Japanese System Geido

কর্মক্ষেত্রে সেরা হতে চান? মাত্র ৩ ধাপ, জাপানি পদ্ধতি মেনে চললেই সাফল্যের পথ সহজ হবে

পশ্চিমি ধারণা ‘জন্মগত প্রতিভা’র ঠিক উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে ‘গেইদো’। এই পদ্ধতির মূলমন্ত্র, সহজাত দক্ষতা বলে কিছু হয় না। জন্মগত ভাবে কোনও কিছুই অর্জন করা যায় না।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২৫ ১৬:৩১
Share:

‘গেইদো’র তত্ত্ব অনুসারে, দক্ষতা প্রতিভার উপর নির্ভর করে না, বরং প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়ার উপর নির্ভর করে। ছবি: সংগৃহীত।

আপনি কি আপনার কাজে সেরা? নাকি কেবল ‘ভাল’ শুনেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়? সেরা হতে কে না চায়! আপনিও যদি ‘ভাল’ থেকে ‘সেরা’র দিকে যাত্রা করতে চান, তা হলে জাপানের একটি সহজ উপায় মেনে চলতে পারেন। চিত্রকলা, মার্শাল আর্ট, সঙ্গীত, এমনকি ব্যবসাতেও দক্ষতা অর্জনের জন্য শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে জাপান তার বাসিন্দাদের ‘গেইদো’র প্রশিক্ষণ দিয়েছে।

Advertisement

কী এই গেইদো’?

৭০০ বছর প্রাচীন এই উপায়ের হাত ধরে যে কোনও শিল্পে দক্ষতা অর্জন সম্ভব বলে মনে করা হয়। ‘গেইদো’ আসলে কাঠামোগত একটি পথ, যা সেরা হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ধাপগুলির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। পশ্চিমি ধারণা ‘জন্মগত প্রতিভা’র ঠিক উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে ‘গেইদো’। এই পদ্ধতির মূলমন্ত্র, সহজাত দক্ষতা বলে কিছু হয় না। জন্মগত ভাবে কোনও কিছুই অর্জন করা যায় না। সুশৃঙ্খল, নিয়ম, নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়েই কেবল সেরা হওয়া যায়। কেবল শিল্পকলা নয়, জীবনের যে কোনও কাজের দক্ষতার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যেতে পারে এই পদ্ধতি।

Advertisement

গেইদোতে দক্ষতা অর্জনের তিনটি পর্যায় রয়েছে

শিল্পের প্রতি মানসিক ভাবে উৎসর্গ- যে কোনও বিষয়ে পারদর্শী হতে গেলে নিষ্ঠা, ধৈর্য এবং অধ্যবসায়ের প্রয়োজন। কোনও কিছুই দ্রুত অর্জন করা যায় না। ‘গেই্দো’র প্রথম ধাপ হল, যে কাজটি শিখছেন, তার প্রতি মানসিক ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া। এই পর্যায়ে দৃঢ় সংকল্পের প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে মেনে নিতে হবে, পদে পদে ব্যর্থতা, হতাশা আসতে পারে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

বছরের পর বছর ধরে শিক্ষার্থীরা প্রকৃত অর্থেই অধ্যয়ন এবং অনুকরণ করে সময় কাটান। ছবি: সংগৃহীত।

শিক্ষককে অনুকরণ- এই পর্যায়ে, শিক্ষার্থীকে তাঁর শিক্ষক অথবা গুরুকে অনুকরণ করতে হবে। নিয়ম ভাঙার প্রশ্ন পরে আসবে। তার আগে সব কিছুকে আয়ত্ত করতে হবে। বছরের পর বছর ধরে শিক্ষার্থীরা প্রকৃত অর্থেই অধ্যয়ন এবং অনুকরণ করে সময় কাটান। না বুঝে অনুকরণ করা নয়। কেবল কৌশলগুলি অনুকরণ না করে শিক্ষকের মতো করে চিন্তা করতে শেখা, দেখতে শেখার কথা বলা হচ্ছে। শিক্ষকের নৈপুণ্যের প্রতি মন দেওয়া দরকার। এই ধাপে নম্র হতে শিখতে হবে। অহংবোধকে দূরে সরিয়ে রেখে অন্যের জ্ঞানের প্রতি বিশ্বাস আনতে হবে।

শিল্পে নিজস্বতার প্রকাশ- শিক্ষা গ্রহণের পর শিক্ষকের ছায়া থেকে বেরিয়ে আসতে হবে এই পর্যায়ে। এখানেই যোগ হবে নিজস্বতা, যা শিক্ষকের থেকে আলাদা করবে শিক্ষার্থীকে। তাঁরা আর কেবল অনুকরণ করা শিখছেন না, হয়ে উঠছেন প্রকৃত শিল্পী। যেখানে কাজগুলি অনায়াসেই সম্পন্ন করার ক্ষমতা তৈরি হয়ে যায়।

গেইদো আপনার পেশায় কী ভাবে সাহায্য করতে পারে

যদিও ‘গেইদো’ মূলত শিল্পজগতে প্রয়োগ হয়, কিন্তু বর্তমান কর্মজীবনেও দক্ষতা অর্জন করার ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া উপযুক্ত। ‘গেইদো’র এই তিনটি স্তর পেশাজীবনেও সাফল্য আনতে পারে।

১. প্রতিশ্রুতি: নতুন চাকরি বা ব্যবসা শুরু করার সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হল, দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য স্থির করা। তার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া। অনেকেই তাৎক্ষণিক ফলাফল আশা করেন, কিন্তু দক্ষতা সে ভাবে আসে না।

যে কোনও বিষয়ে পারদর্শী হতে গেলে নিষ্ঠা, ধৈর্য এবং অধ্যবসায়ের প্রয়োজন। ছবি: সংগৃহীত।

২. নম্রতা: আপনার কাজে পারদর্শী এবং দক্ষ ব্যক্তির থেকে কাজ শেখা এবং তাঁদের কৌশল অনুকরণ করা। এই পর্যায়ে আপনাকে স্বীকার করে নিতে হবে, উল্টো দিকের মানুষটি আপনার থেকে বেশি জানেন।

৩. সাহস: অনুকরণ করে শিখে নেওয়ার পর মৌলিকতার উপর জোর দেওয়া। যাতে আপনার কাজ সকলের থেকে আলাদা হতে পারে। বিষয়গুলি আয়ত্ত করার পর নিজের অভিনব পথ খুঁজে বার করা। কেবল আর কর্মচারী নন আপনি, নিজের কর্মক্ষেত্রে আপনি তখন শিল্পী।

‘গেইদো’র তত্ত্ব অনুসারে, দক্ষতা প্রতিভার উপর নির্ভর করে না, বরং প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়ার উপর নির্ভর করে। রাতারাতি সেরা হওয়া সম্ভব নয়। সারা জীবন এই পথেই যাত্রা করতে হয়। ‘গেইদো’র দর্শন এখন আর জাপানের মানচিত্রে সীমাবদ্ধ নেই। এর প্রভাব বিভিন্ন রূপে বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement