নারী দিবসের বিশেষ পর্বে মনোবিদের সঙ্গে ছিলেন লেখিকা সম্রাজ্ঞী বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর অবস্থান একবিংশ শতকেও এসেও ঠিক ততটা স্পষ্ট নয়। সময় এগিয়েছে। বদলেছে যুগ। সমাজে নারীর মর্যাদার পাল্লা আপাত দৃষ্টিতে আগের চেয়ে কিছুটা হলেও ভারী হয়েছে বলে মনে হয়। কিন্তু প্রশ্ন তো শুধু মর্যাদার নয়। সম্মান আদায়ের লড়াইয়ে নারী কি আদৌ সফল হয়েছে? যে সম্মান তাঁর অনায়াসে পাওয়ার কথা, তা ছিনিয়ে নেওয়ার যে লড়াই তা তো জারি রয়েছে আজও। পুরুষশাসিত সমাজে পুরুষের প্রাধান্য অক্ষুণ্ণ রাখার চেষ্টায় নারীকে নিরাপত্তা দেওয়ার অঙ্গীকার থাকলেও তাকে সমানাধিকার দেওয়ার ভয় অবিরাম তাড়া করে চলেছে। সম্মানের পাশাপাশি সমান অধিকার আদায়ের লড়াইয়ের আগুনও ধিকিধিকি চলছে। মাঝে আর একটা দিন। তার পরেই ৮ মার্চ। আন্তর্জাতিক শ্রমজীবি নারী দিবস। এই নারীদের জন্য ধার্য করা আলাদা একটি দিনের উদ্যাপনের আগে এ সপ্তাহেও আনন্দবাজার অনলাইনের ইউটিউব এবং ফেসবুক লাইভে দিবসের বিশেষ পর্ব নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ পর্বের বিষয় ছিল, ‘সমানে নারী, সম্মানে নারী’। এই পর্বে মনোবিদ একা ছিলেন না, সঙ্গে ছিলেন লেখিকা সম্রাজ্ঞী বন্দ্যোপাধ্যায়।
নারী দিবস এলেই সমাজে নারী সমানাধিকার নিয়ে একটা চর্চা শুরু হয়। তৈরি হয় আলোড়ন। কিন্তু নারীর সমানাধিকার ঠিক কতটা ঝুঁকির মুখে? নারী কি আদৌ সাম্যে পৌঁছেছে? আলোচনার শুরুতেই মনোবিদ প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন সম্রাজ্ঞীর দিকে। সম্রাজ্ঞীর কথায়, ‘‘এই বিষয়টি অনেক বিস্তৃত। নারীর সমান অধিকার আদায়ের দাবি নিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কথাবার্তা হচ্ছে। কিন্তু আমরা ক্রমেই বুঝতে পেরেছি যে, আমাদের সাম্যের চেয়েও প্রয়োজন সম্মান। সব লিঙ্গের মানুষ এক রকম হয়ে যাবে, সেটা আমাদের কাম্য নয়। একই রকম হতে হবে না। কিন্তু সম মানটা প্রয়োজন। যে কোনও লিঙ্গের মানুষ সমাজে যেন সম মান পান। মেয়েরা সম্মান পাচ্ছেন না এমন নয়। কিন্তু সেটা পাওয়ার জন্য লড়াইটা আর একটু বেশি করতে হচ্ছে। শ্রমটা বেশি দিতে হচ্ছে।’’
শ্রম দিয়েও যখন এক জন নারী সম্মান পাচ্ছেন, তার পরেও তাঁকে নানা তির্যক মন্তব্য শুনতে হচ্ছে। নারীর সাফল্যে যে অনেক সময় শ্রমের নিরিখে মাপা হয় না। নারী মানেই মেধা বা শ্রম ছাড়াও আরও বিভিন্ন ভাবে সাফল্যের রাস্তা তৈরি হয়, সে কথা তো শোনা যায় সমাজে কান পাতলে। এগুলিও তো প্রযোজ্য হয় নারীর উপর। নারীর প্রতি সমাজের মনোভাব কি আদৌ বদলাবে? সম্রাজ্ঞী নিজে কি কখনও এমন মন্তব্যের মুখোমুখি হয়েছেন? মনোবিদের প্রশ্নের উত্তরে সম্রাজ্ঞী বলেন, ‘‘সমাজ পুরোপুরি বদলে গিয়েছে, তা তো একেবারেই নয়। কিন্তু আমার এখন আর এ সব কিছু শুনতে হয় না। আগে শুনেছি। আমার যেহেতু একটা সচেতন যাপন ছিল। আমি কখনও কারও পরিচয় নিজের সঙ্গে যোগ করে হাঁটিনি। আমার কাজ এবং পরিচয় একেবারেই আমার। ভাল কিংবা খারাপ, তার সম্পূর্ণ আমারি। তবে এখন আমার পরিচয়ের সঙ্গে নিজের কাজগুলিই উঠে আসে। পারিবারিক কোনও পরিচয় নয়।’’