এপিলেপসি বাধা দেয় মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতায়। ছবি: আইস্টক।
দিঠির স্কুল থেকে ফোন। হঠাৎই ক্লাসরুমে খিঁচুনি শুরু হয়, তার পর অজ্ঞান হয়ে পড়েছে সে। সুস্থ মেয়েকে স্কুলে পৌঁছে একটু ঘরের কাজ সারছিলেন সুতনুকা। সাড়ে তিন বছর বয়সের মেয়েটা কখনও অজ্ঞান হয়নি আগে। পড়িমরি স্কুলে পৌঁছে দিঠিকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে সামনে এল অসুখ! এপিলেপসি। স্নায়বিক যে রোগে মাথার মধ্যেকার কাজকর্মে বাধা তৈরি হয়। দিঠির মতো আপাত সুস্থ শিশুও যেমন হঠাৎই এর শিকার হতে পারে, তেমনই জন্ম থেকেই এই অসুখের লক্ষণ বা আক্রমণ স্পষ্ট থাকতে পারে কারও কারও ক্ষেত্রে।
কিন্তু শিশুর ক্ষেত্রে এপিলেপসি বা মৃগীর ক্ষেত্রে কী কী লক্ষণ দেখলে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করতে হবে, এর সঙ্গে লড়ার ধাপগুলোই বা কী কী— তা না জানা থাকলে এমন অতর্কিত অসুখে দিশাহারা হন অনেক পরিবারই। জন্ম থেকে তেমন কোনও লক্ষণ না থাকলে কেউ কেউ আবার এই অসুখের হঠাৎ হানাও বুঝে উঠতে পারেন না। ফলে চিকিৎসা শুরু করতে দেরি হয়। ‘‘আর এতেই ভয়ের শুরু। বিশেষ করে পরিবারে কারও এই অসুখ থাকলে, এই অসুখের শঙ্কা বাড়ে, তাই বেশি সচেতন থাকতে হয়। জ্বরের সঙ্গে খিঁচুনি হলে সব সময়ই যে তা মৃগী, তা নয়। তবে এদের একটা অংশ মৃগী রোগের শিকার হয়। তাই তেমনটা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে’’— এপিলেপসি নিয়ে এক আলোচনাসভায় জানালেন স্নায়ুবিশেষজ্ঞ প্রসেনজিৎ সেনগুপ্ত।
তাঁর মতে, ‘‘জিনগত এপিলেপসি ছাড়াও বিশেষ কিছু ঘটনায় শিশুদের এপিলেপসিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়— যেমন, জন্মের সময় শিশু যদি কোনও সমস্যার মুখোমুখি হয়, তা হলে তাদের মস্তিষ্কে সমস্যা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে এপিলেপসি হানা দিতে পারে। অনেক সময় দেখা যায়, শিশুর বাড়বৃদ্ধি, বুদ্ধির বিকাশ, কথা বলতে শেখা, বসতে শেখা, দাঁড়ানো প্রায় সবই দেরিতে হচ্ছে, তখনও কোনও কোনও ক্ষেত্রে এমন এপিলেপসির শঙ্কা থাকে। শিশুদের মস্তিষ্কের গঠন পূর্ণতা না পেলে বা কোনও জখম থাকলে এই অসুখ হানা দেয়। কোনও কোনও ক্ষেত্রে শিশু মস্তিষ্কে আঘাত পেলে বা মস্তিষ্কে কোনও জটিল অস্ত্রোপচার হলে এই অসুখের শিকার হতে পারে।’’
আরও পড়ুন: কম সময়ে দ্রুত ওজন কমে এই ডায়েটে, কারা পারবেন খেতে, কাদের বারণ?
জ্বরের সঙ্গে খিঁচুনি হলে সব সময়ই যে তা মৃগী, তা নয়। তবে এদের একটা অংশ মৃগী রোগের শিকার হয়।
লক্ষণ
এপিলেপসি বা মৃগীর ক্ষেত্রে জ্বরের সঙ্গে খিঁচুনি একটা বড় লক্ষণ ঠিকই। তবে জ্বরের সঙ্গে খিঁচুনি হলেই মৃগী— তা কিন্তু নয়। খিঁচুনি যদি ১০-১৫ মিনিটের বেশি স্থায়ী হয়, ঘন ঘন হয় ও শরীরের কোনও একটি পাশে খিঁচুনি হতে থাকে, তা হলে এই অসুখ নিয়ে সচেতন হওয়ার কারণ আছে বইকি!
এমন হলে শিশুর মস্তিষ্কের এমআরআই ও ইইজি করিয়ে রাখতে হবে। এপিলেপসির কোনও ইঙ্গিত থাকলে এতেই ধরা পড়বে।
অসুখের সঙ্গে লড়াই
এই অসুখের প্রথম ও প্রাথমিক লড়াইয়ের একটাই শর্ত— ঠিক সময় মতো সব ওষুধ খাওয়ানো। অনেক সময় দেখা যায়, অসুখ নিয়ন্ত্রণে চলে এলে অনেকেই আর ওষুধ খাওয়ান না বা ওষুধের বেলায় অনিয়মিত হয়ে পড়েন। এমন করলে চলবে না। শিশু সুস্থ থাকলেও নিয়ম করে কয়েক মাস অন্তর চিকিৎসকের কাছে যান, রুটিন পরীক্ষাগুলো করিয়ে রাখুন। জ্বর কোনও ভাবেই বাড়তে দেওয়া যাবে না। তাই জ্বরের ওষুধ বাড়িতে মজুত রাখুন। শিশুর স্বাভাবিক ঘুমে যেন কোনও প্রকার ঘাটতি না হয়।
আরও পড়ুন: ডিম খেলেই সন্তানের অ্যালার্জি? পুষ্টির ঘাটতি মেটাতে এ সব খাওয়ান রোজ
খিঁচুনির সতর্কতা
খিঁচুনি হওয়ার সময় শিশুকে নির্দিষ্ট একটা পাশ ফিরিয়ে শুইয়ে দিন। মুখের তরল যেন কোনও ভাবেই শ্বাসনালীতে না পৌঁছে যায় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তার চারপাশে কোনও রকম ধারালো জিনিস, বা আঘাত পেতে পারে এমন জিনিস এই সময় ছড়িয়েছিটিয়ে রাখবেন না। শিশুকে জোর করে চেপে ধরে থাকবেন না। ধরলে আলগা করে ধরুন। মিনিট দশেকের বেশি খিঁচুনি স্থায়ী হলে চিকিৎসকের কাছে যান।