Coronavirus

করোনা ভাইরাস কি শক্তি হারাচ্ছে? জল্পনায় জল ঢাললেন চিকিৎসকরা

নভেল করোনা ভাইরাস ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে? ভারতীয়দের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সঙ্গে যুঝতে গিয়ে পিছু হঠছে?

Advertisement

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২০ ১৩:২৫
Share:

ফাইল ছবি।

নভেল করোনা ভাইরাসের দাপট বাড়ছে। নিত্যদিনই বেড়ে চলেছে আক্রান্তের সংখ্যা। ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধ করতে নতুন করে লকডাউন শুরু হলেও চিকিৎসকদের মধ্যে কিছুটা আশা জেগেছে। অতি সম্প্রতি এক রাজনীতিবিদ অভিনেত্রী এক সপ্তাহের মধ্যেই কোভিড-১৯ মুক্ত হয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরলেন।

Advertisement

নভেল করোনা ভাইরাস ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে? নাকি ভারতীয়দের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সঙ্গে যুঝতে গিয়ে পিছু হঠছে? এই প্রসঙ্গে হার্ট সার্জন কুণাল সরকার জানালেন, ''কয়েকটা ঘটনা দেখে এই বিষয়টি জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। তবে মহামারির ইতিহাস পড়লে জানা যায় যে কয়েক মাস দাপিয়ে মানুষকে আক্রমণ করার পর জীবাণুদের মারাত্মক ক্ষমতার সঙ্গে আমাদের শরীর কিছুটা আপস করে নেওয়ায় মৃত্যুর হার কমে।'' কুণাল বাবু বললেন, ''মহামারি সৃষ্টিকারী ভাইরাসের ক্ষমতাকে খাটো করে দেখলে নিয়ম-কানুন ডকে তুলে দিতে হবে।''

ফুসফুস বিশেষজ্ঞ অশোক সেনগুপ্তর মত, ‘’এখনই কোভিড-১৯ ভাইরাসের ক্ষমতা যাচাই করার সময় আসেনি। আরও সপ্তাহ খানেক গেলে ব্যাপারটা সম্পর্কে কিছুটা আঁচ পাওয়া যেতে পারে। অশোক বাবুর মত, মার্চ-এপ্রিল মাসে কোভিড ১৯ নামের এই সদ্য চেনা ভাইরাসকে নিয়ে আমরা চিকিৎসকরা যে রকম দিশাহারা ছিলাম, এখন সেই পরিস্থিতি আর নেই। ভাইরাসটির চরিত্রের মারাত্মক দিক ফুসফুসকে বিকল করে দেওয়া, তাই সংক্রমণের শুরুর দিকে অতিমারি ছড়িয়ে পড়ার সময় ভেন্টিলেটরে ভরসা করা ছাড়া আমাদের হাতে বিশেষ কোনও অস্ত্র ছিল না।‘’

Advertisement

আরও পড়ুন: কোভিড হানা কমেনি, বর্ষায় ঘরবাড়ি পরিষ্কার করতে এ সব বাড়তি সতর্কতা নিতেই হবে​

কোভিডে মৃতের শব ব্যবচ্ছেদ করে শ্বাস জালিকায় রক্ত জমাট বাঁধার ব্যাপারটা জানার পর আক্রান্তকে রক্ত তরল করার ওষুধ দিয়ে শ্বাস কষ্টের সমস্যা অনেকাংশেই প্রতিরোধ করা যাচ্ছে বলে জানালেন অশোক সেনগুপ্ত। ‘‘যাঁদের অন্যান্য ক্রনিক অসুখ নেই এবং বয়স কম, তাঁদের কোভিড ১৯ সংক্রমণের উপসর্গ হিসেবে জ্বর, কাশি ও অল্প গা হাত পা ব্যথার সমস্যা হতে পারে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে করোনাকে আমরা হালকা ভাবে নেব,’’ এমনই বলেন ইন্টারনাল মেডিসিনের চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস। ভাইরাস ক্ষমতা হারাচ্ছে কি না তা নিশ্চিত ভাবে বলার আগে অনেক গবেষণা ও তথ্য বিশ্লেষণ করা আবশ্যক বলে মনে করেন অরিন্দম বাবু।

আরও পড়ুন: ভিড় এড়িয়ে চলুন, বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে করোনা, সতর্কতা হু-র​

এখনই ভাইরাসের ক্ষমতা কমে গেছে বললে সাধারণ মানুষ সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি শিকেয় তুলে দিলে সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে অরিন্দম বিশ্বাস এও জানান, ‘‘যাঁদের কো-মর্বিডিটি অর্থাৎ উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবিটিস, ক্রনিক কিডনির অসুখ বা হার্টের অসুখ আছে এবং বয়স ৬০ বছরের বেশি, তাঁদের এই ভাইরাসের সংক্রমণ হলে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে এবং প্রাণহানির আশঙ্কা থাকে।’’

অতিমারির জন্য দায়ী কোভিড-১৯ ভাইরাসের মারাত্মক ক্ষমতা কিছুটা কমেছে কি? এই প্রসঙ্গে কুণাল সরকার জানান, বিগত এক হাজার বছরে যত অতিমারি বা মহামারি হয়েছে, প্রথমদিকে তার ভয়ানক দাপট বজায় থাকে, মানুষও মারা পড়ে। কিন্তু ধীরে ধীরে ভাইরাস কিছুটা কমজোর হয়ে পড়ে, আবার মানুষের শরীর ভাইরাসের বিরুদ্ধে কিছুটা প্রতিরোধ তৈরি করে। যদিও এখনও এবিষয়ে নিশ্চিত ভাবে কিছুই বলার সময় আসেনি তবে হয়তো বা নভেল করোনা ভাইরাস সেই পর্যায়ে পৌঁছতে চলেছে।

আরও পড়ুন: করোনা চিকিৎসায় খানিক আশা জাগাচ্ছে চেনা এই সব ওষুধ​

কুণাল বাবু বলেন, ‘‘কোভিড ১৯ অতিমারির শুরুতে চিকিৎসকরা কী করবেন বুঝে ওঠার আগেই হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছিলেন ও মারা পড়ছিলেন। সেই ব্যাপারটা অনেকাংশে কমেছে। ভাইরাসকে দমিয়ে রাখার কিছু অস্ত্রশস্ত্র আমাদের হাতে এসেছে। একই সঙ্গে ভাইরাসও বদলে ফেলছে নিজেদের চরিত্র।’’

অরিন্দম বিশ্বাস জানালেন, ‘‘করোনা সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা আগের থেকে অনেক বেড়েছে। ফলে অল্প স্বল্প উপসর্গ দেখা গেলেই মানুষ চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছেন। এছাড়া মাস্ক ব্যবহারের কারণে ভাইরাস লোড কম থাকায় বেশ কিছু মানুষের উপসর্গ আর পাঁচটা ভাইরাল ফিভারের থেকে বিশেষ বাড়ছে না।’’ তবে প্রত্যেক চিকিৎসকই এই বিষয়ে একমত যে ভাইরাসের ক্ষমতা কমেছে বলে মাস্ক না পরে যত্রতত্র যাওয়া বা ভিড় বাড়ানো একেবারেই অনুচিত। সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার ও নিয়ম মেনে মাস্ক পরার মত সাধারণ স্বাস্থ্য বিধি মেনে চললে নভেল করোনা ভাইরাস ছাড়াও অন্যান্য সংক্রমণও প্রতিরোধ করা সহজ হবে। সুতরাং ভাইরাসকে খাটো করে না দেখে লড়াই বজায় রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement