ঘুম নেই তো শরীরও নেই

আগে ঘুম, তবে কি না কাজ! হ্যাঁ, এ কথাটাই সত্যি। ঘুম ভাল না হলে কিন্তু আটকে যাবে সব কাজ। এ কথাই বারবার করে মনে করাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা।

Advertisement

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৭ ০৩:০৯
Share:

আগে ঘুম, তবে কি না কাজ!

Advertisement

হ্যাঁ, এ কথাটাই সত্যি। ঘুম ভাল না হলে কিন্তু আটকে যাবে সব কাজ। এ কথাই বারবার করে মনে করাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা।

বন্ধুদের সঙ্গে অনলাইনে গল্প বা পরদিন অফিসে কী প্রেসেন্টেশন দেওয়া হবে, তার প্রস্তুতি চলে রাত দুটো-আড়াইটে পর্যন্ত। বন্ধুদের বাড়িতে বসে হাউস পার্টিও শুরু হয় রাত বারোটার পর থেকে। দিন দিন ব্যস্ত হতে থাকা নতুন প্রজন্মে এখন এমনটাই ট্রেন্ড। অর্থাৎ, যে সময়টা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকার কথা, সেই সময়টা ইচ্ছে করে জেগে থকাই এখন যেন দস্তুর।

Advertisement

এই ‘বদভ্যাস’ শরীরের স্বাভাবিক কাজকর্মের উপরে এতটাই প্রভাব ফেলছে যে, স্নায়ুতন্ত্র থেকে শুরু করে পরিপাকতন্ত্র, রেচনতন্ত্র, রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া ঠিক মতো কাজ করতে পারছে না। ওই সব শারীরবৃত্তীয় কার্যকলাপের মধ্যে যে ভারসাম্য থাকাটা জরুরি, তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

সম্প্রতি কলকাতায় বিশ্ব ঘুম দিবস উপলক্ষে হয়ে যাওয়া আলোনাচক্রে চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের মুখে সে কথাই ঘুরে ফিরে এল। এক বিশেষজ্ঞের মন্তব্য, ‘‘আমরা বেশি করে জাঙ্ক ফুড খাব, রাতভর ফেসবুকে চ্যাট করব, দিনের বেলা যখন যেখানে পারব ঘমিয়ে পড়ব—এটা কিন্তু স্বাভাবিক দিন যাপন নয়। সময়ে খাওয়াদাওয়া এবং অফিসের কাজের মতো ঘুমটাও অত্যন্ত জরুরি।’’

বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, শহুরে কিশোর থেকে শুরু করে মাঝবয়সীদের একটা বড় অংশ এখন অনিদ্রা ও তার থেকে হওয়া রেস্টলেসনেস সিন্ড্রোমের শিকার। যার সার্বিক প্রভাব গিয়ে পড়ছে কর্মক্ষেত্রে। এক শারীরবিজ্ঞানীর কথায়, ‘‘রাতে ঠিক মতো ঘুম না হলে পরদিন কাজের জায়গায় মনোনিবেশ করতে সমস্যা হয়। আর মনোনিবেশ করতে সমস্যা হলে কাজে ভুল হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায় সব সময়েই।’’

শারীরবিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষ যখন রাতে ঘুমোয়, তখন শরীরের অধিকাংশ প্রক্রিয়া একেবারে ঢিমেতালে চলে। সেই বিশ্রামটা পেলে তবেই পরদিন সকাল থেকে ফের পূর্ণ উদ্যমে কাজ শুরু করে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। ঘুম না হলে শরীর-যন্ত্র বিশ্রাম পায় না। ফলে পরদিন সকালে তার কাজ করতেও সমস্যা হয়।

চিকিৎসক সৌরভ দাস বলেন, ‘‘প্রতিদিন খাওয়াদাওয়ার সময়ের মতো ঘুমের সময়টাও নির্দিষ্ট রাখতে হবে। তা না হলে বিভিন্ন শারীবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার মধ্যে যে ভারসাম্য থাকে, সেটা নষ্ট হয়ে যাবে।’’ সময়মতো ঘুম না এলে কিংবা টানা বেশ কয়েক দিন ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলে চিকিৎসকদের পরামর্শ নেওয়াও জরুরি বলে মনে করান সৌরভবাবু।

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইফ সায়েন্স বিভাগের প্রধান দেবাশিস সেন বলেন, ‘‘বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনার মূলে যে অনিদ্রা, তা নানা জায়গার গবেষণায় ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে।’’ বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থায় যেমন কর্মীদের নির্দিষ্ট সংখ্যক ছুটি নিতে বাধ্য করা হয়, তেমনই তাঁদের ঘুম ও খাওয়ার সময় বেঁধে দেওয়া হয় বলে জানান এক চিকিৎসক।

আসলে ঘুম ঠিক হলে তবেই জীবন-ঘড়ি ঠিক গতিতে দৌড়োয়। জীবন ঘড়ির গতি এ দিক-ও দিক হলেই যে মুশকিল!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement