আমাদের প্রত্যেক দিনের কাজে মোটর স্কিল ব্যবহৃত হয়। হাঁটা, দৌড়ানো, সিঁড়ি ভাঙা, জিনিস তুলে নেওয়া... এগুলো এত অনায়াস বিষয় যে, আমার আলাদা করে ভাবি না। কিন্তু শিশুদের ক্ষেত্রে মোটর স্কিল ডেভেলপমেন্ট ঠিকঠাক হচ্ছে কি না, সেটা দেখা জরুরি। সেই সঙ্গে তার মাসল ডেভেলপমেন্টের দিকেও নজর দিতে হবে।
মোটর স্কিল কী?
যে কোনও কাজ করতে গেলে কিছু নির্দিষ্ট মুভমেন্ট হয় আমাদের শরীরে। হাঁটা, দৌড়নো, সাইকেল চালানোর সময়ে নির্দিষ্ট কিছু মাসল কাজ করে। এটাই হল মোটর স্কিল, যার সঙ্গে আমাদের শরীরের নার্ভাস সিস্টেম, মাসল এবং ব্রেন যুক্ত। এই তিনটির কোঅর্ডিনেশনেই আমরা সব কাজ করে থাকি। অলকেন্দু বোধ নিকেতন রেসিডেন্সিয়ালের কোর্স কোঅর্ডিনেটর শ্রেয়শ্রী কুণ্ডু জানালেন, মোটর স্কিলের দু’টি ভাগের কথা। গ্রস মোটর স্কিল এবং ফাইন মোটর স্কিল। লার্জ মাসল যেখানে যুক্ত যেমন হাঁটা, দৌড়নো— গ্রস মোটর স্কিলের আওতায় পড়ে। ফাইন মোটর স্কিলে ছোট মাসলের ব্যবহার হয়। বোতাম লাগানো বা খোলা, জুতোর ফিতে বাঁধা, চাবি খোলা— ফাইন মোটর স্কিলের মধ্যে পড়ে।
শ্রেয়শ্রী কুণ্ডুর কথায়, ‘‘বাচ্চাদের মধ্যে ফাইন মোটর স্কিলের সমস্যাই বেশি দেখা যায়। পুঁতির মালা গাঁথা, কোনও ছোট জিনিসকে পরপর সাজানো, জামার বোতাম লাগানো— এগুলো করতে অনেক সময়েই শিশুদের সমস্যা হয়। একটা পাতায় লাইন টেনে দিয়ে কাঁচি দিয়ে লাইন বরাবর কাটতে বলা হল। দেখা গেল বাচ্চাটি সোজা ভাবে কাটতে পারছে না। এ ক্ষেত্রে ওদের চোখ এবং হাত কোঅর্ডিনেট করছে না। চোখ ও হাতের কোর্ডিনেশনের জন্য কিছু অ্যাক্টিভিটি আছে। সেগুলো করালে ফল পাওয়া যাবে।’’
* একটা বাস্কেটের মধ্যে বাচ্চাকে বল ফেলতে বলা হল। তার সামনে একটা দাগ কেটে দেওয়া হল। তার বাইরে সে যেতে পারবে না।
* একটা বোতল থেকে অন্য বোতলে জল ভরতে দেওয়া।
* কাঁচি দিয়ে দাগ বরাবর কাগজ কাটা।
* একটা বাটি থেকে ছোট পুঁতি তুলে অন্য বাটিতে রাখা।
* সুচে সুতো পরানো।
এগুলোয় হাত ও চোখের সামঞ্জস্য তৈরি হবে। ফাইন মোটর স্কিল ডেভেলপমেন্ট এবং হাত-চোখের কোঅর্ডিনেশন অঙ্গাঙ্গী ভাবে যুক্ত।
শিশুর এক মাস বয়স থেকেই কিন্তু গ্রস মোটর স্কিলের পরিচয় পাওয়া যায়। আঙুল নাড়ানো দিয়ে শুরু হয়, তার পর পা দুটো সাইকেলের মতো চালানো, উপুড় হওয়া ইত্যাদি। তার পর যখন ওরা জিনিস ধরতে শেখে, তখন থেকে ফাইন মোটর স্কিল ডেভেলপ করতে শুরু করে। প্রি-স্কুলের বাচ্চাদের পেপার কাটিং, ডো দিয়ে কিছু বানানো, মালা গাঁথা... এই ধরনের অ্যাক্টিভিটির সঙ্গে যুক্ত করলে, তা ওদের ফাইন মোটর স্কিলের বিকাশে সাহায্য করবে।
জরুরি শারীরচর্চাও
ফিটনেস বিশেষজ্ঞ সৌমেন দাস শিশুদের মাসল ডেভেলপমেন্টের জন্য কিছু ব্যায়ামের পরামর্শ দিলেন:
* দেওয়ালে হালকা হেলান দিয়ে পায়ের আঙুলের উপর ভর দিয়ে দাঁড়াতে হবে। হাত দুটো কানের পাশ দিয়ে তুলে উপরে লক করে দিতে হবে। এই অবস্থায় শরীরকে যতটা পারা যায় স্ট্রেচ করতে হবে। এতে সারা শরীরের মাসলের ব্যায়াম হয়ে যায়।
* হাত দুটো শক্ত করে মুঠো করে সামনের দিকে ছড়িয়ে দিয়ে, ভাঁজ করে বুকের কাছে নিয়ে আসতে হবে। ১৬ বার করে তিন-চার সেটে করতে হবে এটি।
* মেঝেতে বসে পা দুটো দু’দিকে ছড়িয়ে দিয়ে, হাত দিয়ে পায়ের আঙুল ধরতে হবে এবং মাথা নিয়ে আসতে হবে মাটির কাছে। এই ব্যায়ামই মেঝেতে বসে পা জোড়া রাখা অবস্থায়ও করতে হবে। ১৬ বার করে তিন-চার সেট।
* অনেক সময়েই বাচ্চারা বলে, লিখতে গিয়ে হাতে ব্যথা করছে। বিভিন্ন রঙের যে স্মাইলি বলগুলো পাওয়া যায়, সেগুলো গ্রিপ করে জোরে চাপ দিতে বলবেন। দিনে যত বার খুশি এটা করা যায়। দেওয়ালে আঙুল দিয়ে হেঁটে যাওয়ার মতো করে ওঠা-নামা করাবেন। এতে আঙুলের মাসলের ব্যায়াম হবে।
যদি কখনও দেখেন শিশুর ফাইন মোটর স্কিলের খামতি কিছুতেই ঠিক হচ্ছে না, তখন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।