সারা দিন ধরে বাড়ি-অফিস সামলাচ্ছেন একা হাতে। সকালের রান্না কিংবা বাচ্চাকে স্কুলে দিয়ে আসা-নিয়ে আসার দায়িত্বও আপনার উপরে। অবসরে ভাবছেন, এত খেটেও মধ্যপ্রদেশটা ক্রমবর্ধিত হচ্ছে কী করে? পরিশ্রম তো কম হচ্ছে না! নিজের শরীরকে চিনতে গিয়ে এই গোড়ার গলদটা করে ফেলেন বেশির ভাগ মহিলাই। হোমমেকার, ওয়র্কিং উয়োম্যান কিংবা কলেজপড়ুয়া— আপনার কাজের জায়গাটা যা-ই হোক না কেন, ওজন কমানোর উপায় হিসেবে একটাও আপনার সহযোগিতা করে না আসলে। সারা দিন প্রচুর কাজকর্মে ব্যস্ত রয়েছেন মানেই আপনি প্রচুর খাটছেন, অতএব ওজন আপনা থেকেই কমা উচিত— এই ভ্রান্ত ধারণা থেকে প্রথমেই বেরিয়ে আসুন। নাগরিক জীবন আর কায়িক শ্রমের বৈরিতা চিরকালীন। বরং জেনে নিন, কী করে দশ দিক সামলেও বাড়িতেই মেদ ঝরানোর বন্দোবস্ত করতে পারেন।
ক্যালরির কারসাজি
ওজন কমানোর আগে জানতে হবে, উচ্চতা অনুযায়ী আপনার ওজন কত হওয়া উচিত। অবশ্যই ইন্ডিয়ান বডি টাইপ অনুযায়ী। ব্যস্ত মানুষরা এমনিই নিজেদের প্রতি খেয়াল রাখেন কম। জিম কিংবা ডায়াটিশিয়ানের কাছে যাওয়াটাও অনেকে মনে করেন বিলাসিতা! তাঁরা ভরসা রাখতে পারেন ‘আমেরিকান কাউন্সিল অন এক্সারসাইজ়’-এর উপরে। এর গাইডলাইন অনুযায়ী, ওজন কমানোর আদর্শ লক্ষ্য হওয়া উচিত প্রতি মাসে ২-৩ কিলোগ্রাম। বেশি তাড়াহুড়োর প্রয়োজন নেই।
উচ্চতা অনুযায়ী কত ওজন হওয়া উচিত, তা-ও হিসেব করতে পারেন সহজে। ইঞ্চি প্রতি এক কিলোগ্রাম— এই সোজা পদ্ধতিতে হিসেব করে নিন। যদি আপনার উচ্চতা হয় ৫ ফুট অর্থাৎ ৬০ ইঞ্চি, তবে ভারতীয় পুরুষদের ক্ষেত্রে ওজন হওয়া উচিত ৬০ কেজির আশপাশে। মহিলাদের ক্ষেত্রে এই হিসেবে চার-পাঁচ কেজি কমিয়ে নিতে হবে। অর্থাৎ ৫ ফুট লম্বা মহিলার ওজন থাকতে হবে ৫০-৫৫ কেজির মধ্যে। টার্গেট একবার ঠিক করে নিলে আপনা থেকেই ক্যালরি ইনটেক ও বার্ন করার হিসেবটা পরিষ্কার হয়ে যাবে।
জমা বনাম খরচ
সারা দিনে আপনার কতটা ক্যালরি দরকার, তার একটা হিসেব করে নিলে কতটা বার্ন করা প্রয়োজন, সেটা বুঝতে পারবেন। সাধারণত বলা হয়, একজন পূর্ণবয়স্ক মহিলার দিনে ২০০০ কিলোক্যালরি হলেই চলে। এ বার যতটা ইনটেক করা হচ্ছে, ততটাই এক্সারসাইজ় করে বার্ন করে ফেললে কিন্তু কমার সুযোগ তৈরি হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে ঘাটতি তৈরি করা প্রয়োজন। এই ডেফিসিট ক্যালরি তৈরির সহজ প্রক্রিয়া হল, প্রত্যেক দিন ডায়েট থেকে ২৫০ ক্যালরি কমানো, এবং একইসঙ্গে এক্সারসাইজ় করে ২৫০ ক্যালরি কমানো। এতে শরীরে প্রয়োজনীয় ক্যালরির ঘাটতি তৈরি হবে, যার ফলে ওজন কমবে। তবে এ ক্ষেত্রে ছোট ছোট টার্গেট করে এগোনোই ভাল। কারণ এই প্রক্রিয়ায় বারবার খিদে পেতে পারে এবং কিছুটা দুর্বলও লাগতে পারে। যেহেতু সাধারণত ক্যালরি মাপার ঝক্কিতে যেতে চান না অনেকে, তাই ডায়েটে পরিবর্তন এনে হিসেব রাখতে পারেন এই ভাবে— আগের চেয়ে দু’হাতা ভাত কমালেন কিংবা চার টুকরোর বদলে দু’টুকরো মাংস খেলেন, এই আর কী।
রুটিনে জরুরি শারীরচর্চা
সারা দিন যতই কাজ করুন, নিয়ম করে অন্তত আধ ঘণ্টা আলাদা করে রাখুন শারীরচর্চার জন্য। কার্ডিয়ো আর স্ট্রেংথ এক্সারসাইজ়ে ভাগ করে নিন আপনার ঘরোয়া জিম রুটিন— ১৫ মিনিট করে। আবাসন কিংবা বাড়ির কাছে সুইমিং পুল থাকলে সাঁতারে ভর্তি হয়ে যান। কাছাকাছি মাঠ থাকলে জোরে হেঁটে আসুন আধ ঘণ্টা। সাইকেলও চালাতে পারেন। হাঁটার জায়গা না থাকলে ঘর কিংবা বারান্দাতেও স্পট রানিং করতে পারেন। প্রথম প্রথম ৩০-৪০ সেকেন্ড করে বিশ্রাম নিন। ধীরে ধীরে সময়টা বাড়ান। স্পট হাই নি কিংবা জাম্পিং জ্যাকের মতো ব্যায়ামও খুব ভাল কার্ডিয়ো এক্সারসাইজ়।
কোমর-পায়ের জয়েন্ট এবং পেশির জোর বাড়াতে স্কোয়াট, লাঞ্জ কিংবা বাড়ির সিঁড়িতে স্টেপ আপ করতে পারেন। আর একটি ভাল স্ট্রেংথ এক্সারসাইজ় হল দু’হাতে দু’টি দু’লিটারের জলের বোতল নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করা। দু’লিটারের জলের বোতল অর্থাৎ দু’কেজি ওজনের ডাম্বল তোলার সমান। এ ছাড়া পুশ আপ করতে পারেন আপার বডি শেপে আনার জন্য। বেলি ফ্যাট কমাতে করুন এয়ার সাইক্লিং। স্কিপিং, এয়ার বক্সিংও করুন ঘাম ঝরিয়ে।
যোগাসনে মন
যদি তাড়াতাড়ি ওজন কমানোই হয় লক্ষ্য, তা হলে যোগব্যায়ামের চেয়ে এক্সারসাইজ় বেশি কার্যকর। তবে যোগব্যায়ামের প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী এবং সুদূরপ্রসারী। মনে প্রশান্তি, চিন্তাভাবনায় স্বচ্ছতা, একাগ্রতা, শরীরে নমনীয়তা ইত্যাদির জন্য যোগাসনের বিকল্প নেই। যোগাসন এবং এক্সারসাইজ় দু’টিই সময় ভাগ করে নিয়ে করতে পারেন। যোগব্যায়াম বা প্রাণায়াম শুরু করলে কোনও পেশাদারের পরামর্শ নেওয়াই ভাল।
হাজার ব্যস্ততার মাঝেও একটু সময় বার করুন হাঁটা বা ব্যায়ামের জন্য, নিজেকে সুস্থ রাখার জন্য।
তথ্য সহায়তা: ফিটনেস এক্সপার্ট চিন্ময় রায়
মডেল: নয়নিকা সরকার; ছবি: দেবর্ষি সরকার; মেকআপ: অভিজিৎ পাল; পোশাক: ওয়েস্টসাইড