ভরসা হাতপাখা, নাকাল রোগীরা

৩৬টি শয্যা। মাথার উপর বনবন ঘুরছে ১৬টি বৈদ্যুতিন পাখা। তাতেও স্বস্তি নেই। প্রায় প্রতিটি শয্যাতেই রোগীকে হাতপাখার হাওয়া করছেন পরিজনেরা। এক রোগী অসহায় মুখে বললেন, “একে শরীর খারাপ। তার উপর প্রচণ্ড গরমে আরও অসুস্থ পড়ছি। কবে যে রেহাই মিলবে জানি না।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৫ ০২:০৮
Share:

তীব্র গরমে হাঁসফাঁস রোগী। —নিজস্ব চিত্র।

৩৬টি শয্যা। মাথার উপর বনবন ঘুরছে ১৬টি বৈদ্যুতিন পাখা। তাতেও স্বস্তি নেই। প্রায় প্রতিটি শয্যাতেই রোগীকে হাতপাখার হাওয়া করছেন পরিজনেরা। এক রোগী অসহায় মুখে বললেন, “একে শরীর খারাপ। তার উপর প্রচণ্ড গরমে আরও অসুস্থ পড়ছি। কবে যে রেহাই মিলবে জানি না।”

Advertisement

মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিত্রটা এমনই। তা-ও যে সব রোগী শয্যা পেয়েছেন, তাঁরা ভাগ্যবান। কারণ, বহু রোগীরই ঠাঁই হয়েছে বারান্দায়। তাঁদের জন্য কোনও বৈদ্যুতিন পাখা নেই। একমাত্র ভরসা হাতপাখা। কোতোয়ালি থানা এলাকার নিশ্চিন্তিপুর গ্রাম থেকে জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন সোনাই মুর্মু। চারদিন হল শয্যা মেলেনি। বারান্দার মেঝেতে শোওয়া সোনাইকে ক্রমাগত হাওয়া করে চলেছেন স্ত্রী ও ছেলে সিমন। সিমনের কথায়, “মা আর আমি টানা চারদিন ধরে এ ভাবেই হাতপাখা নিয়ে বাতাস করে চলেছি।”

হাসপাতালে জল-সঙ্কটও রয়েছে। একে জল নেওয়ার জায়গায় লম্বা লাইন। তার উপর ট্যাঙ্ক গরম হয়ে যাওয়ায় কল দিয়ে গরম জলই পড়ছে। অস্ত্রোপচারের সময় চিকিৎসকদেরও বারবার ওই গরম জলে হাত ধুতে হচ্ছে। তা ছাড়া, অপারেশন থিয়েটারের বাতানুকূল যন্ত্রও মাঝেমধ্যে বিকল হচ্ছে। আর লোডশেডিং হলে তো ভোগান্তির অন্ত নেই।

Advertisement

এই গরমে আবার কিছু কিছু ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না। যেমন ব্যান্ট্রোলিন সোডিয়াম ইঞ্জেকশন দেশ জুড়েই অমিল বলে জানিয়েছেন চিকিত্‌সকেরা। এক চিকিত্‌সকের কথায়, “এ ক্ষেত্রে রোগীর দেহে ঠান্ডা জল ঢালা ছাড়া উপায় থাকবে না।” যদিও এখনও সে ঘটনা ঘটেনি বলে চিকিত্‌সকেরা জানালেন। আর যে সমস্যাটি হয়, তা হল গরমে অস্ত্রপোচার করা রোগীকে কত স্যালাইন দেওয়া প্রয়োজন সে আন্দাজ করা কঠিন হয়ে পড়ে। সাধারণ ক্ষেত্রে ৩ লিটার দিলেই হয়ে যায়। গরমের চোটে তা কখনও দ্বিগুণ করার প্রয়োজন হয়। তাই বাড়াতে হয় নজরদারিও। শল্য চিকিত্‌সক অমিত রায়ের কথায়, “গরমে আমাদের একটু বেশি সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। রোগীদের উপর বেশি নজর রাখতে হয়। কারণ, এই সময় আবার অ্যানাসথেসিয়ার কিছু ওষুধ অতিরিক্ত সক্রিয় হয়ে বেশি কাজও করে বসে।” গরমে ভোগান্তি বেড়েছে নার্সদেরও। মেদিনীপুর মেডিক্যালের এক নার্সের কথায়, “চারদিকে থিকথিক করছে রোগী। তার উপর রোগীর আত্মীয়দের ভিড়। চিত্‌কার চেঁচামেচি। মাত্র ক’টা পাখায় কী হয়! গরমে হাঁসফাঁস করতে করতেই কাজ করতে হচ্ছে।’’

সব মিলিয়ে যা অবস্থা তাতে রোগী থেকে চিকিৎসক-নার্স সকলেই বৃষ্টির অপেক্ষায় দিন গুনছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement