সামান্য কাজে মোটা অঙ্কের টাকা বেতনের চাকরির প্রস্তাব এলে সাবধান। ছবি: ফ্রিপিক।
ব্যস্ততার ফাঁকে অনলাইনে কয়েক ঘণ্টার কাজ করলেই রয়েছে বিপুল রোজগারের সুযোগ। এমন প্রস্তাব যদি ইমেল, ফোনের মেসেজ বা হোয়াটস্অ্যাপে লাগাতার আসতে থাকে, তা হলে ভুলেও সে ফাঁদে পা দেবেন না। অনলাইনে প্রতারণা করার নিত্য নতুন কৌশল বার করছে সাইবার অপরাধীরা। অনলাইনে বাড়িতে বসে কাজ করলেই মোটা অঙ্কের টাকা বেতন পাওয়া যাবে, এমন প্রস্তাব আসছে বিভিন্ন ওয়েবসাইট, হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপ থেকে। আচমকাই কোনও হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপে না চাইতেই যুক্ত হয়ে যাবেন আপনি। তার পর সেখানে কোনও সংস্থার নাম দিয়ে লাগাতার বিভিন্ন চাকরির প্রস্তাব আসতে থাকবে। খুবই সহজ কাজের প্রস্তাব দিয়ে দিনে হাজার হাজার টাকা রোজগারের প্রলোভন দেখানো হবে। সেই চক্রে পড়ে গেলেই আপনার ফোনের নিয়ন্ত্রণ তো নিয়ে নেবেই অপরাধীরা, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্যও হাতিয়ে লুটে নেবে সর্বস্ব।
সাইবার আইন বিশেষজ্ঞ রাজর্ষি রায়চৌধুরী জানাচ্ছেন, কলকাতা শহর ও তার আশপাশের এলাকায় বহু মানুষ এই অনলাইন চাকরির ফাঁদে পা দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা খুইয়েছেন। অপরাধীরা মূলত বাড়ির মহিলা ও বয়স্কদেরই নিশানা করছে। বিশেষ করে, গৃহবধূ বা অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণদের প্রলোভন দেখিয়ে তাঁদের প্রতারণা করছে। তাই সতর্ক থাকতে কী কী করবেন আর কী নয়, তা জেনে রাখা জরুরি।
অনলাইনে প্রতারণা থেকে বাঁচবেন কী ভাবে?
১) সমাজমাধ্যমের পাতা বা ফোনের মেসেজে, জিমেলে এমন চাকরির প্রস্তাব এলে তা এড়িয়ে যাবেন। যদি কোনও লিঙ্কে ক্লিক করতে বলা হয়, তা হলে ভুলেও তা করবেন না। খেয়াল রাখবেন, সামান্য কাজে প্রচুর বেতন কোনও কোম্পানিই দেয় না। তাই এমন প্রস্তাব ভুয়ো ছাড়া আর কিছুই নয়।
২) হঠাৎ করে যদি দেখেন, অজানা কোনও হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপে আপনাকে জুড়ে নিয়ে সেখানে নানা প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে, কোনও আবেদনপত্র পূরণ করে তার স্ক্রিনশট পাঠাতে বলছে, তা হলে সাবধান। যত দ্রুত সম্ভব সেই গ্রুপ থেকে বেরিয়ে যান।
৩) ফোনে বা জিমেলে চাকরির বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেই ‘স্পাইঅয়্যার’ বা ‘ম্যালঅয়্যার’ পাঠায় প্রতারকেরা। রাজর্ষির কথায়, ওই সব লিঙ্কে ক্লিক করলেই এমন সফট্অয়্যার ইনস্টল হয়ে যাবে আপনার ফোনে, যা যাবতীয় ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেবে। এমনকি, আপনার ফোনের নিয়ন্ত্রণও চলে যাবে প্রতারকদের হাতে।
৪) বাড়ি বসে বিভিন্ন হোটেল বা রেস্তরাঁর রিভিউ লিখেই দিনে ৫ হাজার টাকা অবধি আয় করুন— এমন প্রস্তাব এলে জানবেন তা ভুয়ো। হয়তো টেলিগ্রামের কোনও গ্রুপে আপনাকে জুড়ে নেওয়া হবে যেখানে আরও অনেক মেম্বারকে দেখতে পাবেন। জানবেন, সেগুলি সবই ভুয়ো নম্বর। যদি কোনও অ্যাপ ডাউনলোড করতে বলা হয়, তা হলে কখনওই তা করবেন না।
৫) প্রতারকেরা যদি আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত তথ্য চায় অথবা আপনাকে কিছু টাকা গচ্ছিত রাখতে বলে, তা হলে সেই ফাঁদে পড়বেন না। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য অথবা ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের তথ্য দিলেই নিমেষে অ্যাকাউন্ট ফাঁকা হয়ে যাবে।
৬) কোনও ভুয়ো গ্রুপে জুড়ে গিয়ে যদি কাজের প্রস্তাবে সম্মতি দিয়ে ফেলেন, পরে ভুল বুঝতে পেরে গ্রুপ ছেড়ে বেরিয়ে আসার সময়ে হয়তো আপনাকে হুমকি দেওয়া হতে পারে। তা হলেও ভয় পাবেন না। প্রতারকদের নির্দেশে কোনও কাজ করবেন না। প্রয়োজনে পুলিশ ও সাইবার বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিন।