Mental Health

বয়স্কদের মনের যত্ন নিন

বয়স্কদের মধ্যেও বাড়ছে মানসিক রোগবালাই। কোন ধরনের মানসিক সমস্যায় সচেতন হবেন?

Advertisement

নবনীতা দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৪ ০৯:০৪
Share:

— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

বয়স কালের বাতিক বলে অনেক ঘটনাই হয়তো চোখ এড়িয়ে যায়। কিন্তু বয়স্কদের মনেও বাসা বাঁধে অবসাদ। একাকিত্ব ও অবসাদ থেকে মানসিক রোগের শিকারও হতে পারেন তাঁরা। আর শুধু অবসাদই নয়, তার সঙ্গে সিউডো-ডিমেনশিয়া, ডিলেরিয়াম, সাইকোসিসের মতো নানা মানসিক সমস্যাও দেখা দিতে পারে। আত্মহত্যার প্রবণতাও বিরল নয় বয়স্কদের মধ্যে। কী ভাবে তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেবেন, পরামর্শ দিলেন বিশেষজ্ঞরা।

Advertisement

কেন অবসাদে ভোগেন প্রবীণরা?

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জয়রঞ্জন রাম বলছেন, “মানসিক সমস্যায় ভুগছেন, এমন প্রবীণ রোগীর সংখ্যা কম নয়। আসলে ষাট-সত্তর বছরের পরে মাল্টিপল লস হতে শুরু করে। প্রথমত চাকরি থেকে অবসর, তার পর সংসারে কাজ করার ক্ষমতা কমে যায়, দৃষ্টিশক্তি কমতে থাকে, শারীরিক রোগভোগ বাড়ে, আর্থিক জোর কমতে থাকে, ছেলেমেয়ে দূরে চলে যায়, ক্রমশ নিকটজনকে হারাতে শুরু করেন... এর সঙ্গে প্রযুক্তিগত দিকেও এঁরা পিছিয়ে পড়েন।” ফলে সমাজে নিজের গ্রহণযোগ্যতা কমতে থাকছে বলে মনে করেন তাঁরা। তা থেকেই একাকিত্ব ও গভীর অবসাদের সৃষ্টি হয়।

Advertisement
  • অবসাদ চিহ্নিতকরণ এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন ডা. রাম। অনেক সময়ে তাঁরা ইরিটেটেড আচরণ করেন। সব কিছুতেই রেগে যান, বিরক্ত হন। হয়তো তাঁর বিছানাটা গুছিয়ে দিতে গেলেন বা সিঁড়ি ভাঙার সময়ে হাত ধরতে গেলেন, এঁরা তখন সেই সাহায্যটা নিতে চান না।
  • কিছু ক্ষেত্রে এঁরা গুটিয়ে যান। অর্থাৎ অ্যাক্টিভিটি বন্ধ করে দেন। যে মানুষটা রোজ সারা সন্ধে টিভি দেখতেন, হঠাৎ তিনিই টিভি দেখা বন্ধ করে দিলেন। মর্নিং ওয়াকে যাওয়াও বন্ধ করে দিলেন আচমকাই। এগুলো কিন্তু উপসর্গ।
  • অনেক সময়ে আবার এঁরা নানা রকম রোগবালাই নিয়ে অভিযোগ করতে থাকেন। পরীক্ষা করে দেখা গেল হয়তো সেই রোগ আসলে নেই।
  • কথা বলা বন্ধ করে দেন অনেকে। বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-পরিজন কারও সঙ্গেই যোগাযোগ রাখেন না।

এই ধরনের লক্ষণ দেখা গেলে সতর্ক হতে হবে। তবে অবসাদের লক্ষণের সঙ্গে মিশে থাকে অন্য মানসিক রোগের উপসর্গও। সেগুলো নিয়ে আলোচনা করলেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আবীর মুখোপাধ্যায়—

