প্রকৃতি জানান দিচ্ছে, শীতকাল আসতে বেশি দেরি নেই।
এই শরতেই সকালে ঘুম থেকে উঠলে দিব্যি টের পাওয়া যাচ্ছে ঠান্ডা হাওয়ার শিরশিরানি। প্রকৃতি জানান দিচ্ছে, শীত আসতে বেশি দেরি নেই। তবে শীত মানে শুধুই পাতা ঝরে যাওয়ার সময় নয়। বরং থোকা থোকা ফুটে থাকা গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা, ডালিয়ার শোভাই আলাদা। কিন্তু শীতকালীন রঙিন ফুলের সাজে নিজের বাগান মাতিয়ে তুলতে চাইলে শুরুটা করুন এখন। অক্টোবরের মাঝামাঝিই পুঁততে হবে এই ধরনের গাছ। তবেই শীতকালে গিয়ে তারা সেজে উঠবে ফুলে।
গাঁদার বাহার
গাঁদা গাছ খুব বেশি লম্বা হয় না। সূর্যের জোরালো আলোয় এদের ফলন ভাল হয়। দিনে অন্তত পাঁচ-ছ’ঘণ্টা সূর্যের আলো দরকার। গাঁদার বীজ পুঁততে হবে গরম চলে যেতে শুরু করলেই। যদি অক্টোবর মাসের শেষে বীজ পোঁতা হয়, তা হলে গাছে ফুল ধরবে ডিসেম্বর নাগাদ। মাটিতে সরাসরি বীজ পুঁতলেই চলে। সে ক্ষেত্রে বীজ থেকে আঙুলের দু’কর লম্বা চারা জন্মাতে সময় লাগে প্রায় এক সপ্তাহ। তবে খেয়াল রাখতে হবে, কোনও ভাবেই যেন মাটিতে জল না দাঁড়ায়। দোআঁশ, এঁটেল, বেলে দো-আঁশ বা পলি মাটিতে গাঁদা ভাল হয়। একটি গাছে প্রতি মরসুমে প্রায় ১২৫ থেকে ১৩৫ দিন সজীব থাকে। আর তাতে ফুল ধরে প্রায় ৬০-৭০ দিন। ফুল ফোটার দু’-তিন দিন পরেই তা তুলে ফেলা উচিত। ভোর কিংবা বিকেলে ডাঁটা-সহ ফুল তুলতে হবে। ফাঙ্গাল ইনফেকশন থেকে বাঁচাতে গাছে নিম অয়েল স্প্রে করতে পারেন। গাঁদা গাছের জন্য চারা কিনে এনেও পুঁততে পারেন। সারা বছরই গাঁদা চাষ করা হলেও শীতকালেই গাঁদা ফুলের ফলন হয় বেশি।
চন্দ্রমল্লিকার চাঁদোয়া
চন্দ্রমল্লিকার সৌন্দর্য বরাবরই নজরকাড়া। একাধিক রঙের মিশেল দেখা গেলেও একই রঙের তিন ধরনের শেডের চন্দ্রমল্লিকা চোখে পড়ে বেশি। একটানা অনেক গাছ একসঙ্গে লাগিয়ে ফ্লাওয়ার বেড তৈরি করলে দেখতে ভাল লাগে। তবে ফ্লাওয়ার বেড তৈরি করতে দু’টি গাছের মধ্যে ৪৫ সেন্টিমিটার দূরত্ব রাখা বাঞ্ছনীয়। আর জায়গা কম থাকলে টবে একটি করেও লাগানো যেতে পারে চন্দ্রমল্লিকা গাছ। রাতে যখন তাপমাত্রা ২০-২৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে ঘোরাফেরা করে, সেই সব দিন হল এই গাছ পোঁতার আদর্শ সময়। কুঁড়ি থেকে ফুল বড় হতে সময় লাগে ৫০-৬২ দিন। তবে ফুলের ফলন ভাল করার জন্য সম পরিমাণে মাটি এবং গোবর সার মিশিয়ে নিতে পারেন। চন্দ্রমল্লিকা বেড়ে ওঠার জন্য সূর্যের সরাসরি আলো ও তাপমাত্রা প্রয়োজন। তবে টব বা বেডে জলনিকাশির সুব্যবস্থা থাকা দরকার। রোজ অল্প জল দিতে পারেন। মাটিতে জল জমলে চলবে না। কাটিং পদ্ধতিতে চন্দ্রমল্লিকা চাষ করতে চাইলে আবার শীতের শেষ থেকেই করতে হবে সংরক্ষণ।
ডালিয়ার আদর
বাগানে শত ফুলগাছ থাকলেও একটি মাত্র ডালিয়া আলাদা করে নজরে পড়ে শুধু মাত্র তার সৌন্দর্যের জন্য। সাধারণত সামান্য অ্যাসিডিক মাটিতে ভাল জন্মায় ডালিয়া। তাই নার্সারি থেকে বলে ডালিয়ার জন্য আলাদা মাটি কিনতে পারেন। সাধারণত গ্রন্থি কন্দ থেকে ডালিয়ার চাষ করা হয়। যত বেশি আলো পাওয়া যায়, ততই ভাল। সরাসরি সূর্যের আলোয় সাত-আট ঘণ্টা থাকলে ডালিয়ার ফুলের রূপ ফোটে আরও। ডালিয়ার জন্য দরকার প্রচুর পরিমাণ জলের। কিন্তু তা যেন গাছের গোড়ায় জমে না থাকে। একটি গাছে বড় কুঁড়ির নীচে সাধারণত দু’টি ছোট কুঁড়ি আসে। বড় কুঁড়ি থেকে বড় ফুল পেতে চাইলে নীচের ছোট কুঁড়ি দু’টি ছেঁটে ফেলতে হবে। তবেই বড় ফুল পাওয়া যাবে। একক, স্টার, এনিমোনি, পিওনি, কলিরেটি, ফ্যান্সি... ডালিয়ার ধরন নানা রকম।
গাঁদা, ডালিয়া হোক বা চন্দ্রমল্লিকা... নিখাদ ভালবাসা থাকলে গাছ বেড়ে উঠবে তরতরিয়ে। আর আসন্ন শীতে ডালপালা মেলে তাদের রঙিন ফুলও ফিরিয়ে দেবে ভালবাসা। আপনার বাড়িও সেজে উঠবে ফুলের রঙে।