প্রতীকী ছবি।
স্নেহের কাছে ফিকে হয়ে গেল করোনা-ভয়।
শিশুর জন্ম দেওয়ার পরই মায়ের শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। তাই তাঁকে শিশুটির কাছ থেকে সরিয়ে নিয়ে ভর্তি করানো হয়েছে কোভিড হাসপাতালে। মায়ের অনুপস্থিতিতে পালা করে নিজেরাই স্তন্যদুগ্ধ দিয়ে সেই সদ্যোজাতের খিদে মেটাচ্ছেন অন্য মায়েরা। এমনকি, ওই শিশুটিও করোনায় আক্রান্ত জেনেও তাঁরা বিন্দুমাত্র আপত্তি করেননি। বরং হাসিমুখে গত ছ’দিন ধরে এ ভাবেই শিশুটির দেখভাল করছেন তাঁরা। আলিপুরদুয়ারের বীরপাড়া সরকারি হাসপাতালের এ হেন ঘটনায় অভিভূত সেখানকার চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, গত ৩১ জুলাই মাদারিহাট ব্লকের বাসিন্দা এক মহিলা প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে ভর্তি হন। ওই দিনই পুত্রসন্তানের জন্ম দেন তিনি। কিন্তু জন্মের পরেই জন্ডিস ধরা পড়ায় শিশুটিকে হাসপাতালের এসএনসিইউ বিভাগে ভর্তি করানো হয়। নিজের ওয়ার্ড থেকে সেখানে গিয়েই সদ্যোজাতকে স্তন্যপান করাচ্ছিলেন মা। এরই মধ্যে হাসপাতালের এক চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হন। এর পরই হাসপাতালে ভর্তি সকলের লালারস পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেন কর্তৃপক্ষ। ৩ অগস্ট ওই মহিলার রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। চিকিৎসকদের একাংশের ধারণা, ৩ অগস্টের আগেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ওই মহিলা। সেই দিনই তাঁকে তপসিখাতার কোভিড হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরদিনই মাত্র পাঁচদিন বয়সি সদ্যোজাতের শরীরেও সংক্রমণ ধরা পড়ে। তাকে এসএনসিইউয়েই রাখা হয়। হাসপাতাল সূত্রের বক্তব্য, সংক্রমণ ধরা পড়ার আগে নিয়মিত এসএনসিইউয়ে গিয়ে স্তন্যপান করাচ্ছিলেন মা। তার জেরেই শিশুটি আক্রান্ত হয়েছে।
কিন্তু মায়ের থেকে আলাদা হয়ে পড়া শিশুটি মাতৃদুগ্ধ পাবে কী করে? এই চিন্তায় যখন কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, তখনই এগিয়ে আসেন এসএনসিইউয়ে ভর্তি অন্য সদ্যোজাতদের মায়েরা। হাসপাতালের সুপার বিদ্যুৎ ঘোষ বলেন, ‘‘ওই মায়েরা নিজেরাই শিশুটির জন্য এগিয়ে আসেন। পালা করে প্রতিদিন নিজেদের সন্তানকে দুধ খাইয়ে ওই শিশুটির জন্যেও দুধের জোগান দিচ্ছেন। সেইসঙ্গে অবশ্য কৃত্রিম দুধও শিশুটিকে দেওয়া হচ্ছে।’’ সুপারের কথায়, ‘‘শিশুটির খিদে মেটাতে অন্য মায়েদের এ ভাবে এগিয়ে আসাটা সত্যিই প্রশংসনীয়।’’
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ওই হাসপাতালের এসএনসিইউ বিভাগে এই মুহূর্তে করোনায় আক্রান্ত শিশুটিকে নিয়ে সেখানে ১৬টি শিশু ভর্তি। তবে হাসপাতাল সুপার বলেন, ‘‘এতটুকু শিশুদের থেকে করোনা ছড়ানোর আশঙ্কা কম থাকে। তা ছাড়া, এসএনসিইউয়ে একেবারে আলাদা করেই শিশুটিকে রাখা হয়েছে। ওকে যাঁরা দেখভাল করছেন, তাঁরা সুরক্ষা বিধি কঠোর ভাবেই মেনে চলছেন। তাই ওই শিশুটির থেকে অন্য কারও শরীরে করোনাভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা নেই।’’