সিউডো-ডিমেনশিয়া

যাঁদের সিউডো-ডিমেনশিয়া থাকে, তাঁদের আচার-আচরণ কিছুটা ডিমেনশিয়া রোগীর মতো হয়। তাঁরা হয়তো মনে রাখতে পারেন না, জিনিসপত্র এ দিক-ও দিক রেখে আর খুঁজে পান না, রাস্তায় বেরিয়ে পথ হারিয়ে ফেলেন। তবে এই ধরনের রোগীদের ক্ষেত্রে পরীক্ষা করে বুঝতে হবে আসলে এটা ডিপ্রেশন নাকি ডিমেনশিয়া। “পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে যে, যাঁরা আসলে ডিমেনশিয়ার শিকার তাঁরা যে কোনও পরিস্থিতিতে ম্যানেজ দেওয়ার চেষ্টা করেন। যে কোনও প্রশ্নের ক্ষেত্রে, চিন্তাভাবনা না করেই কাছাকাছি একটা উত্তর দেন। ভুলে গেলেও তা স্বীকার করেন না। এ ক্ষেত্রে সেল্ফ-ডিনায়াল অন্যতম লক্ষণ। কিন্তু অবসাদের শিকার হলে তাঁরা আবার বাড়িয়ে বলবেন। নিজেরাই বলবেন যে, তাঁরা ভুলে যাচ্ছেন, কিছুই মনে রাখতে পারছেন না,” বললেন ডা. মুখোপাধ্যায়। তবে পরীক্ষানিরীক্ষা করে এ সব বিষয়ে আরও সুনিশ্চিত হতে হবে।

সাইকোসিস

লেট-এজ সাইকোসিস হওয়ার প্রবণতাও থাকে। এটা হলে তাঁদের হ্যালুসিনেশন ও ডিলিউশন দুটোই হতে পারে। তিনি হ্যালুসিনেট করতে পারেন যে, তাঁকে নিয়ে তিন-চারজন আলোচনা করছেন, আসলে সেখানে কেউই নেই। আবার সন্দেহ করতে পারেন চারপাশের লোককে, একে বলে ডিলিউশন। নিউরোলজিক্যাল ডিজ়অর্ডার, যেমন পারকিনসন’স ডিজ়িজ় থাকলে এই রোগের আশঙ্কা বাড়ে। “কম বয়সে হলে এই রোগ যতটা মারাত্মক আকার ধারণ করে, বেশি বয়সে হলে সাধারণত ততটা খারাপ আকার ধারণ করতে পারে না। তবে এ রোগের চিকিৎসা মূলত ওষুধনির্ভর,” বলে জানালেন ডা. আবীর মুখোপাধ্যায়। এই রোগে আক্রান্ত হলে বাস্তব ও কল্পনার জগতের মধ্যে তফাত করতে পারেন না তাঁরা। কথাবার্তাও বিক্ষিপ্ত হতে শুরু করে। কোনও ইনফেকশন, ইলেক্ট্রোলাইট ইমব্যালান্স, বড় অস্ত্রোপচার হওয়ার পরে যদি এ রকম হ্যালুসিনেট করতে থাকেন, তখন সেটাকে বলে ডিলেরিয়াম। তবে শারীরিক অসুস্থতা থেকেই ডিলেরিয়াম হয়। শারীরিক সুস্থতার সঙ্গে এই সমস্যাও কমে যায়। অনেকের আবার ডিমেনশিয়ার সঙ্গেও ডিলেরিয়াম হতে পারে।

আত্মহত্যার প্রবণতা

বয়স্কদের মধ্যে এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। একাকিত্ব বা অবসাদ চরম পর্যায়ে চলে গেলে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন অনেকে। “বয়স্করা যদি কখনও নিজেকে আঘাত করেন বা ‘আর বেঁচে থেকে লাভ নেই’, ‘এ বার ওষুধ খেয়ে চলে যাব’... এই ধরনের কথা বলেন, তা হলে সতর্ক হতে হবে। কারণ সেটাই আসল ইঙ্গিত। তখন তাঁর সঙ্গে কথা বলে চিকিৎসা শুরু করতে হবে,” বলছেন ডা. মুখোপাধ্যায়।

বাড়ির প্রবীণ সদস্যদের নিয়ে সংসারের সব সিদ্ধান্ত নেওয়ার, তাঁদের সঙ্গে রোজ অন্তত এক ঘণ্টা ভাল সময় কাটানোর পরামর্শ দিচ্ছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা। বিভিন্ন বন্ধুবৃত্তে বা কাজে যদি তাঁরা সময় কাটাতে পারেন, তা হলে সবচেয়ে ভাল। স্মার্টফোনে সোশ্যাল মিডিয়া পেজ দেখা বা অ্যাপ ব্যবহার করা শিখিয়ে দিতে পারেন। এতে তাঁদের সময় কাটবে, নির্ভরতাও কমবে। ফলে আত্মবিশ্বাসী হবেন। বাগান করা, ছবি আঁকা, গান শোনার মতো কাজেও সময় কাটালে ভাল লাগবে। বয়সের থাবা শরীরে তো বসবেই, কিন্তু মনে যেন তা আঁচড় কাটতে না পারে, সে দিকে সতর্ক থাকতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement