Migraine problem

মাইগ্রেনের একঘেয়ে ব্যথায় শিকেয় ওঠে কাজ? কী বলছেন চিকিত্সকরা

ঘুম ভাঙলেই কপালের একদিকে দপদপে যন্ত্রণা। কখনও তা ছড়িয়ে যায় কপালের মাঝ বরাবর। কখনও আবার মাথার পিছন দিক পর্যন্ত। একঘেয়ে ব্যথায় শিকেয় ওঠে স্বাভাবিক কাজকর্ম। অসহ্য হলে ওষুধ খেয়ে হয়তো সাময়িক স্বস্তি মেলে, কিন্তু অচিরেই আবার ফিরে আসে ব্যথা। খুবই পরিচিত এই রোগটির নাম মাইগ্রেন। বয়ঃসন্ধি থেকে মাঝবয়স পর্যন্ত যে কোনও সময় এই রোগের শিকার হতে পারেন কেউ। তবে মহিলাদের মধ্যে এই রোগের প্রকোপ বেশি। কীভাবে এই রোগের মোকাবিলা করা সম্ভব তা জানতে আমরা কথা বলেছিলাম উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের মানসিক রোগের চিকিৎসা বিভাগের প্রধান নির্মল বেরার সঙ্গে।কখনও আবার মাথার পিছন দিক পর্যন্ত। একঘেয়ে ব্যথায় শিকেয় ওঠে স্বাভাবিক কাজকর্ম। অসহ্য হলে ওষুধ খেয়ে হয়তো সাময়িক স্বস্তি মেলে, কিন্তু অচিরেই আবার ফিরে আসে ব্যথা।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৮ ০১:২২
Share:

চিন্তায়: কাজ করা যায় না, সময় বয়ে যায়। মাইগ্রেনের ব্যথায় আক্রান্ত মানুষ উপশমের অপেক্ষায়।

প্রশ্ন: মাইগ্রেন অসুখটা ঠিক কী?

Advertisement

উ: মাইগ্রেন হয়েছে বলে এখন অনেকের মুখেই শোনা যায়। তবে সেটা কী তা নিয়ে অনেকের মধ্যেই প্রশ্ন থাকতে পারে। আসলে, মাইগ্রেন এক ধরনের মাথা ব্যথা। কপালের একদিকে ব্যথা হয়। মাথার ডান দিকে বা বাঁ দিকের অর্ধেক অংশে ব্যথা হতে পারে। অর্থাৎ ‘আধ কপালি’ ব্যথা। প্রচন্ড ব্যথা হয়। দু’ তিনদিন ব্যথা থাকে। অনেক সময় ব্যথা এত বেশি ব্যথা থাকে যে রোগী কাহিল হয়ে পড়েন। এই অসুখটা এখন অনেকেরই মধ্যেই দেখা যাচ্ছে।

প্রশ্ন: এই রোগের কারণ কী?

Advertisement

উ: এই রোগটি মূলত ‘জেনেটিক’। অর্থাৎ পরিবারের কারও মাইগ্রেনের সমস্যা থাকলেই পরবর্তী প্রজন্মের কারও মধ্যে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে। আরও বিভিন্ন কারণে মাইগ্রেন হতে পারে। আবহাওয়া বদলের জন্যেও এই রোগ হতে পারে। ক্রমাগত দুশ্চিন্তা, টেনশন থেকে মাইগ্রেনের শিকার হন অনেকে। মস্তিষ্কে বিভিন্ন রাসায়নিকের পরিমাণ ওঠানামাও এই রোগের জন্য দায়ী। বিভিন্ন উদ্দীপনা এক স্নায়ু থেকে অন্য স্নায়ুতে পৌঁছতে এই রাসায়নিকগুলোর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলোর ভারসাম্য নষ্ট হলে মাইগ্রেন হতে পারে। নানাধরণের ওষুধ থেকেও এই রোগ হতে পারে।

প্রশ্ন: কী ধরনের বা কোন রোগের ওষুধ খাওয়া থেকে মাইগ্রেন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে?

উ: মানুষের যৌন সমস্যার জন্য যে সমস্ত ওষুধ খেতে হয় তা থেকে অনেক সময় মাইগ্রেন হতে পারে। গর্ভনিরোধক ওষুধ দীর্ঘদিন খেলেও অনেক সময় তা থেকে মাইগ্রেন হতে শুরু করে। আসলে ওই সমস্ত ওষুধগুলোর প্রভাবে শরীরে রাসায়নিকের ভারসাম্য কিছুটা নষ্ট হয়। সে কারণে মস্তিষ্কে তার প্রভাব পড়ে। তাই এই ওষুধগুলি খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার।

প্রশ্ন: ঘুমের সমস্যা থেকেও কী মাইগ্রেন হতে পারে?

উ: হ্যাঁ, পর্যাপ্ত ঘুম না-হলে তা থেকেও মাইগ্রেনের ব্যথা হয়ে থাকে অনেকের। শরীর ঠিক রাখতে যথাযথ বিশ্রাম দরকার। ঘুমের সময় আমাদের সম্পূর্ণ বিশ্রাম হয়। দিনের পর দিন ঘুমের ব্যাঘাত হলে তা সমস্যার তৈরি করে। মাইগ্রেনের মতো রোগ সৃষ্টি হয়।

প্রশ্ন: মাইগ্রেন হয়েছে তা একজন কী ভাবে বুঝতে পারবেন, বা এই রোগের উপসর্গ কেমন?

উ: মাইগ্রেন হয়েছে কি না তা বিভিন্ন উপসর্গ দেখে বোঝা যেতে পারে। মাইগ্রেন হলে মাথার একদিক প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হবে। ব্যথা ৭২ ঘণ্টাও থাকতে পারে। মাথার একাংশ দপদপ করে ব্যথা করে। কারও বমি ভাব হয়। বমিও হতে পারে। এই অবস্থা দুই দিন, তিন দিন চলতে থাকে। গ্যাস-অম্বল থেকেও এই সমস্যা হতে পারে। দীর্ঘদিন এই সমস্যা চলতে থাকলে অনেক সময় মাইগ্রেনের ব্যথা হয়। মাইগ্রেনের ব্যথা হলে অনেক সময় আলোর দিকে তাকাতে পারেন না রোগীরা। দিনের বেলাতে তাই তাদের কষ্ট হয়। চোখে আলোর ঝলকানি দেখা যায়। এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক কাজকর্ম করার মানসিকতা নষ্ট হয়ে যায়। ব্যথা শুরু হয় ভোরের দিকে। সারাদিন ধরে চলতে থাকে। তিনদিন, চারদিন ধরে এ রকম ব্যথার ফলে মানসিক শান্তিও নষ্ট হয়।

প্রশ্ন: রোগীরা কী কী ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করবেন?

উ: নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুমের দরকার। রোগীদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার, টিভি দেখা, দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটারে কাজ করলে ওই সমস্যা বাড়তে পারে। সে কারণে এ সব ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। বাতানুকূল ঘরে থাকা, আবার মাঝে মধ্যে বাইরে গরমের মধ্যে বার হওয়া, এ ধরনের অভ্যাস বা পরিস্থিতির জেরেও মাইগ্রেনের শিকার হন অনেকে। বাতানুকূল যন্ত্র যাদের বাড়িতে রয়েছে তাদের অনেককেই সেই কারণে মাইগ্রেনের শিকার হতে দেখা যায়। অতিরিক্ত ঘুরে বেড়ানো বা দীর্ঘপথ পাড়ি দেওয়ার ধকলের জন্য মাইগ্রেন হতে পারে। অর্থাৎ শরীরের উপর অতিরিক্ত ধকল থেকে মাইগ্রেনের প্রবণতা দেখা দেয়। আবার অনেক সময় কোনও কারণ ছাড়াই এই রোগ দেখা দেয়। তা ছাড়া মাইগ্রেন যাদের হয়, সূর্যের আলোতে তাদের দেখতে সমস্যা হয় বলে বাইরে বার হলে সানগ্লাস ব্যবহার করা দরকার।

প্রশ্ন: মাইগ্রেনের রোগীর সংখ্যা কেমন?

উ: শতকরা ১০ জন বাসিন্দার মধ্যে মাইগ্রেন রোগ দেখা যায়। সব ক্ষেত্রে যে ব্যথা বাড়তে থাকে তা নাও হতে পারে। আবার কারও ক্ষেত্রে ৬ মাস থেকে চার-পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত মাঝে মধ্যে মাইগ্রেনের ব্যথা হতে থাকে। সে কারণে তাদের ক্ষেত্রে এই রোগের সমস্যা বেশি।

নির্মল বেরা
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement