‘ঘুম কেন নেই তোরি চোখে? কে রে এমন জাগায় তোকে...’ করোনার জেরে সত্যিই সকলের ঘুম উধাও। এক দিকে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে নানা দুশ্চিন্তা মনের মধ্যে। সঙ্গে ভবিষ্যৎ কী হতে চলেছে, সেই আতঙ্ক যেন সকলকে ধীরে ধীরে গ্রাস করছে। যার জেরে রাতের ঘুম উধাও। আর সেই কারণে মেজাজ যাচ্ছে বিগড়ে। শরীরও খারাপ হচ্ছে। কী করে মুক্তি পাবেন এই পরিস্থিতি থেকে? তবে তার আগে জানতে হবে, ঘুম না হওয়ার কারণ কী?
ঘুম না হওয়ার কারণ
• যত দিন গড়াচ্ছে, করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ততই বাড়ছে। মারা যাচ্ছেন বহু আক্রান্তও। স্বভাবতই একটা ভয় যেন সকলকে সারাক্ষণ পিছু ধাওয়া করছে। রাতে শুতে গেলেও মুক্তি মিলছে না সেই ভয় থেকে। নিটফল, দু’চোখ থেকে ঘুম উধাও।
• খুব প্রয়োজন ছাড়া এখন বাড়ি থেকে বার হওয়ার উপায় নেই। বাড়ির ছোট্ট পরিসরে দিন কাটাতে হচ্ছে। বিশেষত যাঁরা নিয়মিত বেরোতেন, তাঁদের তো মনের উপর একটা চাপ পড়ছেই। যদিও হাউস হেল্পের অভাবে বাড়ির কাজ অনেকটা বেড়েছে। তবে বাইরে বেরোলে যাতায়াতের পাশাপাশি অফিসের কাজের ধকল থাকে। আবার দূষণের সঙ্গেও একটি অদৃশ্য যুদ্ধ আমাদের করতে হয়। এতে একটু বেশি ক্লান্ত হয়ে পড়াটাই স্বাভাবিক। সেটা বন্ধ হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই ঘুম কমছে।
• ওয়র্ক ফ্রম হোম করতে হচ্ছে বলে অনেকেই সুযোগ পেলে দুপুরে ভাতঘুম দিচ্ছেন। তার জেরেও রাতের ঘুম নষ্ট হচ্ছে।
• অনেকেরই আবার বাড়ি এবং অফিসের কাজ সামলাতে গিয়ে হিমশিম পরিস্থিতি। বাড়ির কাজ করতে গিয়ে অফিসের কাজ বাকি থাকছে। স্বাভাবিক ভাবে রাত জেগে অফিসের কাজ করতে গিয়ে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটছে।
• টানা বাড়িবন্দি থাকার ফলে মানসিক চাপ বাড়ছে, যা ঘুম না আসার বড় কারণ।
• লকডাউনের জেরে গোটা বিশ্বের অর্থনীতিতেই বড়সড় ধাক্কা লেগেছে। চাকরি হারাচ্ছেন অনেকেই। স্বভাবতই নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে কমবেশি দুশ্চিন্তায় চাকুরিজীবীরা। ব্যবসায়ীদের অবস্থাও তথৈবচ। এত বড় ক্ষতি কী ভাবে সামাল দেবেন তাঁরা? সেই নিয়ে ভাবতে গিয়ে রাতের ঘুম গিয়েছে উড়ে।
• যাঁদের আবার ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেওয়া রয়েছে, তাঁরা তো আরও বেশি মানসিক চাপে।
মুক্তির উপায়
দিনের পর দিন ঠিক করে ঘুম না হলে শরীর খারাপ হবেই। মেজাজও ঠিক থাকবে না। পাশাপাশি ডিপ্রেশন আরও বাড়তে পারে। এ সব ক্ষেত্রে সাধারণত যে কোনও কাজেই মনঃসংযোগ করা কঠিন হয়ে যায়। তবে এই পরিস্থিতি থেকে নিজেকেই বার হয়ে আসতে হবে। তার জন্য কতকগুলি বিষয় মেনে চলতে হবে।
• রুটিন করে চলা: বাড়িতে বসে অফিসের কাজ করতে হচ্ছে। তার ফলে আপনার স্বাভাবিক রুটিন একেবারেই এলোমেলো হয়ে গিয়েছে। কাজেই এখনকার মতো একটি নতুন রুটিন তৈরি করে ফেলতে পারলে ভাল। রাত জেগে কাজ করার অভ্যেস যদি থাকে, তা হলে বদলাতে চেষ্টা করুন। কিন্তু যদি তা রাতে করতেই হয়, তা হলে পরে সে ঘুম পুষিয়ে নিতে হবে।
• দিবানিদ্রা এড়িয়ে চলুন: বাড়িতে থাকলে অনেক সময়েই দুপুরে খেয়ে ওঠার পর চোখ লেগে আসতেই পারে। কিন্তু সচেতন ভাবে এই দিবানিদ্রা এড়িয়ে চলুন। এতে রাতের ঘুম নষ্ট হয়ে যাবে। অবশ্য আগের রাতে ভাল না ঘুম হলে, ঘণ্টাখানেক ঘুমিয়ে নিতে পারেন। কিন্তু এর বেশি নয়।
• দুশ্চিন্তা বাদ দেওয়া জরুরি: বাড়তি স্ট্রেসের কারণে যদি অনিদ্রায় ভুগতে শুরু করেন, তা হলে আপনার প্রথম কাজই হবে মানসিক চাপ কমানো। কিন্তু এমনি এমনি তো আর সেটা কমবে না। নিজেই নিজের কাউন্সেলিং করুন। নিজেকেই বুঝতে হবে, যে বিষয়গুলির উপর আপনার কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই, তা নিয়ে অযথা দুশ্চিন্তা করেও লাভ নেই। তবে খুব সমস্যা হলে মনোবিদের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে।
• শোয়ার ঘরে বসে কাজ নয়: কাজের সময় শোয়ার ঘর এড়িয়ে চলুন। বিছানার বদলে চেয়ার-টেবিলে বসে কাজ করা ভাল। অফিসে যে ভাবে কাজ করে থাকেন, সেটাই মেনে চলুন।
• শারীরচর্চা প্রয়োজন: বাড়িতে থাকলেও নিজেকে ফিট রাখতে শারীরচর্চা জরুরি। এতে বাড়তি এনার্জি যেমন পাওয়া যাবে, তেমনই রাতে ঘুমও ভাল আসবে।
• কফি খাওয়ার পরিমাণ কমাতে হবে: অতিরিক্ত ক্যাফেইন এমনিতেই ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। তাই বিকেলের পর আর কফি না খাওয়াই ভাল। গোটা দিনে দু’কাপের বেশি কফি খাওয়া ঠিক নয়।
• ঘুমের পরিবেশ তৈরি করতে হবে: এর জন্য তাড়াতাড়ি রাতের খাবার খেয়ে নিতে হবে। ঘুমোতে যাওয়ার অন্তত ঘণ্টাখানেক আগে টিভি বন্ধ করে দিন। পারলে মোবাইল, ল্যাপটপও এড়িয়ে চলুন। ঘুম না এলেও নিয়ম করে নির্দিষ্ট সময়েই শুতে যেতে হবে।
সব কাজের মাঝেও নিজের জন্য অল্প কিছুটা সময় বার করতে হবে। নিজের যে কাজটা করতে ভাল লাগে, সেটা করুন। সঙ্গে বাকি নিয়মগুলিও মেনে চলুন। ঘুম আপনাকে ছেড়ে আর পালাবে না।
মডেল: হিন্দোলা চক্রবর্তী
ছবি: অমিত দাস
মেকআপ: মৈনাক দাস
লোকেশন: আইবিস, রাজারহাট