মার্গোৎসবের অংশগ্রহণকারীরা। ছবি: মার্গ।
একদল ছেলেমেয়ে গৎভাঙা। তাদের মানসিক চাহিদা একটু আলাদা ধরনের। জীবনের সাধারণ কাজকর্ম করার জন্যও তাঁদের বিশেষ সাহায্যের দরকার হয়। আর একদল তথাকথিত ‘স্বাভাবিক’। কিন্তু খেলার মাঠে যখন দু’তরফের দেখা হল তখন মিশে যেতে কোনও অসুবিধা হল না। একসঙ্গে হাত মিলিয়ে চুটিয়ে মজা করল সবাই। গত ১৫ ডিসেম্বর নিউ আলিপুরের টার্ফ এক্সেলে শীতকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ‘মার্গোৎসব’-এর আয়োজন করেছিল ‘মার্গ: এ মাইন্ড ওয়েলনেস স্টুডিয়ো’। সেখানেই দেখা গেল জীবনের বাঁধা গতে না পড়াদের মূলস্রোতের সঙ্গে সহজে মিশে যেতে।
মার্গের ক্রীড়া উৎসব উদ্বোধন। ছবি: মার্গ।
মানসিক সুস্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতেই বছর তিনেক আগে শুরু হয়েছিল মার্গ-র পথ চলা। প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মানসী সঙ্ঘভি ভয়ানি এবং রোহন ভয়ানি। তার পর থেকে অন্তত ৫০০০ মানুষের মনের ঠিকানা জেনেছে মার্গ। পাশাপাশি, বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, কর্পোরেট সংস্থা এমনকি, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাতেও মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার সহযোগী হয়েছে তারা। মানসি নিজে একজন মনোবিদ এবং বিশেষ শিক্ষা প্রদানকারী। তিনি বলছেন, ‘‘মানসিক সুস্থতা রক্ষা করাটা আমাদের জীবনে একটা প্রয়োজন। যেকোনও বয়সের মানুষের জীবনে কোনও না কোনও সময়ে মানসিক সুস্থতা ফিরে পাওয়ার প্রয়োজন হবে। সেই ভাবনা থেকেই মার্গ তৈরি করেছিলাম আমরা। মার্গোৎসব ওই সংস্থারই ক্রীড়া উৎসব। যেখানে আমরা বোঝাতে চেয়েছি, শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য পরষ্পরের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, যাঁরা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন, তাঁরা ওই ধরনের মূলস্রোতের খেলাধুলো বা প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পান না। তাঁদের কথা ভেবেই মার্গোৎসব আয়োজন করি আমরা।’’
প্রতি বছরের মতো এ বছরও মার্গ-এর বার্ষিক ক্রীড়া উৎসবে অংশ নিয়েছিলেন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীদের পাশাপাশি, তাদের অভিভাবক এবং মূল স্রোতের ছেলেমেয়েরাও। দৌড় প্রতিযোগিতা, অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্ট, ২০ ফুট উঁচু কাঠামো বেয়ে ওঠার মতো প্রতিযোগিতা ছাড়াও ছিল কার্নিভাল গেমস, খাবারের স্টল, এমনকি কাউন্সেলিংয়ের স্টলও।
ক্রীড়া উৎসবে উপস্থিত অতিথিরা। ছবি: মার্গ
মার্গ-র ক্রীড়া উৎসবে অতিথি হিসাবে উপস্থিত হয়েছিলেন, ভবানীপুর এডুকেশন সোসাইটি কলেজের ভাইস চেয়ারম্যান মিরাজ শাহ, শিক্ষাবিদ এবং ব্যবসায়ী ইমরান জ়াকি, মডেল অভিনেত্রী রিচা শর্মা, জাতীয় স্তরের ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় সাবা আলি ফিরোজ়, প্যারাঅ্যাথলিট উদয় কুমারের মতো বিশিষ্টরা। এ ছাড়া ছিলেন মনোরোগ চিকিৎসক এবং মনোবিদেরা। চিকিৎসক সঞ্জয় গর্গ, প্রথমা চৌধুরী, শুভ্রা চান্দের, ওম প্রকাশ সিংহ, প্রবীর পাল, সায়নদীপ ঘোষ, গৌতম সাহা, আবীর মুখোপাধ্যায়, এরা দত্ত, মেঘা রাঠী, ছবি তিওয়ারি, মধুরিমা দে সরকার। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন প্ল্যান বি ইভেন্টের প্রতিষ্ঠাতা, শহরের গুজরাতি সম্প্রদায়ের সদস্য ভাবনা হেমানি।