বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ডায়েরিয়া নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীরা কেউ তিলজলা-তপসিয়া, কেউ হাতিবাগান, টালাপার্ক, কেউ বা ভবানীপুর, মুকুন্দপুর-যাদবপুরের বাসিন্দা। পরিস্থিতি এমনই যে, খোদ স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীকে শুক্রবার ছুটে যেতে হয়েছে হাসপাতালে। আইডি-র পরিকাঠামো পর্যাপ্ত মনে না হওয়ায় বিপর্যয় মোকাবিলার কারণে অন্য হাসপাতালের ডাক্তার-নার্সদের আনা হয়েছে। অথচ এর পরেও মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, পুরসভার কাছে রোগের এমন বাড়বাড়ন্তের খবর নেই। যদিও পুর-স্বাস্থ্য বিভাগের নিজস্ব বুলেটিনেই লেখা আছে, গত সোমবার থেকে শহরে এই রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে।
গত কয়েক দিনে বৃষ্টির কারণে শহরের বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন ছিল। কোথাও ৪৮ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে জল জমে থাকে। এর মধ্যেই ছড়াতে শুরু করে জলবাহিত রোগ ডায়েরিয়া। যদিও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নিছক ডায়েরিয়াতেই বিষয়টি আটকে নেই। বহু ডাক্তার রোগটিকে আন্ত্রিকের প্রকোপ বলে মনে করছেন। শহর বানভাসি হলে এমন যে হতে পারে, তা অজানা থাকার কথা নয় পুরসভার।
আইডি হাসপাতালে ভর্তি কিছু রোগীর বক্তব্য, তাঁদের এলাকায় গত কয়েক দিন পুরসভার তরফে ঘোলা জল সরবরাহ হয়েছে। কেউ বা জানান, রাস্তার কল নোংরা জলে ডুবে থাকায় তা থেকেই জলে দূষণ ছড়িয়েছে। পুরসভা সময়ে ব্যবস্থা নিলে তা রোখা যেত বলেও মনে করেন অধিকাংশ রোগীর আত্মীয়। কিন্তু মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় এ ক্ষেত্রেও বলেছেন, ‘‘তেমন কোনও অভিযোগ পাইনি। কিছু রোগী হাসপাতালে থাকতেই পারেন। জলে দূষণের জন্যই এটা হয়েছে বলে মনে হয় না।’’ প্রসঙ্গত, কলকাতা পুরসভায় জল সরবরাহ দফতর খোদ মেয়রের হাতেই।
পুর-স্বাস্থ্য দফতর অবশ্য রোগ ছড়ানোর কথা কার্যত স্বীকার করে নিয়েই জানায়, যে সব ওয়ার্ড জলমগ্ন হয়েছিল বা এখনও জলে ডুবে, সেখানে পুরকর্মীরা বাড়ি বাড়ি খোঁজ নিচ্ছেন। হ্যালোজেন মিশিয়ে জল খেতে বলছেন। আক্রান্তদের ওআরএস-ও দেওয়া হচ্ছে। মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ জানান, এলাকায় ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো হচ্ছে। হাত-পা ধুয়ে খাবার খেতে বলা হচ্ছে।
১০৯ নম্বর ওয়ার্ডে কিছু এলাকা এখনও জলমগ্ন। পুরসভার এক আমলা জানান, সেখানে কয়েক দিন ধরেই টাইফয়েড ও ডায়েরিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। মেয়র অবশ্য জানান, স্থানীয় ভাবে দু’-একটি জায়গায় ডায়ারিয়া হতে পারে। সেখানে জলের দূষণ রোধে ক্লোরিন ছড়ানো হচ্ছে। বড়সড় কোনও অভিযোগ এখনও আসেনি।
তেমন হলে পুর-প্রশাসন অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে।