শৈলীতে ধরা ঐতিহ্য

দেশের নানা প্রান্তের ঐতিহ্যবাহী নকশা ধরা পড়েছে কনটেম্পোরারি শৈলীতে। সম্প্রতি কলকাতায় আয়োজিত এক ফ্যাশন টুরের ঝলকফ্যাশনের চলতি ট্রেন্ড এবং আধুনিক যাপনে কী ভাবে মিলিয়ে দেওয়া যায় এ দেশের চিরায়ত কৃষ্টি-সংস্কৃতি আর শিল্পশৈলীকে, তা নিয়ে বরাবরই এক্সপেরিমেন্ট করে থাকেন অনামিকা।

Advertisement

সায়নী ঘটক

শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:০১
Share:

শো-স্টপার অর্জুন-জাহ্নবী

দেশের নানা প্রান্তের যা কিছু স্বতন্ত্র, সেই শিল্পরীতিকে নিজের সাম্প্রতিক কালেকশনে তুলে ধরেছেন ফ্যাশন ডিজ়াইনার অনামিকা খন্না। কলকাতায় আয়োজিত ফ্যাশন টুরে প্রদর্শিত হল তাঁর কালেকশন। ডিজ়াইনে অনামিকার ‘ইন্ডিজেনাস টাচ’ যথার্থ ভাবেই তুলে ধরেছে শোয়ের থিম— ‘মাই ক্রাফ্‌ট, মাই প্রাইড’। তাঁর শো-স্টপার হয়ে রয়্যাল ক্যালকাটা গল্‌ফ ক্লাবের র‌্যাম্প মাতালেন জাহ্নবী কপূর ও অর্জুন কপূর।

Advertisement

ফ্যাশনের চলতি ট্রেন্ড এবং আধুনিক যাপনে কী ভাবে মিলিয়ে দেওয়া যায় এ দেশের চিরায়ত কৃষ্টি-সংস্কৃতি আর শিল্পশৈলীকে, তা নিয়ে বরাবরই এক্সপেরিমেন্ট করে থাকেন অনামিকা। এ বারের কালেকশনেও ধরা পড়ল সেই একই চিত্রণ। সাদা-কালো র‌্যাম্পের মাঝে পিরামিডসদৃশ স্ট্রাকচারে যেন ম্যাজিক রিয়্যালিজ়মের স্পর্শ। রয়েছে মুখোশের অন্তরাল ছিঁড়ে বেরোতে চাওয়া আদিম সভ্যতার ছোঁয়াও। এ ভাবেই সাজানো মঞ্চে একের পর এক প্রদর্শিত হল অনামিকার কালেকশন। এথনিক অথচ সমান তালে কনটেম্পোরারিও। মেন’সওয়্যার নিয়ে সম্প্রতি কাজ শুরু করেছেন অনামিকা। তার প্রথম প্রদর্শন হল এই মঞ্চেই। মেয়েদের অঁসম্বলে উঠে এল রাফ্‌লস, প্লিটস, লেয়ারস, ট্রেল এবং কেপ। সেই সঙ্গে ডিটেলড এমব্রয়ডারি।

প্রথম পর্ব সাজানো ছিল হোয়াইট অন হোয়াইট কালেকশনে। সাদা সাটিন, সিল্ক, কটনের বেসে সামঞ্জস্য এনে দিয়েছে লেস, অরগ্যানজ়া এবং টিউলের বাহার। মেয়েদের কালেকশনের বিভিন্ন পোশাকেই সঙ্গত করেছে জ্যাকেট, কেপ কিংবা কাফতান। সাধারণ পোশাকে ব্রেক আনা হয়েছে রাফ্‌লসে। ডাবল সাইডেড ব্রেডের সঙ্গে অ্যাকসেসরি হিসেবে ছিল অনামিকার সিগনেচার স্টেটমেন্ট ইয়ারিং। ছেলেদের কালেকশনে নজর কাড়ল অল হোয়াইট বম্বার এবং মোনোক্রোম প্রিন্টেড জ্যাকেট।

Advertisement

দ্বিতীয় পর্ব চোখ ধাঁধিয়ে দিল প্রিন্টের রকমফেরে। প্রিন্ট অন প্রিন্ট কালেকশনের পালাজ়ো, শরারা, স্লিটেড স্কার্টে চোখে পড়ার মতো লাল-কালো ফ্লোরাল মোটিফ ও অ্যাপ্লিক ওয়র্ক। প্রিন্টের মধ্যে ব্যবহার রয়েছে সনাতনী অজরখ, শিবোরি, কাঁথা, জ়ারদৌসির। অবশ্যই কনটেম্পোরারি উপস্থাপনায়। এই বিভাগে সাদা-কালোর একঘেয়েমি ভেঙে দিয়েছে ডিজ়াইনে লাল-কালো, ফুশিয়া, এমারেল্ড-সহ অন্যান্য মেটালিক রঙের আধিক্য। মেয়েদের সেকশনে নজরে এল কাঁচুলি-ঘাগরার ট্র্যাডিশনাল ওয়্যারের উপরে অফ দ্য শোল্ডার জ্যাকেটের কম্বিনেশন। অ্যাকসেসরিতে মোবাইল কেস বা ট্রাইবাল এমব্রয়ডার্ড পিসের ইয়ারিং। মেন’স সেকশনে চেকার্ড জ়েন প্যান্টস আর হোয়াইট স্নিকার্সের সঙ্গে দেখা গেল হোয়াইট প্রিন্টেড বন্ধগলা জ্যাকেটের কম্বিনেশন।

শোয়ের শেষ পর্বে ছেলেদের জ্যাকেটে কাঁথার ডিটেলড এমব্রয়ডারি যেমন জমকালো, ততটাই ক্যাজ়ুয়াল রাখা হয়েছে লুক। একই কাঁথার কাজ মেয়েদের লং স্লিভ বাস্টিয়ার ও স্কার্টেও, যার সঙ্গে লেয়ার করা নর্থ-ইস্ট প্যাটার্নের কাফতান। এই কম্বিনেশনেই মঞ্চে এলেন শো-স্টপাররা। জাহ্নবীর অ্যাসিমেট্রিক্যাল মাল্টিকালার্ড লং ড্রেস ও কাঁচুলিতে ট্র্যাডিশনাল-ট্রাইবাল টাচ। অর্জুন এলেন কাঁথার কাজ করা লং ট্রেঞ্চে। ভাই-বোনের জৌলুসময় উপস্থিতি ধাঁধিয়ে দিল ফ্যাশনের মঞ্চ।

দেশীয় কারিগরদের চিরকালীন টেকনিক ব্যবহার করে কালেকশন সাজিয়েছেন অনামিকা। যার প্রতি পরতে স্পষ্ট শিকড়ে ফেরার বার্তা।

ছবি: সন্দীপ দাস

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement