কারা প্রথম গিয়েছিল চাঁদে? ছবি: সংগৃহীত।
দৈর্ঘ্য মাত্র এক মিলিমিটার। সেই আট পায়ের প্রাণীই বেঁচে থাকতে পারে যে কোনও পরিস্থিতিতে। বস্তত, চাঁদের বুকে তারাই প্রথম বাসিন্দা বলে দাবি বিজ্ঞানীদের। কী এদের পরিচয়? কেনই বা তাদের চাঁদের বাসিন্দা বলে মনে করা হচ্ছে?
২০১৯ সালের ১১ এপ্রিল। চাঁদের উদ্দেশে রওনা হয় ইজ়রায়েলের মহাকাশযান ‘বেরেশিট’। সেই মহাকাশযানে চড়েই চাঁদে নামার কথা ছিল এক প্রাণীর। কিন্তু ১১ এপ্রিলই যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে চাঁদের মাটিতে ভেঙে পড়ে সেই মহাকাশযানটি। তবে ওই মহাকাশ অভিযানের পর প্রায় ৩ কোটি পাতার তথ্য সংগ্রহ করেন গবেষকেরা। তার মধ্যে রয়েছে ‘টারডিগ্রেড’ নামে প্রাণীও। তাদেরই চাঁদের যাত্রী করে পাঠানো হয়েছিল।
এক মিলিমিটারেরও কম দৈর্ঘ্যের আটপেয়ে প্রাণীগুলির পোশাকি নাম টারডিগ্রেড। তবে ‘ওয়াটার বিয়ার’ বা ‘জলভালুক’ নামেও তারা পরিচিত। চেহারার জন্য কেউ কেউ ‘শ্যাওলা শূকরছানা’ও বলে থাকেন। মনে করা হয়, যত দিন সূর্য থাকবে, তত দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকবে এই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রাণী। কী ভাবে?
জলভালুক চরম আবহাওয়াতেও বেঁচে থাকতে পারে। পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, ১৫০ ডিগ্রি থেকে মাইনাস ২৭২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রাতেও দিব্যি বেঁচে থাকতে পারে টারডিগ্রেডরা। এমনকি, মহাশূন্যেরএকেবারে চাপশূন্য অবস্থায় কিংবা পৃথিবীর গভীরতম সমুদ্রখাত ‘মারিয়ানা ট্রেঞ্চ’-এর ভয়ঙ্কর চাপেও তাদের অস্তিত্ব টাল খায় না। বহু বছর মৃতবৎ থেকে জল-বায়ু পেয়ে আবারও বেঁচে উঠতে পারে এরা। বিজ্ঞানীদের মতে, এই জলভালুকদের চাঁদের মতো জায়গাতেও বসবাসের সম্ভাবনা ব্যাপক। একাধিক সমীক্ষায় এ-ও দাবি করা হচ্ছে, চাঁদে কার্যত নিজস্ব উপনিবেশও স্থাপন করে ফেলেছে এই ক্ষুদ্র প্রাণীরা। আবার টারডিগ্রেডের দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়ার ফলে চাঁদে জৈবিক উপাদান দূষণের আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে। ‘টারডিগ্রেড’-এর অর্থই ‘ধীর গতির প্রাণী’। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং হার্ভার্ড-স্মিথসোনিয়ান সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিজ়িক্সের গবেষণা বলছে, বিশ্বের ‘সবচেয়ে অবিনশ্বর’ এই প্রজাতির স্থূল চেহারায় চার জোড়া পা রয়েছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, সূর্যের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত বেঁচে থাকবে এরা।