বিভিন্ন কারণে চোখ লাল হতে পারে। কোনও কোনও কারণ রীতিমতো গুরুতর। তাই সতর্কতা জরুরি। প্রতীকী ছবি।
কবি নির্মলেন্দু গুণ একটি কবিতায় বলেছিলেন, ‘...কেউ অন্তত আমাকে/ জিজ্ঞেস করুক : ‘তোমার চোখ এতো লাল কেন?’”— কবিতাটিতে লাইনটি অন্য প্রসঙ্গে ব্যবহৃত। কিন্তু যদি আক্ষরিক অর্থেই লাল চোখের প্রসঙ্গ ওঠে, তা হলে বিষয়টি বোধহয় আমাদের দৈনন্দিন জীবনে পরিচিত। এ বিষয়ে অবহেলা নয়, সচেতন হলেই মঙ্গল।
লাল চোখের কারণ
চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. সুমিত চৌধুরী জানাচ্ছেন, আমাদের শরীরে যখন কোনও রোগ বাসা বাঁধে, তখন সেটির একটি উপসর্গ হল চোখ লাল হওয়া। শীতে অনেক সময়ে চোখ লাল হওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। সর্দি, কাশি বা কোনও ‘ভাইরাল ইনফেকশন’ থেকেও চোখ লাল হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে চোখে ‘অ্যান্টি অ্যালার্জি’ বা ‘লুব্রিকেটিং আই ড্রপস’ দিলে তা চোখের লাল ভাব কমায়।
বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও অনেক সময়ে দেখা যায়, শীতের শেষে চোখ খানিকটা লাল হয়ে থাকে। ঘন ঘন জল পড়তে থাকে। পড়তে বসলেও সমস্যা হয়। এরই সঙ্গে বারবার চোখ রগড়ানোর প্রবণতাও দেখা যায়। এই বিষয়টিকে ‘ভারনাল কনজ়াংটিভাইটিস’ বা ‘স্প্রিং ক্যাটারাল’ বলা হয়। এ ক্ষেত্রেও লুব্রিকেটিং ড্রপস দিতে থাকলে একটা সময়ের পরে উপশম মেলে। তবে পুরোপুরি তা সারতে কিছুটা সময় লাগে। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শে নির্দিষ্ট পরিমাণ ‘স্টেরয়েড ড্রপস’ দেওয়া যায়।
অনেক সময়ে আবার আবহাওয়া ও পরিস্থিতির প্রভাবে বাড়তে পারে চোখের শুকনো ভাব। এসি-র হাওয়া, বাইরের দূষণ বা ‘স্ক্রিনটাইম’ বেশি হলেও বাড়তে থাকে। সঙ্গে দোসর চোখের লাল ভাব। এ ক্ষেত্রেও চোখের ড্রপ দিয়ে লাল ভাব কাটানো যেতে পারে।
রোগের সঙ্কেত
ড্রপের সাহায্যে মোটামুটি চার-পাঁচ দিনের মধ্যে যদি লাল ভাব না সারে, তবে তা অন্য কোনও চোখের রোগের ইঙ্গিত হতে পারে।
ছানির সমস্যা: অনেক সময়ে চোখে ছানি হলেও তা অস্ত্রোপচার করে বাদ দেওয়া হয় না। এ ভাবে ফেলে রাখায় ছানিটি এক সময়ে ফেটে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে চোখে লাল ভাব দেখা দিতে পারে। সঙ্গে চোখে প্রচণ্ড যন্ত্রণাও হয়। চোখের প্রেশারও বেড়ে যায় বেশ কিছুটা। এমন পরিস্থিতিতে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শে ছানি অস্ত্রোপচার করা উচিত।
সাবকনজ়াংটাইভাল হেমারেজ়: অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, ঘুম ভাঙার পরে চোখ লাল হয়ে রয়েছে। আবার, যাঁদের উচ্চ রক্তচাপ আর ব্লাড সুগারের সমস্যা থাকে, তাঁদের চোখে রক্তক্ষরণ হতে পারে। তখনও চোখ লাল দেখায়। এই অবস্থাকে ‘চোখে স্ট্রোক’ হওয়া বলা হয়।
ডা. চৌধুরী জানালেন, এটি মূলত চোখের উপরের দিকে হওয়া এক ধরনের হেমারেজ়। খুব বেশি কাশি হলে এটা হতে পারে। এ ক্ষেত্রেও প্রাথমিক ভাবে ড্রপ দেওয়া যেতে পারে। যদি পাঁচ-ছ’দিনের মধ্যে লালচে ভাব না কমে, তখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার। নইলে দৃষ্টিশক্তির উপরে প্রভাব পড়তে পারে।
চোখের বাত (আইরাইটিস): শরীরে বাতের উপসর্গ থাকলে অনেক সময়ে চোখের আইরিসে প্রদাহ (ইনফ্ল্যামেশন) হয়। সেই প্রদাহ থেকেও চোখ লাল হতে পারে। এ ক্ষেত্রেও বেশি দিন ফেলে না রেখে দ্রুত চিকিৎসা করানো দরকার।
নজর লেন্স ও প্রসাধনে
পাশাপাশি, লেন্স বা প্রসাধন সামগ্রীর ব্যবহারেও চোখ লাল হতে পারে। আজকাল নানা রঙের লেন্স পরেন অনেকে। চোখের মণিকে আরও উজ্জ্বল দেখাতে বা সাজ আরও আকর্ষক দেখাতে তা সাহায্য করে। কিন্তু সুমিত জানাচ্ছেন, আমাদের সচেতন ভাবে এ সব ব্যবহার করা উচিত। চিকিৎসকের কাছ থেকে নেওয়া লেন্স বেশি নিরাপদ। সেই সঙ্গে লেন্স নিয়মিত পরিষ্কারও করতে হবে। তা না হলে নানা ধরনের চোখের রোগের সূত্রপাত হতে পারে। কিন্তু অনেকেই লেন্সের যথাযথ যত্ন নেন না। তাই এ সব ক্ষেত্রে ‘ডিসপোজ়েবল লেন্স’ ব্যবহার করার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। সে ক্ষেত্রে এক বার ব্যবহার করেই লেন্স ফেলে দেওয়া যায়।
প্রসাধন সামগ্রী ব্যবহারেও নিষেধ নেই। কিন্তু ডা. চৌধুরীর পরামর্শ, তা ব্যবহার করলে পরে ভাল ভাবে পরিষ্কার করতে হবে। সঙ্গে প্রসাধন সামগ্রীর মান যাতে ঠিক থাকে, তা দেখাটাও কর্তব্য। সেই সঙ্গে কিছু লুব্রিকেটিং ড্রপও ব্যবহার করা যেতে পারে। তাতে চোখে লাল ভাব হওয়ার সম্ভাবনা সে ভাবে থাকে না।
চোখের যত্ন নিন
বারবার চোখে জল দিন। এতে চোখ পরিষ্কার থাকবে। রোগও বাসা বাঁধতে পারে না।
চোখে হাত দেওয়ার অভ্যেসের ফলে নানা জীবাণু চোখে ঢুকতে পারে। এ বিষয়ে সাবধান হতে হবে।
বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ঠান্ডা সেঁক ও প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে গরম সেঁক কার্যকর।
চোখে যখনই কোনও সমস্যা অনুভূত হবে, দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।