঠিক সুস্থ হয়ে যাব’, এই গা-ছাড়া মনোভাব সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষেত্রে অনুঘটকের কাজ করবে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। যার ফল হতে পারে মাত্রাছাড়া সংক্রমণ! এক সংক্রামক রোগ চিকিৎসকের বক্তব্য, করোনায় সুস্থতার হার বেশি হলেও সবাই যে সুস্থ হয়ে উঠছেন, এমনটা নয়। ফলে পুজোর পরে প্রতিটি বাড়িতে কমপক্ষে এক জন কোভিড রোগী থাকার পরিস্থিতি যেন তৈরি না হয়! তাঁর কথায়, ‘‘কে সুস্থ হবেন আর কে সুস্থ হবেন না, সেটা কেউই জানেন না। ফলে ওই হার নিয়ে এই মুহূর্তে মাথা না ঘামানোই ভাল। তাতে পরিস্থিতির গুরুত্ব লঘু হয়ে যেতে পারে।’’
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রের খবর, করোনায় সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর (ডিসচার্জড) হার ৮৭.৫৬ শতাংশ। মৃত্যুহার ১.৫২ শতাংশ। এ রাজ্যের ক্ষেত্রে সুস্থতার হার ৮৭.৭৭ শতাংশ। সারা বিশ্বেও একই পরিস্থিতি। সুস্থতার হার ৯৬ শতাংশ ও মৃত্যুহার ৪ শতাংশ। গবেষকদের বক্তব্য, কম মৃত্যুহারের নিরিখে করোনাকে খুব ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে ধরা হয় না ঠিকই। কিন্তু করোনা যতটা সংক্রামক, সেখানে এই পরিসংখ্যান খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। বিশেষ করে পুজো মরসুমে, যেখানে প্রতি পদে সংক্রমণ রোখার নিয়ম লঙ্ঘিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে! মাইক্রোবায়োলজিস্ট ভাস্করনারায়ণ চৌধুরী বলছেন, ‘‘একটা বিষয় পর্যবেক্ষণ করে দেখা যাচ্ছে যে, করোনায় সুস্থতার হার বেশি, এই তথ্য জনসাধারণের একটি অংশের মধ্যে আত্মসন্তুষ্টি তৈরি করেছে। কিন্তু সুস্থতার হার বেশি দেখে আত্মসন্তুষ্টির জায়গা নেই!’’
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ-এর প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল নির্মল গঙ্গোপাধ্যায় মনে করছেন, করোনায় সার্বিক মৃত্যুহার কম হলেও বয়সভিত্তিক মৃত্যুহার কিন্তু আলাদা। যেমন ৫০-৭৫ বছর বয়সিদের মধ্যে মৃত্যুহার (কেস ফেটালিটি রেট) প্রায় ১৮ শতাংশ! নির্মলবাবুর কথায়, ‘‘সংক্রমণ ছড়ানোর পিছনে তরুণ-যুব সম্প্রদায়ের একটা ভূমিকা রয়েছে। ফলে এটা তাঁদের বোঝাতে হবে, সংক্রমিত হলে তাঁদেরও সবাই কিন্তু সুস্থ হয়ে উঠছেন না! অনেক দিন ধরে অনেককেই হাসপাতালে থাকতে হচ্ছে।’’ বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের সংক্রামক রোগ চিকিৎসক যোগীরাজ রায় আবার জানাচ্ছেন, সংক্রমিতদের মধ্যে অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়েছে, এমন রোগীদের সুস্থতার হার কত, সেটা জানা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সারা বিশ্বেই করোনা-রোগীদের ৯০ শতাংশ সুস্থ হয়ে উঠছেন। বাকি ১০ শতাংশ, যাঁদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার বা যাঁদের অক্সিজেনের প্রয়োজন হচ্ছে, তাঁরা হাসপাতালে ঠিক সময়ে আসছেন কি না, তাঁদের কী অবস্থা সেটাই এই মুহূর্তে বিচার্য। তাঁর কথায়, ‘‘ক্রিটিক্যাল রোগীদের ১০ শতাংশের মধ্যে কত জন বাঁচলেন, সেটা জানা গুরুত্বপূর্ণ। না হলে সার্বিক সুস্থতার হার দেখে নিয়ম মানার আর কী আছে, পুজোয় এই মানসিকতাই বিপজ্জনক।’’
জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