প্রতীকী ছবি
করোনা অতিমারির জেরে বাড়িতে থাকার সময় এখন অনেকটাই বেড়েছে। আর সেই সঙ্গেই বেড়েছে বাড়ির ধুলো-ময়লা থেকে অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা। ঘরের কাজ করতে গিয়ে পরপর হাঁচি, চোখ দিয়ে জল পড়া বা চোখ লাল হয়ে যাওয়ার সমস্যায় ভোগেন অনেকেই। কিন্তু গুরুত্ব দেন কম জনই। তবে বাড়ির দৈনন্দিন কাজ করতে গিয়ে কেউ নিয়মিত এমন সমস্যায় পড়লে তাঁর কোনও অ্যালার্জি থাকার আশঙ্কা প্রবল বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। বারবার এমন হওয়া রোধ করা না-গেলে ভবিষ্যতে সামান্য হাঁচি-কাশিই গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে।
এ বছর ২৮ জুন থেকে ৪ জুলাই পর্যন্ত পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব অ্যালার্জি সপ্তাহ’। শুধু করোনা সংক্রমণের সময়ে নয়, অ্যালার্জির প্রতিকার নিয়ে যে সারা বছরই ভাবা দরকার, আলোচনায় উঠে আসছে সেই দিকটিও।
অতিমারির কারণে লকডাউন চালু হওয়ায় বায়ুদূষণ এক ধাক্কায় বেশ খানিকটা কমে গিয়েছিল। রাস্তায় বেরোলে হাঁচি-কাশি বা শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা আগের থেকে কম হচ্ছিল অনেকেরই। তবে বাড়িতে থাকলেই যে অ্যালার্জি থেকে দূরে থাকা যাবে, তা নয় বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। ঝাঁট দেওয়া, আসবাব পরিষ্কার করা, পর্দা বা বিছানার চাদর বদলানোর মতো কাজের মাধ্যমে বাড়ির ভিতরেই দূষণের কবলে পড়তে পারেন যে কেউ। ধুলো, ঝুল, চাদরের রোঁয়া ছাড়াও বিছানা-সোফায় থাকা ‘ডাস্ট মাইট’ নামে এক ধরনের প্রাণী অ্যালার্জির অন্যতম উৎস বলে জানাচ্ছেন নাক-কান-গলার চিকিৎসক দীপঙ্কর দত্ত। ঘরের কাজ করার সময়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি। তাতেই সমস্যা আটকানো যাবে বেশ খানিকটা। তার পরেও অসুবিধা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই ভাল বলে অভিমত তাঁর।
আরও পড়ুন: লকডাউনের অবসাদে হিংস্র হচ্ছে মন!
বাড়িতে থেকেও অ্যালার্জিতে ভোগার পিছনে ঘরের ভিতরেই ধূমপান, অতিরিক্ত ভারী পর্দা বা কার্পেটের ব্যবহার, সাফাইয়ের কাজে রাসায়নিক পদার্থের অতিরিক্ত ব্যবহার এবং পোকামাকড় তাড়ানোর ধূপ বা স্প্রে জাতীয় জিনিসেরও বড় প্রভাব রয়েছে বলে জানাচ্ছেন বক্ষরোগ চিকিৎসক পার্থসারথি ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের এখানে গরম এবং আর্দ্রতা বেশি হওয়ায় ভারী পর্দা ও কার্পেট ঘরের মধ্যে অস্বাভাবিক পরিবেশ তৈরি করে। অনেকটা সময় এসি চললে তো কথাই নেই। ঘরে আলো-বাতাস চলাচল করতে দিতে হবে। যতটা সম্ভব স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখা দরকার।’’ খোলা জায়গায় ফেলে রাখা খাবার, ঠিক মতো শুকনো না-হওয়া বা দীর্ঘদিন ব্যবহার না-করা পোশাক থেকেও হতে পারে বিভিন্ন প্রকার অ্যালার্জি। তাঁর পরামর্শ, যাঁদের আগে অ্যালার্জি হয়েছে এবং কী থেকে সমস্যা হয় তা জানা আছে, তাঁদের সেগুলি যথাসম্ভব এড়িয়ে চলাই উচিত।
করোনা পরিস্থিতিতে অ্যালার্জির লক্ষণ দেখা দিলে বিভ্রান্ত হতে পারেন সাধারণ মানুষ। কারণ, গলা ব্যথা, গলা খুসখুস, কাশি এবং শ্বাসকষ্ট দুই রোগেই হতে পারে। কিন্তু অ্যালার্জির ক্ষেত্রে কখনওই জ্বর থাকে না বলে চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন। কোভিড-১৯ মূলত শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ হওয়ায় অ্যালার্জি বা হাঁপানির রোগীদের উপরে মানসিক চাপ আরও বেড়েছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। এই অবস্থায় তাঁদের পরামর্শ, কেউ যদি ওষুধ খান, তা বন্ধ করা চলবে না কোনও ভাবেই। প্রয়োজনে নিয়মিত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে।
দীপঙ্করবাবুর কথায়, ‘‘অ্যালার্জিতে যাঁরা ভোগেন, তাঁদের দরকার খোলামেলা পরিবেশ। মাস্ক পরে অনেকেরই শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাচ্ছে। আবার মাস্কের কাপড় থেকেও সমস্যা হচ্ছে। অথচ, এখন মাস্ক পরাটাও অত্যন্ত জরুরি। সে ক্ষেত্রে তাঁদের চিকিৎসায় যাতে ছেদ না পড়ে, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।’’