SSKM

State Govt.: রাজ্যের কাছে কি তবে ব্রাত্যই বিরল রোগে আক্রান্তেরা

বিরল রোগ নিয়ে রাজ্যের নীতি নির্ধারণ কত দূর? এ প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, ‘‘একটা জাতীয় নীতি তো রয়েছেই।’’

Advertisement

জয়তী রাহা

শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২২ ০৭:৩৬
Share:

ফাইল চিত্র।

গত প্রায় এক বছরে বেশ কয়েক বার ছোট্ট মেয়েটাকে নিয়ে গিয়েছিলেন। ফিরে এসেছেন খালি হাতে। অবশেষে হাল ছেড়ে দিয়েছেন কসবা থানা এলাকার বাসিন্দা পলি পাল। হাঁটাচলায় অক্ষম সাড়ে তিন বছরের মেয়েকে হুইলচেয়ারে বসিয়ে কোভিড পরিস্থিতিতেও ঘন ঘন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ছুটতে হয়েছে। মূল উদ্দেশ্য, বিরল রোগ ‘স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রফি’ (এসএমএ)-তে আক্রান্ত মেয়ের জন্য প্রতিবন্ধী শংসাপত্র জোগাড় করা। সেটা অবশ্য আজও পাওয়া যায়নি।

Advertisement

গত বছর প্রথম যে দিন ওই হাসপাতালে গেলেন, পলিদের অস্থি বিভাগের বহির্বিভাগে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে দু’দিন ঘোরার পরে ফের পাঠানো হয় স্নায়ু বিভাগে। ওই বিভাগে দিন তিনেক চক্কর কাটার পরে পাঠানো হয় ফিজ়িয়োথেরাপি বিভাগে। অত দূর থেকে এক দিন হাসপাতালের ফিজ়িয়োথেরাপি বিভাগে মেয়েকে নিয়ে গিয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছেন পলি। ওই শংসাপত্র না পাওয়ায় কেন্দ্রীয় সরকারের ‘নিরাময়’ বিমারও অন্তর্ভুক্ত হতে পারছে না ছোট্ট শ্রীতমা। বিরল রোগের জন্য নির্ধারিত দিন ২৮ ফেব্রুয়ারিও তাই এই রোগীদের বছরভরের অপ্রাপ্তির ঝুলিই খুলতে হয়।

সরকারি খাতায় আজও শ্রীতমার মতোই অবহেলিত এ রাজ্যের বিরল রোগে আক্রান্ত অধিকাংশ মানুষ। এমনই অভিযোগ তাঁদের পরিজনদের। তাঁদের বক্তব্য, বিরল রোগ নিয়ে কেন্দ্রীয় নীতি আছে স্রেফ নাম-কা-ওয়াস্তে। রাজ্যে তা কী ভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে, সে ব্যাপারে নজরদারির কোনও ব্যবস্থা নেই। বিরল রোগ নিয়ে এ রাজ্যের নিজস্ব নীতি তৈরি নিয়েও টালবাহানা চলছে। কয়েক বছর আগে স্বাস্থ্য ভবনের তরফে বিরল রোগের চিকিৎসার বিষয়ে নীতি গ্রহণের জন্য যে ‘রেয়ার ডিজ়িজ় কমিটি’ গড়া হয়েছিল, বর্তমানে তারা কী করছে? জানা নেই রোগীদের পরিজনদের।

Advertisement

গত ডিসেম্বরে ওই কমিটি একটি বৈঠক করেছিল। যেখানে মূলত এ রাজ্যের চিকিৎসার উৎকর্ষ কেন্দ্র এসএসকেএমে বিরল রোগীদের পরিষেবা দিতে আরও কী কী পরিকাঠামো দরকার, আলোচনা তাতেই সীমাবদ্ধ থাকে। কমিটির তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, এ রাজ্যে বিরল রোগ সম্পর্কে নীতি নির্ধারণ এবং সেই অনুযায়ী তহবিল বণ্টনের সিদ্ধান্তের পরেই তহবিল তৈরির কথা ভাবা হবে। এ ভাবেই রোগীদের চিকিৎসা খাতে আর্থিক সাহায্য করা হবে বলে জানানো হয়েছিল।

অর্থাৎ, রান্নার সামগ্রী জোগাড় না করেই রান্নায় বসে পড়বেন রাঁধুনি। এই ধরনের ভাবনাতেই সরকারি প্রচেষ্টার খামতি ধরা পড়ছে বলে জানাচ্ছেন রোগীদের পরিজনেরা। এ দিকে, বিরল রোগ নিয়ে জাতীয় নীতি অনুযায়ী, ‘ক্রাউড ফান্ডিং পোর্টাল’ তৈরি হচ্ছে এ রাজ্যেও। ‘ক্রাউড ফান্ডিং পোর্টাল’-এর মোট আটটি নোডাল কেন্দ্রের একটি, তথা পূর্ব ভারতের একমাত্র হল এসএসকেএম। সেখানে কাগজে-কলমে কাজ চললেও চিকিৎসার বিপুল খরচ তুলতে তা কতটা কার্যকর, সেটা নিয়েও ধন্দ রয়েছে।

চিকিৎসার এই তহবিল গঠনে আদৌ কি কর্পোরেট সংস্থাগুলির সঙ্গে কথা বলে ‘সিএসআর’ (কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটিজ়) খাতে টাকা আনার চেষ্টা হচ্ছে? না কি সবটাই স্বাস্থ্য ভবন আর এসএসকেএমের কর্তা ও চিকিৎসকদের মধ্যে বৈঠকেই ঝুলে থাকছে?

বিরল রোগ নিয়ে রাজ্যের নীতি নির্ধারণ কত দূর? এ প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, ‘‘একটা জাতীয় নীতি তো রয়েছেই।’’ তা হলে রাজ্যের নীতি নির্ধারণে স্বাস্থ্য ভবনের যে কমিটি তৈরি হয়েছিল, সেটা কি আদৌ আছে? তাঁর উত্তর, ‘‘সেটা জেনে বলতে হবে।’’ ‘ক্রাউড ফান্ডিং’-এর জন্য কি কর্পোরেট সংস্থাগুলির সঙ্গে কথা বলা বা অন্য ভাবে তহবিল বৃদ্ধির বিষয়ে ভাবছে রাজ্য? স্বাস্থ্য সচিব জানান, এই বিষয়টি এসএসকেএমের অধিকর্তা দেখছেন। তবে কি স্বাস্থ্য ভবনের কোনও ভূমিকা নেই? তাঁর উত্তর, ‘‘যতটুকু ভূমিকা থাকার কথা, নিশ্চয়ই আছে।’’

বিরল রোগের চিকিৎসা নিয়ে রাজ্য সরকারের ভাবনা এখন এই স্তরেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement