প্রশ্ন: এখন ঋতু পরিবর্তনের সময়। করোনা-উপসর্গের সঙ্গে এই ঋতু পরিবর্তনের উপসর্গে পার্থক্য কতটা?
• পার্থক্য অনেকটা। সাধারণ জ্বর ঘোরাফরা করে ১০০-১০১ ডিগ্রির মধ্যে। নিজে থেকেই এ জ্বর ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই সেরে যায়। ক্ষেত্রবিশেষে ওষুধ প্রয়োগ করতে হয়। চোখ,নাক দিয়ে জল বেরনো, গা হাত-পা ব্যথা, মাংসপেশি টেনে ধরা এগুলিই পারিপার্শ্বিক লক্ষণ। তবে করোনার সময় অনেক বেশি মাত্রায় জ্বর আসে। তার সঙ্গে স্বাদ ও গন্ধও হারিয়ে যায়। তবে এই ভাইরাসে জ্বর হলে চোখ নাক দিয়ে জল বের হয় না।
প্রশ্ন: ঋতু পরিবর্তনে শিশুদের সর্দি কাশি জ্বর হচ্ছে। ফলে করোনার আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। এটা কেন?
• আতঙ্ক ছড়ানোটা অবাস্তব নয়। কারণ কোভিডের প্রথম পর্য়ায়ে ভাবা হয়েছিল শিশুদের ক্ষেত্রে এই রোগের প্রকোপ হয়তো কম। কিন্তু পরে দেখা গেল যে শিশুদের মধ্যেও করোনার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। কোভিড হাসপাতালগুলির নিভৃতবাসে শিশুরাও ভর্তি হয়েছিল। ফলে সেই রোগের উপসর্গ ঋতু পরিবর্তনে দেখা দিলে আতঙ্ক তো তৈরি হবেই।
প্রশ্ন: শীতকালে কী ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে পারে?
• শীতকালীন সময়ে সূর্যরশ্মির তীব্রতা ক্রমশ হ্রাস পায়, দিনের দৈর্ঘ্য কমতে থাকে। এই সময় ইনফ্লুয়েঞ্জা, প্যারা ইনফ্লুয়েঞ্জা,অ্যাডিনো ভাইরাস প্রভৃতির বংশবৃদ্ধি করে। এই সময়টা ভাইরাসের মহানন্দের সময়। তাই এই সময় সতর্ক থাকা অবশ্য প্রয়োজন।
প্রশ্ন: শিশুদের মধ্যে এই সময় আতঙ্ক বৃদ্ধির লক্ষণ কী কী?
• করোনা প্রভাব ছড়িয়ে পড়তে শিশুরা অন্তর্মুখী হয়ে বহির্জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন। মেজাজ সপ্তমে চড়ে থাকছে। হঠাৎ শরীরে কম্পন অনুভূত হচ্ছে। এগুলিই শিশুদের অবসাদ ও আতঙ্কিত হওয়ার লক্ষ্মণ।
প্রশ্ন: অনেকের ধারণা জ্বর মানেই করোনায় আক্রান্ত। ঋতু পরিবর্তনের সময়ে যে ধারণা আরও বেশি করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। এটা কী ঠিক?
• ঋতু পরিবর্তনের কারণে যে সব শিশু জ্বর,সর্দি কাশি নিয়ে আসছে, তাদের বাবা মায়ের মধ্যেও কোভিড আতঙ্ক গ্রাস করছে। আতঙ্কিত হবেন না।শিশুদের অনাক্রমতা বা ইমিউনিটি বাড়ানোর জন্য ফল আনাজ, ভিটামিন ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার বেশি খেলে সংক্রমণ ছড়ানোর ভয় থাকবে না।
প্রশ্ন: বড়দের চেয়ে শিশুদের ক্ষেত্রে জ্বর জ্বালা এই সময় বেশি হয় কেন?
•এই সময় শিশুদের অ্যালার্জি বেশি দেখা যাচ্ছে। এটা মূলত তিন ধরনের—ড্রাগ অ্যালার্জি, ডাস্ট অ্যালার্জি এবং ফুড অ্যালার্জি। শিশুদের ক্ষেত্রে ডাস্ট অ্যালার্জির প্রভাব বেশি। এই ধরনের অ্যালার্জি যে সব বাচ্চাদের রয়েছে,তাদের ক্ষেত্রে ঠান্ডা লেগে জ্বর হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। বর্তমান প্রজন্মের বাচ্চারা বেশিরভাগ সময়ে ঘরের ভেতরে থাকায় তাদের শরীরে ভিটামিন-ডি এর অভাব রয়েছে। তাই জ্বরজ্বালায় সংক্রমণের প্রবণতা বেশি।
প্রশ্ন:ঋতু পরিবর্তনের সময় প্রাথমিক সতর্কতা কী নেওয়া যেতে পারে?
• প্রথমত দিনের বেশির ভাগ সময়টা সূর্যের আলোয় কাটালে উপকার হবে। এ ছাড়া ঘন ঘন ফ্রিজের ঠান্ডা জল পান না করা, ভোররাতে পাখা চালিয়ে না ঘুমনো,এসি না চালানো—এ সব সাবধানতাগ অবলম্বন করতে হবে।
প্রশ্ন: এই সময় জ্বর জ্বালা হলে কী কী ওষুধ গ্রহন করা যেতে পারে?
• জ্বর ভাইরাস ঘটিত একটি রোগ। ফলে তার জন্য শুধু প্যারাসিটামল ট্যাবলেটই যথেষ্ট। তবে ওষুধ না খেলেও নিজে থেকেই ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এই জ্বর সেরে যায়। বিশেষ ক্ষেত্রে প্যারাসিটামল জাতীয় ট্যাবলেট প্রয়োজন হয়। তবে যদি তাতেও জ্বর না সারে সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে কোভিড পরীক্ষা করা জরুরি। কোনও অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিকওষুধ খাওয়া উচিত নয়।
প্রশ্ন: জ্বর মানেই কোভিড নয়?
• না। ঋতু পরিবর্তনের সাধারণ জ্বর এবং করোনার কারণে জ্বরের মধ্যে অনেক পার্থক্য। জ্বর হলে ভয় পাওয়া বা অযথা আতঙ্কিত হওয়া উচিত নয়। মনে রাখা দরকার, মন দুর্বল হয়ে গেলে রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কমে যায়। ভিটামিন প্রোটিন জাতীয় খাবার বেশি করে খাওয়া প্রয়োজন। শিশুদের ক্ষেত্রে বেবি ফুড, এনার্জি ড্রিঙ্ক বা ফুড সাপ্লিমেন্ট কনও সুষম আহারের বিকল্প হতে পারে না।
বিভাগীয় প্রধান, মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল
সাক্ষাৎকার: ইন্দ্রাশিস বাগচী