—প্রতীকী চিত্র।
ফল একেবারেই মুখে তুলতে চায় না আর্য। হাজার বকুনিতেও লাভ হয় না। কিন্তু ফল খাওয়া তো জরুরি... উপায় কী? এ দিকে দিনভর পরিমাণ মতো জল না খাওয়ায় মাঝেমধ্যেই ডিহাইড্রেশনের সমস্যায় ভোগে সোনু। জল খেতে ভাল লাগে না ওর আর চা, কফি, নরম পানীয় সারাদিনে কতই বা খাওয়া যায়! এ সব সমস্যার হাত থেকে মুক্তির সহজ উপায় ‘ইনফিউজ়ড ওয়াটার’। স্বাস্থ্যসচেতনদের কাছেও এখন নতুন ট্রেন্ড এই ‘ফ্রুট ইনফিউজ়ড ওয়াটার’। বিষয়টা নতুন কিছু নয়। শুধু জল না খেয়ে এ ক্ষেত্রে জলে কিছু ভেষজ বা ফল, আনাজ ভিজিয়ে খাওয়া হয়। পোশাকি ভাষায় একে ডিটক্স ওয়াটারও বলা হয়ে থাকে। মিক্সার বা গ্রাইন্ডার ব্যবহার না করে বাড়িতেই সহজে তৈরি করা যায় ফলজারিত জল৷ কিন্তু আদতে এই জল কি শরীরের জন্য উপকারী?
জলে ইচ্ছেমতো বিভিন্ন রকম ফল, সবজি ও হার্বসের ফ্লেভার মেশালেই তৈরি হয়ে যায় ইনফিউজ়ড ওয়াটার। পুষ্টিবিদ কোয়েল পাল চৌধুরী বলছেন, “খালি পেটে জল আর ভরা পেটে ফল খাওয়ার রেওয়াজ বহু দিনের। ফল ভাল করে ধুয়ে কেটে খেলেই চলে। কিন্তু ফলের মধ্যে থাকা বিভিন্ন অ্যাসিড এবং যৌগগুলি যথেষ্ট সক্রিয় অবস্থায় থাকায়, অনেক সময়েই শরীরের জন্য স্বাস্থ্যকর নাও হতে পারে। সে জন্যই ফল ভিজিয়ে রেখে সেই জল খাওয়া উপকারী।”
কী ভাবে বানাবেন?
ইনফিউজ়ড ওয়াটার বানানো কিন্তু সহজ। একটি কাচের বোতল বা বড় মুখওয়ালা পাত্রে জলের সঙ্গে পছন্দমতো ফল-আনাজের টুকরো করে ভরে পাত্রের মুখ বন্ধ করে কয়েক ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখলেই জলে মিশবে ফল বা আনাজের গুণাগুণ। মূলত আপেল, শসা, কমলালেবু, স্ট্রবেরি, কিউয়ি, বেদানা, ন্যাসপাতি, প্লাম ইত্যাদি যে কোনও ধরনের ফলই ব্যবহার করা যায়। আনাজের মধ্যে গাজর, টম্যাটো, আদা ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন। সঙ্গে কয়েক টুকরো দারুচিনি, লবঙ্গ, স্টার অ্যানিসের মতো মশলাও জলে মিশিয়ে দিতে পারেন। অনেকে অবশ্য চিয়া সিডস, ফ্লাক্সসিডস ইত্যাদি হার্বসও মিশিয়ে থাকেন। আজকাল অনেক রেস্তরাঁয়ও রোজ়মেরি মিশ্রিত জল পরিবেশন করা হয়। নানা ধরনের নরম পানীয় কিংবা শরবত যারা ভালবাসেন, নিঃসন্দেহে তাঁদের পছন্দ হবে এই জলের স্বাদ।
উপকার কী কী?
কোয়েলের মতে, খুব খিদে পেলে ভাজাভুজি বা মশলাদার খাবার না খেয়ে, এক গ্লাস সুগন্ধি এই জল খেতে পারেন। এতে শরীরে জলের চাহিদা যেমন মিটবে, তেমনই ফলের পুষ্টিগুণের উপকার মিলবে। চা, কফির বদলে এক গ্লাস ইনফিউজ়ড ওয়াটার দিয়ে দিন শুরু করতেই পারেন। বেরি জাতীয় ফল অ্যান্টি অক্সিড্যান্টে ভরপুর৷ লেবু জাতীয় ফলে থাকে ভিটামিন সি। ফলে ইনফিউজ়ড ওয়াটার সহজে শরীরে সে সমস্ত চাহিদা পূরণ করতে পারে।
ফলে সব মিলিয়ে ভাল থাকবে ব্যক্তির মনমেজাজও।
সতর্ক থাকবেন
ডিটক্স ওয়াটার কিন্তু আদতে শরীরকে ডিটক্স করে না, শরীরের ডিটক্সিফিকেশনকে নির্বিঘ্নে হতে সাহায্য করে। তাই ইনফিউজ়ড ওয়াটার খাওয়া যেমন ভাল, তেমন আবার এতে যদি বরফ বা কোনও বাড়তি ফ্লেভার, অতিরিক্ত চিনি মেশানো হয় তা কিন্তু শরীরের জন্য খারাপ। এতে ফল, আনাজের নিজস্ব গুণ নষ্ট হয় এবং ডিটক্স ওয়াটার পানে যে উপকার তা-ও মেলে না। তাই কোনও কাফে বা রেস্তরাঁয় ইনফিউজ়ড ওয়াটার খাওয়ার আগে সতর্ক থাকুন।
কোয়েল বলছেন, আদতে কিন্তু আস্ত ফল বা আনাজ খাওয়া বেশি পুষ্টিকর। ইনফিউজ়ড ওয়াটারে জল খাওয়ার উপকারিতা অনেকাংশেই কমে যায়। তবে গরমে শরীরে পর্যাপ্ত জলের চাহিদা বজায় রাখতে এবং বিভিন্ন ঠান্ডা নরম পানীয়ের চেয়ে অনেকাংশে বেশি উপকারী এই ইনফিউজ়ড ওয়াটার।
মডেল: সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়;
ছবি: অমিত দাস