একমাত্র তারকা বা মডেলদের পক্ষেই টানটান মসৃণ পেট তৈরি করা সম্ভব, এ ধারণা আজকের দিনে ভ্রান্ত। যে কোনও বয়সের পুরুষই সুঠাম অ্যাবস পেতে পারেন। সিক্স প্যাকস, এইট প্যাকসও অধরা নয়। তবে রণবীর সিংহ, বরুণ ধওয়নের মতো অ্যাবস পেতে চাইলে ধৈর্য আর অধ্যবসায় প্রয়োজন। জরুরি তথ্য হল, এই অ্যাবস তৈরির জন্য জিমের সরঞ্জাম লাগবে না। খালি হাতের কিছু ব্যায়ামই ম্যাজিক দেখাতে পারে। তবে প্রয়োজন দক্ষ প্রশিক্ষকের।
অ্যাবডোমিনাল মাসলকেই সংক্ষেপে বলা হয় অ্যাবস, যেটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ অ্যাবডোমিনিস থেকে। শারীরচর্চার দুনিয়ায় প্যাক অ্যাবসের কদর অনেক দিনই। বলিউডের দৌলতে আমজনতার অভিধানে এই শব্দবন্ধ এখন ঢুকে পড়েছে। প্যাক অ্যাবস তৈরির জন্য দীর্ঘ সময় ব্যয় করতে হয়। ফিটনেস বিশেষজ্ঞ সৌমেন দাস স্পষ্ট করে দিলেন, চেহারা সুঠাম ও মেদবর্জিত হলেই প্যাক অ্যাবস তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে। মধ্যপ্রদেশ স্ফীত হলে চলবে না। সে ক্ষেত্রে চর্বি ঝরিয়ে, আগে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে।
ঠিক কোন ধরনের এক্সারসাইজ় করলে প্যাক অ্যাবস পাবেন, তার হদিস দিলেন সৌমেন দাস—
* ক্রাঞ্চ: অ্যাবস তৈরির অব্যর্থ ব্যায়াম ক্রাঞ্চ। নানা ধরনের ক্রাঞ্চ আছে, পশ্চারের সামান্য এ দিক-ও দিক করে। তবে শুরু করতে হবে বেসিক ক্রাঞ্চ দিয়ে। ম্যাটে শুয়ে পড়ে পা ভাঁজ করে পেটের কাছে নিয়ে আসুন। হাত থাকবে মাথার পিছনে, ঘাড় মেঝে থেকে সামান্য উঠে। এই অবস্থায় শরীরের উপরের অংশ তুলে পায়ের দিকে আনতে হবে। এতে পেটের মাসলে চাপ পড়বে। প্রথমে ১৬টা করে তিন-চারটে সেট করতে হবে। ধীরে ধীরে কাউন্ট বাড়িয়ে ২০-২৫ এ নিয়ে যেতে হবে। তারকাদের মতো প্যাক পেতে গেলে কাউন্টের সংখ্যা ৫০-এর বেশি করতে হবে, অবশ্যই সময় নিয়ে।
* সাইড ক্রাঞ্চ: আগের পজ়িশনেই ক্রাঞ্চ করতে হবে। শুধু শরীরের উপরের অংশ এক বার ডান দিক, এক বার বাঁ দিক করতে হবে। এটাই ১৬ কাউন্টে তিন-চার সেট। ধীরে ধীরে ক্রাঞ্চের সংখ্যা বাড়াতে হবে।
* প্লাঙ্ক: যাঁরা নিয়মিত শারীরচর্চা করেন, তাঁরা প্লাঙ্কের উপকারিতা জানেন। প্যাক অ্যাবস করতে গেলে প্লাঙ্কের সময়সীমা বাড়াতে হবে। ২০ সেকেন্ড করে তিন-চার বার করুন। ধীরে ধীরে এক মিনিট পর্যন্ত বাড়ান।
* লেগ রেজ়: ম্যাটে সোজা হয়ে শুয়ে হাত শরীরের পাশে রাখুন, মেঝে থেকে সামান্য তুলে। এ বার দুটো পা একসঙ্গে তুলে উপরে নীচে করুন। হাত মেঝে স্পর্শ না করার ফলে, পেটের পেশিতে চাপ দিয়েই পা তুলতে হবে। ১৬ বার করে তিন-চার সেটে করুন।
* ডাবল লেগ রোয়িং: মেঝেতে শুয়ে দুটো হাত মাথার পিছনে ছড়িয়ে দিন। শরীরের উপরের অংশ তুলে হাত দিয়ে পা ছোঁয়ার চেষ্টা করতে হবে। শরীরের উপরের অংশ পায়ের কাছে নিয়ে আসার সময়ে দুটো পা একসঙ্গে পেটের কাছে টানতে হবে। উল্টো এল-এর মতো হবে পায়ের পজ়িশন। এ ভাবে ২০টা করে তিন-চার সেট।
* সিঙ্গল লেগ রোয়িং: ঠিক একই ব্যায়াম, এ বার ডান এবং বাঁ পা অল্টারনেট করে করতে হবে। তিন-চার সেটে ২০টা করে কাউন্টে।
প্রয়োজন সামঞ্জস্য
অ্যাবসের পাশাপাশি চেস্ট এবং হ্যান্ড এক্সারসাইজ়ও জরুরি। নয়তো দেখতে খারাপ লাগবে। বেঞ্চ সিট আপ, ডন বৈঠক এবং পেক ডেক ব্যায়াম চেস্ট-হ্যান্ডের জন্য ভাল। এ বার যাঁরা মেদবহুল চেহারা কমিয়ে প্যাক অ্যাবস পেতে চাইছেন, তাঁরা কী করবেন? ‘‘জোরে হাঁটা, জগিং সর্বোপরি দৌড়ানো— কার্ডিয়ো ছাড়া পেটের চর্বি দ্রুত কমানো সম্ভব নয়। পাশাপাশি সাঁতার ও সাইক্লিংও চলতে পারে,’’ বললেন সৌমেন দাস।
খাদ্যভাস
এই সময়ে হাইপ্রোটিন ডায়েটে থাকতে হয়। কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার কম খেতে হবে, তবে একেবারে বন্ধ করবেন না। ফল, জুস প্রচুর পরিমাণে খান। শারীরচর্চার জন্য যেমন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিচ্ছেন, তেমনই ডায়াটিশিয়ানের সঙ্গে কথা বলে খাদ্যতালিকা প্রস্তুত করুন।