eye

ছানি কাটিয়ে চশমা আঁটা জীবন থেকে মুক্তি

ছানি যখন পড়তে শুরু করে চোখের দৃষ্টি ক্রমশ ঘোলাটে হতে শুরু করে। রঙিন দৃশ্যও বিবর্ণ লাগে।

Advertisement

অনন্যব্রত দাস

শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২০ ১৪:৫৯
Share:

ছানির পরিস্থিতি যদি জটিল হয় তা হলে তখন ফেকো সার্জারির বদলে স্মল ইনসিশন ক্যাটারাক্ট সার্জারি করা যেতে পারে।

গানের কথা মতো ‘বয়স হওয়া মানেই স্বচ্ছতাকে বিদায় দেওয়া’, একেবারেই আর বাস্তব নয়। বরং ছানি যদি স্বচ্ছ দৃষ্টির অন্তরায় হয়ে থাকে তা হলে ছানি অপারেশনের পর আবার স্বাভাবিক দৃষ্টি শক্তি ফিরিয়ে দেওয়া মোটেও অসুবিধার নয়। চিকিৎসা শাস্ত্রের উন্নতির সঙ্গে আধুনিক হয়েছে তার সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত প্রযুক্তি। প্রতিস্থাপন হয়েছে উন্নত মানের। আর তাই আমরা ছানি অপারেশনের পর অনায়াসে ব্যবহার করছি টোরিক লেন্স-ট্রাইফোকাল লেন্স। যা নাকের ডগায় চশমা এঁটে জীবন কাটাতে বাধ্য করে না। বরং এক জন স্বাভাবিক মানুষের মতোই জীবন অতিবাহিত করতে সহায়তা করে। চশমার ব্যবহারও অপ্রয়োজনীয় হয়ে যায় তখন। চশমা নিয়ে অনেকেরই বিড়ম্বনার শেষ নেই। ছানি অপারেশানের পর যখন লেন্স প্রতিস্থাপন করা হয় তখন যদি টোরিক বা ট্রাইফোকালের মতো অত্যাধুনিক লেন্স প্রতিস্থাপন করা যায় চশমাকে বিদায় জানানো শক্ত নয়।

Advertisement

কী ভাবে সম্ভব?

বোঝার জন্য একটু গোড়ার প্রসঙ্গ বলার প্রয়োজন। ছানি হচ্ছে অনেকটা সেই ক্যামেরার লেন্সের মতো যাতে, ধুলো ময়লা লেগে বা দাগ লেগে নিখুঁত ছবি তোলায় বিঘ্ন ঘটায়। তখন লেন্স পরিষ্কার করে বা বদলে ফেলে ক্যামেরাকে কার্যকরী করা হয়। ঠিক তেমনি ক্যাটারাক্ট বা ছানি হচ্ছে চোখের লেন্সের অস্বচ্ছতা। চোখের লেন্স প্রোটিন ও জলীয় উপাদান দিয়ে তৈরি হয়। কিছু নির্দিষ্ট প্রোটিন লেন্সের স্বচ্ছতা বজায় রাখে। বয়স বাড়ার সঙ্গে এবং নানা কারণে সেই সব প্রোটিনের অপ্রতুলতা থেকে লেন্সের স্বচ্ছতা কমতে থাকে। যাকে আমরা ছানি নামে চিনি। আর এই পরিস্থিতিতে ক্যামেরার লেন্সের মতো চোখের লেন্স বদলও হয়ে যায় অত্যন্ত জরুরি। আর এই লেন্স বদলের সময় অত্যন্ত সহজে আধুনিক লেন্স ব্যবহার করলে চশমার প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়।

Advertisement

ছানি চেনা

ছানি পড়ার সব চাইতে সাধারণ লক্ষণ হচ্ছে আবছা দেখা। ছানি যখন পড়তে শুরু করে চোখের দৃষ্টি ক্রমশ ঘোলাটে হতে শুরু করে। রঙিন দৃশ্যও বিবর্ণ লাগে। দিনের বেলা প্রখর রোদে দেখতে অসুবিধা হয়। আলোর চার ধারে রামধনুর মতো দেখায়। মাঝে মধ্যে একই জিনিস দুটো করে দেখায় বা ডাবল ভিশন হতে পারে। তা ছাড়া পড়াশোনা করা, সেলাই করা বা অন্য কাজ করতে অসুবিধা হতে পারে। তাই ছানি থেকে মুক্তির এক এবং অন্যতম পথ হচ্ছে সার্জারি করা। আর সার্জারির পর সমস্ত বিবর্ণতা মুছে গিয়ে পৃথিবীর রং ফিরে আসা সম্ভব।

আরও পড়ুন: নোবেল এ বার প্রাণঘাতী! ভারতেও জারি সতর্কতা

প্রতিস্থাপনের পথ নির্দেশ

এই মুহূর্তে ছানি অপারেশনের জনপ্রিয় পদ্ধতি হচ্ছে ফেকোইমালসিফিকেশন বা ফেকো পদ্ধতি। অপারেটিং মাইক্রোস্কোপ দিয়ে কর্নিয়ার কাছে ছোট্ট ফুটো করে সেখান দিয়ে তীক্ষ্ণ একটি যন্ত্র প্রবেশ করিয়ে শব্দ কম্পনের মাধ্যমে ছানি অপসারণ করা হয়। আধুনিক প্রযুক্তির যন্ত্রের সহায়তায় সামান্য এনার্জি ক্ষয় করে ছানি কাটা হচ্ছে, তার পর কাটা ছানির অংশকে আল্ট্রা সাউন্ড প্রোবের মাধ্যমে টেনে বার করা হয়। ছানির পরিস্থিতি যদি জটিল হয় তা হলে তখন ফেকো সার্জারির বদলে স্মল ইনসিশন ক্যাটারাক্ট সার্জারি করা যেতে পারে। তবে সার্জারি যে ভাবেই হোক ছানি কাটার পর অত্যাধুনিক টোরিক লেন্স-ট্রাইফোকাল লেন্স স্থাপন করলে পরবর্তী কালে চশমা ব্যবহারের প্রয়োজন আর থাকে না।

কেন ছানি কাটার পর চশমাকে বিদায় জানাবেন?

ছানি শুধু মাত্র বয়স বাড়লেই হয় না। যে কোনও বয়সের মানুষই ছানিতে আক্রান্ত হতে পারেন। এমনকি, চোখে ছানি নিয়েও অনেক শিশু জন্মায়। জন্মগত বা কনজেনিটাল ক্যাটারাক্ট ছাড়াও কোনও অসুখ থেকে, ওষুধের প্রভাবে বা দুর্ঘটনা থেকেও ছানি হতে পারে। ডায়াবেটিস নিয়ে দীর্ঘ দিন ঘর করলেও ছানি হতে পারে। তাই বয়স যা ই হোক না কেন ছানিতে যখন চোখের লেন্স খারাপ হয়ে যায় তখন তা প্রতিস্থাপন করার সময় এমন লেন্সই প্রতিস্থাপন করা ভাল যা দৃষ্টি শক্তি ফিরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি নাকের উপর এঁটে থাকা চশমাকেও বাতিল করে দিতে পারে। তাই এই ধরনের অত্যাধুনিক লেন্স ছানি পড়া বিবর্ণ জীবনে এক মুঠো রঙের আবাহন।

আরও পড়ুন: টিউমারের ম্যালিগন্যান্সি ঠেকাতে সাহায্য করে এই সব্জি, প্রতি দিন পাতে রাখুন একে

টোরিক লেন্সের সাত-সতেরো

অ্যাস্টিগম্যাটিজম থেকে আবছা দেখা খুবই সাধারণ লক্ষণ। এই ক্ষেত্রেও বিশেষ লেন্স যথেষ্ট কার্যকরী। তা ছাড়া কোনও ব্যক্তির চোখে যদি সিলিন্ড্রিকাল পাওয়ার থাকে তখন তার ছানি কাটার পর ইন্ট্রা অকুলার লেন্স হিসেবে টোরিক লেন্স প্রতিস্থাপন করা হয়। যার ফলে সিলিন্ড্রিকাল পাওয়ার-সহ চশমা ব্যবহার করার প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়। এ ছাড়া যাদের দূরের এবং কাছের দৃষ্টি শক্তি দু’টিই কম তাদের ক্ষেত্রে আমরা ট্রাইফোকাল লেন্স ব্যবহার করছি। যার জন্য এর পর আর চশমা আঁটার প্রয়োজন থাকে না। তাই এখন আমরা গানের মতো করেই বলতে পারি ছানি অপারেশন মানে চশমাকে বিদায় দেওয়া!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement