Diets

অন্ধ অনুসরণে ডায়েট নয়

ডায়েট চার্ট মেনে চলার আগে তা সম্পর্কে নিজের ঠিক ধারণা থাকাও অত্যন্ত জরুরিডায়েট চার্ট মেনে চলার আগে তা সম্পর্কে নিজের ঠিক ধারণা থাকাও অত্যন্ত জরুরি

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০২০ ০০:০৪
Share:

মডেল:  অর্পিতা ঘোষ

লকডাউনে বাড়িতে থেকে হৈমন্তীর ওজন বেড়ে গিয়েছে বেশ খানিকটা। অনলাইনে বিস্তর পড়াশোনা করে নিজের মতো ডায়েট চার্ট তৈরি করে সে। কিন্তু ক’দিন সেই চার্ট ফলো করতেই বিপত্তি। যখন-তখন মাথা ধরে তার, গা গুলিয়ে ওঠে।

Advertisement

দেবাশ্রিতা আবার ডায়েট শুরু করেছিল কোনও এক ওয়েবসাইট দেখে। অক্ষরে অক্ষরে সে ডায়েট চার্ট ফলো করতে শুরু করে। সেখানে ফলের রস খাওয়ার পরামর্শ থাকায় সারা দিন দেবাশ্রিতা ফ্রুট জুস খেয়ে অচিরেই অসুস্থ হয়ে পড়ে।

আবার যে ডায়েট যখন ট্রেন্ড, তখন সেই ডায়েট ফলো করেন অনেকেই। ফলে হঠাৎ করে কখনও কিটো ডায়েট, এক সপ্তাহ ইন্টারমিটেন্ট... এ রকম ইচ্ছে মতো করতে থাকলে তার প্রভাব পড়ে শরীরে। তাই যা খুশি ডায়েট যেমন হঠাৎ শুরু করা উচিত নয়, তেমনই ডায়েট সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট করে নেওয়া দরকার।

Advertisement

ডায়েট মানেই ওজন কমানো?

প্রত্যেক মানুষই ছোট থেকে এক এক রকমের খাদ্যাভ্যাসে বড় হয়। কিন্তু ডায়াটিশিয়ানের কাছে গিয়ে চার্ট তৈরি করে নিক্তিতে মেপে খাওয়ার উদ্দেশ্য আজও বেশির ভাগের কাছে ওজন কমানো। কেউ কেউ আবার নিজের ওজন ধরে রাখার জন্যও ডায়াটিশিয়ানের পরামর্শ নেন। কিন্তু সবচেয়ে আগে জানা দরকার, শারীরিক ওজনটাই শেষ কথা নয়। তাই লক্ষ্যও সেটা হওয়া ঠিক নয়। অনেককেই হয়তো দেখতে ছিপছিপে লাগে, কিন্তু ওয়েয়িং মেশিন অন্য কথা বলে। আসলে অনেকেরই শরীরে হাড়ের ওজন, পেশির ওজন বেশি হতে পারে। তাই শারীরিক ওজন বেশি হলে এবং কোনও অসুস্থতা না থাকলে, কখনওই তা চিন্তার কারণ নয়। তাই ওজন না কমিয়ে চাইলে ইঞ্চির ভিত্তিতে বা ইঞ্চ লসের মাধ্যমে নিজেকে মেনটেন করা শ্রেয়। বাড়তি ওজন যেমন মাত্র সাত দিনে বাড়েনি, তেমনই সাত দিনে ম্যাজিকের মতো ৮-১০ কিলোগ্রাম ওজন কমানো যায় না। অথবা তা করা গেলেও, সেই পন্থা কখনও বৈজ্ঞানিক এবং স্বাস্থ্যসম্মত নয়।

বিএমআর এবং বিএমআই

বিএমআর হল বেসাল মেটাবলিক রেট। শরীর যখন বিশ্রামে থাকে, তখন শরীরের নানা কাজ চালানোর জন্য যত ক্যালরি লাগে। বিএমআর হল বডি মাস ইনডেক্স। অর্থাৎ উচ্চতা অনুযায়ী যে ওজন আদর্শ। তবে এই দুটোই কিন্তু শুধু মাত্র প্যারামিটার নয়। কারণ এক এক জনের ক্যালরি বার্ন হওয়ার পারসেন্টেজ আলাদা। লিঙ্গ ও শারীরিক সুস্থতার উপরেও তা নির্ভর করে।

