চিঠিতে পাণ্ডিত্য ফলানো যেত। সাবাশি দিয়ে লোকে তার জবাবও দিত।
কিন্তু ইমেলে পাণ্ডিত্য ফলালে, ‘এই আমার একটু বিদ্যে-টিদ্যে আছে’, তা বোঝাতে গেলে খুব একটা পাত্তা পাওয়া যায় না। জবাবই আসে না সেই সব ইমেলের।
আগে আমরা হাপিত্যেশ অপেক্ষায় থাকতাম চিঠির জবাবের জন্য।
সেই দিন বদলেছে।এখন আমরা ইমেলের জবাবের জন্য থাকি অনন্ত প্রতীক্ষায়! বেশির ভাগ ইমেলেরই কোনও জবাব আসে না।
চিঠির জবাব আসাটা না হয় অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করত। কেউ জবাব দিলেও, পোস্ট অফিস বা পোস্টম্যানের গাফিলতি, ভুল ঠিকানা লেখা, চিঠি হারিয়ে, ছিঁড়ে বা ভিজে যাওয়া- এই সব নানা কারণে পোস্টকার্ড বা ইনল্যান্ড লেটার অনেক সময়েই প্রাপকের কাছে পৌঁছতো না।
আরও পড়ুন- জানেন কি নামার সময় বিমানের আলো কেন নেভানো হয়?
কিন্তু ইমেলে জবাব পেতে সেই সব হ্যাপা নেই। বৃষ্টি-বাদল, শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা, সব ঋতুতেই ইমেল যেতে-আসতে পারে, বাধাহীন ভাবে। কোনও সংস্থা, সংগঠন বা কোনও ব্যক্তি বিশেষের গাফিলতির ওপর ইমেলের জবাব আসাটা নির্ভর করে না। তা সত্ত্বেও, দেখা যাচ্ছে, বেশির ভাগ ইমেলের জবাব আসে না।
কেন আসে না সেই জবাব?
‘ব্যুমেরাং মেল’ নামে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার সমীক্ষা জানাচ্ছে, আমরা আসলে ঠিকঠাক ভাবে ইমেল করতেই জানি না। ইমেল কী ভাবে লিখতে হয়, সেটাই জানি না আমরা। তাই বেশির ভাগ ইমেলেরই জবাব আসে না। এলেও, তা আসে অনেক দেরি করে। বলা যেতে পারে, অনিচ্ছার দায়সারা জবাব।
তা হলে কী ভাবে লিখলে ইমেলের জবাব আসবে তড়িঘড়ি?
ওই আন্তর্জাতিক সংস্থাটি তার মোটামুটি ছয় রকম উপায় বাতলেছে।
এক, খুব ছোট ছোট বাক্য লেখা দরকার ইমেলে। বড়জোর ৬/৭ টা শব্দের বাক্য। বেশি হলে ১০। কিন্তু তার বেশি কখনওই নয়। খুব সহজবোধ্য শব্দ লেখা উচিত ইমেলে। কাব্য বা দর্শন-চর্চা না করলেই ভাল। বিদ্যে-বুদ্ধি খুব একটা নেই, এটা বোঝাতে পারলেই সবচেয়ে ভাল হয়।
দুই, ইমেলে তিনটের বেশি প্রশ্ন না পাঠালেই সবচেয়ে ভাল হয়। দুটো প্রশ্ন পাঠালে জবাব আসে সবচেয়ে বেশি আর সবচেয়ে দ্রুত।
তিন, মেল পাঠানোর সময় খেয়াল রাখা উচিত যাতে সাবজেক্ট লাইন ফাঁকা না থেকে যায়। শুধুই টেক্সটে লিখলেন আর সাবজেক্ট লাইন ফাঁকা থেকে গেল, তাতে জবাব তেমন আসবে না। আর সাবজেক্ট লাইনে, ভুলেও তিন/চারটি শব্দের বেশি লিখবেন না।
চার, ইমেল পাঠিয়ে জবাব পেতে চাইলে কখনওই ‘শ্রীনিরপেক্ষ’ হয়ে লিখবেন না। হয় প্রশংসা করুন বা নিন্দে-সমালোচনা। কোনওটাই বেশি করে বসবেন না। রেখে-ঢেকে করবেন। মেলটা একটু আবেগে ভিজিয়ে রাখবেন।
পাঁচ, খুব বেশি তত্ত্ব বা মতাদর্শের কথা লিখবেন না। অমুকে ওটা বলেছেন, তমুকে সেটা বলেছেন, এটা রুজভেল্টের বা ওটা গাঁধীর ‘কোটস’, এ সব যতটা সম্ভব কম লিখবেন। বরং নিজের মতামতটা সব সময় জানানোর চেষ্টা করুন। তা সে ভুল হোক আর ঠিক। হোক না ভুল। দেখবেন সেটা শুধরে দিতে সঙ্গে সঙ্গে মেলের জবাব এসে যাবে! আর ‘ঠিক’টাও তো পুরোদস্তুর ঠিক হবে না, কারণ আমরা সব সময়েই খুঁত ধরতে ভালবাসি। কিছু না কিছু খুঁত বের করে লোকে ঠিক জবাব দেবেই!
ছয়, বেশি বকবক করা ভাল নয়। ৫০ থেকে ১২৫ শব্দের বেশি লিখলে জবাব পাওয়ার অতটা আশা করবেন না।