বৈষ্ণবরা তো নিরামিষ রান্নায় পোক্ত। শাক্তদের থেকে তাদের রান্নার ঘরানা আলাদা। বৈষ্ণবদের নিরামিষ রান্নায় ঘি আর মধুর বিশেষ ব্যবহার চোখে পড়ে। তেমন নির্ভেজাল ঘি আর মধুর ব্যবহারে রসনা নানা ভাবে তৃপ্ত। তবে কি না রান্নার জগৎ তো কেবল জিভের জগৎ নয়, মনেরও জগৎ। সেই মনের কথা বোঝাতে রান্নাঘরের মাল-মশলা অনুপানের তুলনা কখনও কখনও বড়ো লাগসই। বৈষ্ণব রস তাত্ত্বিকেরা মনের কথা বোঝাতে সেই সব উপাদানের রূপ-স্বরূপকে কাজে লাগিয়েছেন। বলেন তাঁরা, স্নেহ দু’রকম— ঘৃত স্নেহ আর মধু স্নেহ। ঘৃত স্নেহ শ্রেষ্ঠ নয়। আঙুলে ঘি বোলালে একটু কচকচ করে, দানা দানা লাগে। ওই দানাটা হচ্ছে স্বার্থ, অহং। যাকে স্নেহ করছে, ভালবাসছে তাকে পুরোটা দিচ্ছে না। প্রেমের কাছে নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছে না। আর মধু স্নেহ? তার শ্রেষ্ঠতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার উপায় নেই। মধু বড় মোলায়েম, মধুতে দানা নেই—মধু স্নেহেও অহং নেই, স্বার্থ নেই। মধু স্নেহ হল পরমধন । ওই যে রাধার সব কিছুই কৃষ্ণের জন্য, কৃষ্ণেন্দ্রিয় প্রীতির জন্য। শুনতে ভাল, তবে কি না এমন প্রেম বাস্তবে মেলে না যে। মাঝে মাঝে মনে হয় না-মেলাই বুঝি ভাল। বনমালীরা বড্ড গোলমেলে, নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া এই যে নিবেদন তার যোগ্য কি সে পুরুষ! রাধার কুঞ্জে যখন এল তখন কৃষ্ণের বুকে অন্য রমণীর চিহ্ন। বৈষ্ণবী বললে, ‘ভাল না বেসে পারি না যে।’ রান্নায় দেওয়া ফোড়নের ধোঁয়ায় তার দু’চোখ ভরে চোখে তখন জল এসেছে।