আবার ক্যালরি মাপাও নির্দিষ্ট গাইডলাইন মেনে হয় না। অনেকেরই প্রবণতা থাকে, বাজারচলতি অ্যাপের মাধ্যমে সারা দিনের খাবারের ক্যালরি সহজেই মেপে ফেলার। কিন্তু বেশির ভাগ খাবারে অনেক রকম মাইক্রো ও ম্যাক্রো নিউট্রিয়েন্টস থাকে। সব মিলিয়ে যোগ করে বিশেষ ক্যালরি পাওয়া যায়।

ওজন মাপার নিয়মকানুন

বিভিন্ন ওজনের মেশিন বিভিন্ন মাপ দেখাতে পারে। তাই নিয়মিত ওজন মাপার প্রয়োজন হলে যে কোনও একটি মেশিনেই মাপা উচিত। এমনকি ডায়েট ফলো করার সময়ে প্রত্যেক দিন ওজন মাপার দরকার নেই। কারণ রোজ মাপলে হতোদ্যম হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই দু’সপ্তাহ অন্তর করালেই যথেষ্ট।

ওজন কমা নির্ভর করে নানা বিষয়ের উপরে, শরীরের গঠন, ফ্যাটের অ্যাকিউমুলেশন, মেটাবলিক রেট, স্ট্রেস লেভেল, রোগের ইতিহাস ইত্যাদি। তাই সকলের যে একই হারে ওজন কমবে, তা ঠিক নয়। কারণ সাত দিনে ৫০০ গ্রাম ওজন কমে, কারও আবার এক মাসও লেগে যায়।

ওজন মাপার আদর্শ সময় সকালবেলা। সারাদিনে ওজনের হেরফের হয়। আবার পিরিয়ডস চলাকালীনও ওজন বাড়ে-কমে। তাই ডায়েট ফলো করলেও সাইকল চলাকালীন ওজন করার বিশেষ দরকার নেই।

সুস্থ থাকার জন্য

অনেকেরই ধারণা, ওজন কমাতে গেলে সবচেয়ে আগে ভাত, আলু সব বাদ দিয়ে দিতে হবে। কার ডায়েটে কী কমালে উপকার হবে, সেটা নির্ধারণ করতে পারেন ডায়াটিশিয়ানই। হতেই পারে, কোনও কিছুই একেবারে বাদ না দিয়ে পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া হল। সুস্থ থাকার জন্য বাড়ির খাবারই যথেষ্ট। তার জন্য ইমিউনিটি বুস্টিং শেক, প্রোটিন শেক, সাপ্লিমেন্টের দরকার নেই। ওজন ঠিক রাখার অন্যতম সফল চাবিকাঠি হল খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং সময় মতো খাওয়া।

ইচ্ছে মতো ডায়েট করলে, তা থেকে নানা সমস্যা হতে পারে। ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া, চুল পড়ে যাওয়ার মতো সমস্যার পাশাপাশি ডিহাইড্রেশন, অ্যাসিডিটি, ব্লোটিং, কোষ্ঠকাঠিন্য, অনিয়মিত পিরিয়ডস অস্বাভাবিক নয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টসের অভাব ঘটে। তার সরাসরি প্রভাব পড়ে প্রতিরোধ ক্ষমতায়। কখনও মাসল স্ট্রেংথ কমজোরি হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি ভুল ডায়েট মেনে চলার ফলে অঙ্গ বিকল হয়ে যাওয়াও অস্বাভাবিক নয়।

তাই ‘স্লো বাট স্টেডি’ পদ্ধতিতে এগোনোই ভাল। যে ডায়েট ধরে রাখা যায়, সেই চার্টেই ভরসা রাখুন। সাসটেনেবল ডায়েট ফলো করুন।

কোনও ডায়াটিশিয়ানের কাছে যাওয়ার আগে ভাল করে তাঁর অভিজ্ঞতা, কাজের ইতিহাস সম্পর্কেও জেনে নেওয়া জরুরি।

শরীরের মতো সম্পদটিকেই অবহেলা করে মানুষ। তার যত্ন নেওয়া খুব কঠিন কাজ নয়। এবং তা নিতে হবে নিয়ম মেনে।

তথ্য সহায়তা: পুষ্টিবিদ কোয়েল পাল চৌধুরী

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement