Suicide

হেল্পলাইন নামেই, মানসিক যন্ত্রণা উপশমে অবহেলার অভিযোগ

চিকিৎসকদের মতে, অনেকের মস্তিষ্কের প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্সের নিয়ন্ত্রণ কম থাকে। ঝোঁকের মাথায় আত্মঘাতী হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায় তাঁদের মধ্যেই।

Advertisement

জয়তী রাহা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৮:২৩
Share:

অবসাদগ্রস্ত ব্যক্তি ২০ বারও নিজের ক্ষতির চেষ্টা করেন। প্রতীকী ছবি।

বেশির ভাগ আত্মহত্যার পিছনে একাধিক বারের চেষ্টা থাকে। সমীক্ষায় প্রকাশ, কখনও কখনও অবসাদগ্রস্ত ব্যক্তি ২০ বারও নিজের ক্ষতির চেষ্টা করেন। সেই মানুষটির প্রতি পরিবার, বন্ধু বা প্রতিবেশীর নজর থাকলে, তাঁকে ঠিক সময়ে বাঁচানো সম্ভব। আত্মহত্যা কমাতে ওষুধ এবং মুখোমুখি কাউন্সেলিং ছাড়াও পাশ্চাত্যের দেশগুলি জোর দিচ্ছে হেল্পলাইন নম্বরে। এই পদ্ধতির মূল সুবিধা, যে কোনও সময়ে সাহায্যপ্রার্থীকে পরামর্শ দিতে পারেন চিকিৎসক, মনোবিদ অথবা প্রশিক্ষিত কর্মীরা।

Advertisement

চিকিৎসকদের মতে, অনেকের মস্তিষ্কের প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্সের নিয়ন্ত্রণ কম থাকে। ঝোঁকের মাথায় আত্মঘাতী হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায় তাঁদের মধ্যেই। এ ছাড়া বহু দিন ধরে ভাবনা-চিন্তা করে আত্মঘাতী হওয়ার যে সব ঘটনা ঘটে, সে ক্ষেত্রে ভূমিকা থাকে জিন, অর্থাৎ পারিবারিক ইতিহাস অথবা বায়োলজিক্যাল কারণ থেকে জন্মানো গভীর হতাশার। মস্তিষ্ক-নিঃসৃত সেরোটোনিনের (নিউরো ট্রান্সমিটার) হেরফের মনকে প্রভাবিত করে। চিকিৎসকদের মতে, হতাশায় ডুবে থাকা এমন মানুষদের ক্ষেত্রে ত্রাতা হিসেবে থাকে হেল্পলাইন।

গত মাসে ল্যানসেট, সাইকায়াট্রি জার্নালে প্রকাশিত একটি রিপোর্ট বলছে, আত্মহত্যার সংখ্যার নিরিখে বিশ্বের শীর্ষে ভারত। কিন্তু এই দেশে সেই হেল্পলাইন নম্বর কোথাও রয়েছে নামমাত্র, কোথাও সেই পরিষেবা চলছে অদক্ষ কর্মীদের দিয়ে, কোথাও আবার নম্বরের অস্তিত্বই নেই! অথচ, ঠিক দু’বছর আগে কেন্দ্রীয় সরকার ঘটা করে চালু করেছিল মানসিক স্বাস্থ্য পুনর্বাসনের হেল্পলাইন নম্বর ‘কিরণ’। জাতীয় স্তরে তেমন প্রচেষ্টা সেই প্রথম। কথা ছিল, ইংরেজি, হিন্দি-সহ আঞ্চলিক ভাষায় টোল-ফ্রি নম্বরটি চালু থাকবে ২৪ ঘণ্টা। কিন্তু সকাল, সন্ধ্যা ও রাতে সেখানে স্বয়ংক্রিয় কণ্ঠে মন্ত্রকের প্রচার শোনা গেল। পছন্দ মতো ভাষা চাইলে বাজনা শুনতে শুনতেই কেটে যায় লাইন।

Advertisement

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড নিউরোসায়েন্সেস (নিমহান্স) তাদের একটি মোবাইল হেল্পলাইন নম্বর চালু রাখলেও বেজে গেল টোল-ফ্রি নম্বরটি। মোবাইল হেল্পলাইন নম্বরটিতে ফোন করে জানা গেল, সকাল ন’টা থেকে বিকেল চারটের মধ্যে ইংরেজি, হিন্দি এবং দক্ষিণ ভারতীয় আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলা যাবে। সরকারি ছুটির দিনে ওই নম্বর বন্ধ থাকে। কলকাতার দু’টি বেসরকারি হেল্পলাইন নম্বরের একটিতে রাত-দিন পরিষেবা দেওয়ার কথা বলা হলেও কেউ ফোন তুললেন না। অন্যটির সময় সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টে।

কেন এত অবহেলা? আত্মহত্যার ইচ্ছে কি শুধু ব্যস্ত সময়েই আসে? মনোরোগ চিকিৎসক সুজিত সরখেল বলছেন, ‘‘আত্মহত্যা বেশি ঘটে সন্ধ্যা থেকে রাতের মধ্যে। কেন এমন সিদ্ধান্ত, ভাবতে অবাক লাগে। আত্মঘাতীর সংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের প্রথম স্থানে থাকা দেশের কেন্দ্রীয় সরকার যে কোনও হেল্পলাইন নম্বর চালু করেছে, সেটাই আমাদের জানা নেই। তা হলে রোগীরা জানবেন কী ভাবে? কোথাও প্রচারই তো নেই।’’

মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেবের কথায়, ‘‘আত্মহত্যা ঠেকাতে হেল্পলাইনের গুরুত্ব অপরিসীম। চরম মুহূর্তে কোনও অবসাদগ্রস্ত মানুষ অপরিচিতকেই তাঁর মনের কথা বলতে পারেন। অথচ, এ দেশে যথাযথ সেই ব্যবস্থা নেই। এই না-থাকার শিকড় অনেক গভীরে। ভারতে জনসংখ্যার তুলনায় প্রশিক্ষিত মনোবিদ অপ্রতুল। মূল সমস্যা সেটাই। তা দূর করতে সরকারকে আরও অনেক কোর্স চালু করতে হবে। অনেক বেশি মানুষকে এই পেশায় টানতে হবে। না-হলে হেল্পলাইন ব্যবস্থা কোনও দিনই সফল হবে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement