বোতলে গ্লাসপেন্টিং ছবি: দেবর্ষি সরকার
পেনসিল, তুলি ও রঙের সম্মিলনে মনের মাধুরী যখন ফুটে ওঠে ক্যানভাসে, তা সব সময়েই হয় ইউনিক। সেই অঙ্কনশৈলীতে ঘর সাজানো যেতে পারে নিত্যই নতুনের ছন্দে। বানিয়ে নেওয়া যায় নানাবিধ জিনিস, যা হয়ে উঠবে আপনার অন্দরের সিগনেচার স্টাইল। সল্টলেকের বাসিন্দা অনুরাধা মজুমদার দাশগুপ্ত নিজের বানানো ছোট ছোট জিনিস দিয়ে এ ভাবেই সাজিয়ে তুলেছেন তাঁর আবাস। তাঁর কাছ থেকে জেনে নিলাম কী ভাবে করা যায় কেটল বা বটল পেন্টিং কিংবা বানিয়ে নিতে পারবেন ফ্রিজ ম্যাগনেট আরও অনেক কিছু।
ট্রে-তে বিবিধ কারুকাজ
দু’রকম ভাবে কারুকাজ করা যেতে পারে ট্রে-তে। ডেকুপাজ পদ্ধতিতে বা হাতে এঁকে। প্রথমে আসি ডেকুপাজ প্রসঙ্গে। এমডিএফ বা কাঠের তৈরি ট্রে কিনে নিতে হবে। ডেকুপাজ এক ধরনের বিদেশি টেকনিক, যা জার্মান টিসু পেপার দিয়ে করেন অনুরাধা। এই কাজে যে আঠা ব্যবহার করা হয় তাকে বলে মডপজ (এক ভাগ আঠার সঙ্গে তিন ভাগ জল মিশিয়ে পাতলা করে মডপজ বানিয়ে নিতে পারেন)। ট্রে-র উপরে প্রথমে প্রাইমার করে স্যান্ড পেপার দিয়ে ঘষে সব দিক সমান করে নিতে হবে। তার পর করতে হবে বেস কালার, তা মূলত সাদা হয়। ছোট জিনিস হলে বেসের উপরে অ্যাক্রিলিক, বড় জিনিস, যেমন ট্রে-তে করা হয় ওয়েদারপ্রুফ রং। তার পর তরল আঠা লাগানোর পালা। আঠা শুকিয়ে গেলে জার্মান টিসু পেপার থেকে খুব আলগা এবং ভেজা হাতে তিনটে স্তর আলাদা করে উপর থেকে প্রথম লেয়ারটা তুলে নেওয়া হয়। ‘‘একটা বা দু’-তিন রকম টিসু পেপার ছিঁড়ে ট্রে-র উপরে এমন ভাবে পেস্ট করতে হবে, যেন মনে হয় পেন্টিং। ফিনিশিং করতে তার উপরে তুলি বা স্পঞ্জ দিয়ে মডপজ দু’বার দিতে হবে। কোথাও ফাঁক থেকে গেলে রং দিয়ে ভরাট করতে হবে। শুকিয়ে গেলে গ্লসি বা ম্যাট ল্যাকার লাগানো হবে,’’ পরামর্শ অনুরাধার। হ্যান্ড পেন্টিংয়ের ক্ষেত্রেও প্রাইমার করে স্যান্ড পেপার দিয়ে ঘষে সমান করে বেস কালার দিন। বেস কালার হিসেবে অ্যাক্রিলিক বা ঘর রং করতে যে রং ব্যবহার করা হয়, সেটাও দেওয়া যেতে পারে। শুকিয়ে গেলে পেন্সিল দিয়ে পছন্দমতো এঁকে, তাতে রং করুন।
কেটল পেন্টিং
অ্যালুমিনিয়ামের কেটলিতে অনায়াসে করতে পারেন পেন্টিং। প্রথমে মেটালের উপরে মেটাল প্রাইমার করে নিতে হবে। তার পর স্যান্ড পেপার দিয়ে ঘষে সমান করে নিয়ে বেস কালার দিন। বেস কালার হিসেবে চলতে পারে অ্যাক্রিলিক বা ওয়েদারপ্রুফ রং। শুকিয়ে গেলে পেন্সিল দিয়ে পছন্দমতো এঁকে, অ্যাক্রিলিক দিয়ে রং করুন। শেষে গ্লসি বা ম্যাট ল্যাকার লাগালে ফিনিশিং ভাল আসবে।
জুয়েলারি বক্স
অনলাইন সাইটে ডিআইওয়াই কাজের উপরে বেস করা এমডিএফ বা পাইনউডের বিভিন্ন মাপের জুয়েলারি বক্স কিনতে পাওয়া যায়। সেই বাক্সে প্রথমে প্রাইমার করে ঘষে নিয়ে বেস কালার লাগিয়ে দিন। বক্সগুলোর কোনওটাতে ডেকুপাজ, কোনওটাতে আঁকা হয়েছে। দুটো আলাদা রকম টিসু পেপার দিয়েও ডেকুপাজ করা যায়। বেসকালার এ ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ। বাক্সের ভিতরটা প্রাইমার করে বেসকালার করলে দেখতে ভাল লাগে। জুয়েলারি বক্সেও অ্যাক্রিলিক তো বটেই, দেওয়ালে করার রংও ব্যবহার করা যায়।
ফ্রিজ ম্যাগনেট
অনলাইনে যে সব সাইট কাঠের বেস বা এমডিএফ এর উপরে ম্যাগনেট বেস বিক্রি করে, সেখান থেকে কিনুন ম্যাগনেট বেস। এ ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতিতে প্রথমে প্রাইমার, তার পর স্যান্ডিং করে সমান করে নেওয়া। ছোট বেস বলে অ্যাক্রিলিক রং করা হয়েছে। তার পর ইচ্ছেমতো এঁকে নিয়ে, গ্লসি বা ম্যাট ল্যাকার বুলিয়ে দেওয়া। মণ্ডলা আর্ট, ডুডল, সাধারণ ফুল বা প্রকৃতির ছবি বা কোনও ইতিবাচক বার্তাও লিখে দেওয়া যায় ম্যাগনেটে, যা বহন করবে স্বাতন্ত্র্য।
বটল পেন্টিং
বটল পেন্টিং তিন রকম ভাবে করেছেন অনুরাধা, ডেকুপাজ, হ্যান্ডপেন্ট এবং গ্লাসপেন্ট। ডেকুপাজ ও হ্যান্ডপেন্টিং ট্রে-তে যে ভাবে করা হয়েছে, বোতলেও একই পদ্ধতিতে করতে হবে। যদি উপরে দড়ি লাগিয়ে অন্য রকম লুক দিতে চান, তা হলে হার্ডওয়্যারের দোকান থেকে কিনে নিতে হবে মোটা সুতলি। বোতলের মুখে ভাল করে আঠা লাগিয়ে দড়ি বসিয়ে ঘোরাতে থাকলে দড়ি বোতলের গায়ে বসে যাবে। তার পর অ্যাক্রিলিক দিয়ে রং করে, শেষে ল্যাকার। বোতলে গ্লাসপেন্টিং করতে চাইলে ভাল করে বোতল ধুয়ে নিতে হবে, যেন কোনও দাগ না থাকে। থ্রিডি আউটলাইনার দিয়ে ডিজ়াইন করে আউটলাইন করে নিন। সেটা শুকিয়ে গেলে ভিতরে ওয়াটার বেসড গ্লাসপেন্ট দিয়ে রং করতে হবে। পুরোটা একবারে রং করা মুশকিল। কিছুটা অংশ শুকিয়ে গেলে তার পর আবার কিছুটা রং করতে হবে, নয়তো রং গড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ভিতরে কোনও ডিজ়াইন করতে চাইলে, থ্রিডি আউটলাইনার দিয়ে করে নিতে হবে। বোতলে কর্ক লাইট ঢুকিয়ে দিতে পারেন, সুইচ অন করলে আলো জ্বলে উঠবে। দেখতেও লাগবে ভারী সুন্দর, দীপাবলি বা কোনও ঘরোয়া অনুষ্ঠানে।
এ ভাবে অল্প আয়াসে আপনার অন্দর যেমন সেজে উঠবে সুচারু ভাবে, তেমনই থেকে যাবে আপনার স্বাক্ষর।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।