মনোরোগের ও পারে নতুন জীবন শুরু করতে স্বনির্ভর হওয়া প্রয়োজন, সেই ভাবনা থেকেই এ বার ‘প্রত্যয়’-এ করা হল ‘জব ফেয়ার’। — নিজস্ব চিত্র।
গত বছর জুলাই মাসে শুরু হয়েছিল ‘প্রত্যয়’-এর পথ চলা। লুম্বিনী পার্ক ও পাভলভ মানসিক হাসপাতালে সুস্থ হয়ে ওঠা কয়েক জন মনোরোগীকে মূলস্রোতে ফেরানোর চেষ্টা শুরু হয় তখনই। ধীরে ধীরে বন্ডেল রোড এলাকায় ‘প্রত্যয়’-এর ঠিকানায় বাড়ে আবাসিকের সংখ্যা। এখন সে সংসারে ৪০ জনের বেশি বাসিন্দা। মনোরোগের ও পারে নতুন জীবন শুরু করতে তাঁদের নিয়মিত সাহায্য করছেন মনোসমাজকর্মীরা। সে ভাবনা থেকেই এ বার সেখানে করা হল ‘জব ফেয়ার’। বিভিন্ন সংস্থা ‘প্রত্যয়’-এ এল নিজেদের জন্য যোগ্য কর্মীর খোঁজে।
গত সোমবার ও মঙ্গলবার মিলিয়ে ‘প্রত্যয়’-এ মোট চারটি সংস্থা আসে চাকরিপ্রার্থীর খোঁজে। চাকরির ইন্টারভিউয়ে বসেন ১৯ জন আবাসিক। ‘প্রত্যয়’-এর প্রজেক্ট ম্যানেজার অভিজিৎ রায় জানান, মোট ১৭ ধরনের কাজের জন্য প্রার্থী পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের এখান থেকে ১৭ ধরনের কাজের জন্য উপযুক্ত প্রার্থী পেয়েছে সংস্থাগুলি।’’ রিসেপশনিস্ট, হিসাবরক্ষক, দোকানের ম্যানেজার, নিরাপত্তারক্ষী, বিপিও কর্মী, আয়া, রান্নার কাজ— নানা ধরনের চাকরির সন্ধান নিয়ে এসেছিল সংস্থাগুলি। ১৯ জনের মধ্যে মোট ১১ জন আবাসিক চাকরির জন্য বাছাই হয়েছেন।
১৯ জনের মধ্যে মোট ১১ জন আবাসিক চাকরির জন্য বাছাই হয়েছেন। — নিজস্ব চিত্র।
নিজের মতো করে ফের জীবন শুরু করতে গেলে কর্মসংস্থান জরুরি। নিজের খরচ চালানোর পথ বার করা দরকার। বহু দিন ধরেই তাই আবাসিকদের জন্য কাজের সন্ধান চলছে। এর আগেও পাঁচ জন আবাসিক কাজ পেয়েছেন। অন্যদেরও চাকরি, নতুন জীবন শুরু করার জন্য প্রস্তুত হওয়া দরকার বলে মনে করেন সকলে। সে ভাবনা থেকেই চাকরির খোঁজের প্রেরণা দেওয়া। আবাসিকদের নিয়ে নিয়মিত নানা রকম কর্মশালার আয়োজন করা হয়। তাঁদের বিভিন্ন কাজে পারদর্শী করে তোলার চেষ্টা হয়। নতুন জিনিস শেখানো হয় বলে জানালেন মনোসমাজকর্মী পিয়া চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের এই জব ফেয়ারে যেমন বেশ কয়েক জন চাকরি পেলেন, তেমন ইন্টারভিউতে বসার অভিজ্ঞতাও হল অনেকের। এটাও দরকার ছিল। আগামী দিনে যেন এমন অভিজ্ঞতা আরও অনেকের হতে পারে, সে চেষ্টা চালিয়ে যাব আমরা।’’
‘প্রত্যয়’-এর আবাসিকদের নিয়মিত দেখাশোনা করেন মনোসমাজকর্মী রত্নাবলী রায়। আবাসিকদের জন্য কাজের সন্ধান যে সহজ কাজ নয়, সে কথা মনে করালেন তিনি। রত্নাবলী বলেন, ‘‘এই কর্মসূচি সফল করে তোলার ক্ষেত্রে আমাদের সামনে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ ছিল। সাধারণ ভাবে একটা চাকরির ক্ষেত্রে যে যে বিষয়গুলোকে মার্কেট সিগন্যাল বলে মনে করা হয়, প্রত্যয়ের আবাসিকদের সকলের কাছে সেগুলো নেই। কাজের জগৎ থেকে একটা বিচ্ছিন্নতা আছে। এই সমস্যাগুলো সত্ত্বেও এঁদের বেশির ভাগই সাধারণ প্রার্থী হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন এটা একটা ভাল ব্যাপার। তবে এই অভিজ্ঞতায় আমরা দেখলাম, বিভিন্ন সংগঠন, যাঁদের শারীরিক প্রতিবন্ধকতা বিষয়ে নির্দিষ্ট নীতি আছে, মানসিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে তাঁদের তেমন কোনও নির্দ্দিষ্ট বোঝাপড়া নেই।
আরও একটা বিষয় আছে। আমরা তো আমাদের সাধ্যের মধ্যে বিভিন্ন সংগঠনকে নিয়ে এসেছি। কিন্তু এখানে যে ধরনের কাজ এবং তার যা বেতন, সেগুলোতে কেউ সন্তুষ্ট না হতে পারেন এবং মনে করতে পারেন তিনি নিজের দায়িত্বে প্রত্যয় থেকে বেরিয়ে কাজ খুঁজে নেবেন। কাজ করবেন। যাঁর বাড়ি কলকাতা থেকে অনেক দূরে, যেখানে কাজ খোঁজা আমাদের পক্ষে এখনও সম্ভব হয়নি, তিনি যদি তাঁর বাড়ির কাছে কাজ করতে চান, এবং আমরা না পারলে তিনি নিজের দায়িত্বে সেই কাজ করবেন বলে ঠিক করেন, তা হলে, সে ক্ষেত্রে নীতিগত ভাবে কী পরামর্শ দেওয়া হবে, সে সম্পর্কে আমাদের বোঝাপড়া আরও স্পষ্ট করা দরকার।’’ মনোরোগ থেকে সেরে ওঠা মানুষদের যে মূলস্রোতে ফিরিয়ে দেওয়া সহজ নয়, সে কথা স্পষ্ট করলেন রত্নাবলী।