নানা পদে জমিয়ে জামাইকে খাওয়ানোর আহ্লাদ যেমন ছিল তেমনই আছে। শুধু বদলে বদলে যাচ্ছে আয়োজনের রকমটা। এক সময়ে সারাদিন ধরে ঘেমে-নেয়ে রান্না করে জামাই আদরের রেওয়াজে বদল এনেছিল বিভিন্ন বাঙালি রেস্তোরাঁয় ‘শাশুড়ি-জামাই’ প্যাকেজ। অফিস ফেরত শাশুড়ি-জামাই সপরিবার চলে যেতেন কোনও বাঙালি রেস্তোরাঁয়। যষ্ঠী স্পেশ্যাল পাখার বাতাস থেকে ইলিশ ভাপে, ভেটকির পাতুরি— সবের আয়োজনই হতো রেস্তোরাঁর সৌজন্যে। কিন্তু এখন রেস্তোরাঁয় বসে বাঙালি পঞ্চব্যঞ্জন আর নতুন কিছু নয়। তাই খানিক কমেই গিয়েছে এ দিনটার জন্য বিশেষ প্যাকেজের রমরমা। শাশুড়িরা এখন দিব্য জানেন কোন রেস্তোরাঁয় কোন বাঙালি রান্নাটা সবচেয়ে ভাল। আধুনিকা শাশুড়িরা তেমন সব দিক খেয়াল করে নিজেরাই বেছে নিচ্ছেন কোন রেস্তোরাঁয় যাবেন মেয়ে-জামাইকে নিয়ে। কোথাও কোথাও যদিও জামাইদের জন্য স্পেশ্যাল ‘থালি’র ব্যবস্থা এখনও থাকছে।
তাজ বেঙ্গলের ভারতীয় খাবারের রেস্তোরাঁ সোনার গাঁও যেমন জামাইষষ্ঠীর জন্য বিশেষ কোনও আয়োজনই রাখছে না। তবে বছরভর যা যা বিশেষ বাঙালি রান্না থাকে, তার সবই পাওয়া যাবে এই উৎসবের দিনেও। শহরের আর এক পাঁচতারা রেস্তোরাঁ হায়াত রিজেন্সির ভাবনাও তেমনই। হোটেল গেটওয়েতেও নেই কোনও জামাই স্পেশ্যাল মেনু। তবে সেখানে চলছে বাঙালি কিছু রাজবাড়ির রান্নাবান্না নিয়ে বিশেষ খাদ্য উৎসব। ষষ্ঠীর দিনে জামাই আদর হতে পারে
সেই মেনুতেই।
‘ভজহরি মান্না জামাইষষ্ঠী থালি’ও থাকছে না এ বছর। তবে যে কোনও উৎসবের মতোই ভজহরি মান্নায় বসে চিতল, ইলিশ, মোচায় জমিয়ে তোলা যাবে জামাইষষ্ঠীর ভোজ। মার্কোপোলোয় ষষ্ঠী মেজাজও একই রকম। রোজের মেনুর ভেটকি, কষা মাংস, চিংড়ি মালাইকাড়ি অপেক্ষা করবে শাশুড়ি-জামাইদের জন্য।
শেষ মুহূর্তে হঠাৎই আবার ‘জামাই বরণ’ মেনু ঠিক করে ফেলেছে হোটেল হিন্দুস্তান ইন্টারন্যাশনাল। লুচি, বেগুন ভাজা, ইলিশ-চিংড়ি, বেকড রসগোল্লার আহার সাজছে সেখানে।
ওহ্! ক্যালকাটাতে আবার চলছে গ্রীষ্ম স্পেশ্যাল খাদ্য উৎসব। আদরের জামাইদের নিয়ে ভোজ আয়োজন করা যায় সেখানেই। সঙ্গে অবশ্য বিশেষ দিনটার কথা মাথায় রেখে থাকছে একটা ‘জামাইষষ্ঠী স্পেশ্যাল থালি’।
আদি বাঙালি খাবারের ঠিকানা কিউপিস অবশ্য এখনও পুরনো ব্যবস্থাপনাতেই বিশ্বাসী। ‘জামাই জমজমাট’ থালা তৈরি থাকবে ষষ্ঠীর দিনে। আমিষ, নিরামিষ নানা পদের সঙ্গে জামাই বাবাজির আপ্যায়নে থাকবে রকমারি ভাজা।
উত্তম-সুচিত্রার নস্ট্যালজিয়ায় ভরপুর হিন্দুস্থান পার্কের ‘সপ্তপদী’ রেস্তোরাঁও রেখেছে জামাই ষষ্ঠী স্পেশ্যাল থালি। ১০ থেকে ১২ জুন সেখানে গিয়ে চেখে দেখা যায় পোলাও থেকে ডাব চিংড়ি, ইলিশ চাও-পো থেকে কাতলা সাগরিকাট।
রিসর্টে গিয়ে যে কোনও বিশেষ দিন উদ্যাপনই শহুরে বাঙালির নতুন ট্রেন্ড। তাই শহরের সবচেয়ে কাছের রিসর্ট বৈদিক ভিলেজে থাকছে জামাই ষষ্ঠীর জমজমাট আয়োজন। সে দিনের জন্য বিশেষ থালিতে থাকছে ছ’রকমের মাছ এবং মাংস। শেষপাতে আম-জাম-কাঁঠাল-লিচুতে থাকছে বিশেষ ফলাহারের ব্যবস্থা।