সম্প্রতি ঘরে বসেই খাবারের গুণমান পরীক্ষার কয়েকটি সহজ পদ্ধতি বাতলেছেন এফএসএসএআই-এর বিশেষজ্ঞেরা। ওই সহজ প্রক্রিয়াগুলিকে একত্রিত করে সংস্থার তরফে একটি পুস্তিকাও প্রকাশ করা হয়েছে। যার নাম- ‘ডিটেকটিং অ্যাডালটারেন্টস উইথ র্যা পিড টেস্টিং’ (ডিএআরটি)। সেখান থেকে কিছু টিপ্স রইল এই গ্যালারির পাতায়।
দুধের মধ্যে ডিটারজেন্ট: রোজ যে দুধ খাচ্ছেন সেটা বিশুদ্ধ কি? জানতে হলে ঘরে বসেই করুন এই সহজ পরীক্ষা। একটি পাত্রে ১০ মিলিলিটার দুধের নমুনার সঙ্গে সমপরিমাণে জল মিশিয়ে ভাল করে ঝাঁকান। যদি দুধে ডিটারজেন্ট মেশানো থাকে তাহলে তার ঘন স্তর পড়বে পাত্রের তলায়। বিশুদ্ধ দুধ হলে ঝাঁকুনির জন্য সামান্য ফেনা হবে মাত্র।
দুধ বা দুধজাত দ্রব্যে (ক্ষীর, পনির, ছানা) স্টার্চ: বাজারে চালু প্যাকেট দুধ বা পনিরের মধ্যে অনেক সময়েই স্টার্চ মেশানো থাকে। আপনার খাবারে এমন কিছু নেই তো? জানতে হলে ২/৩ মিলিলিটার খাবারের নমুনার সঙ্গে ৫ মিলিলিটার জল মিশিয়ে ভাল করে ফোটান। ওই মিশ্রণ ঠাণ্ডা করে তাতে দু’তিন ফোঁটা টিনচার আয়োডিন মিশিয়ে দিন। মিশ্রণটির রং যদি নীল হয়ে যায়, তা হলে বুঝতে হবে তার মধ্যে স্টার্চ মেশানো রয়েছে।
ঘিয়ের মধ্যে স্টার্চ: বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, বাজারে চালু ঘিয়ের মধ্যে অনেক সময় স্টার্চ বা মিষ্টি আলু মেশানো থাকে। বুঝবেন কী ভাবে? হাফ চামচ ঘি বা মাখন একটি পরিষ্কার কাঁচের পাত্রে নিয়ে তার মধ্যে দু’-তিন ফোঁটা টিনচার আয়োডিন মিশিয়ে দিন। মিশ্রণের নীল রঙই বলে দেবে তার মধ্যে আলু বা অন্য কোনও স্টার্চ মেশানো রয়েছে কি না।
নারকেল তেলের মধ্যে ভেজাল তেল: আপনার বাড়ির নারকেল তেল বিশুদ্ধ তো? জানতে হলে একটি স্বচ্ছ কাচের গ্লাসে তেল নিয়ে ফ্রিজে ৩০ মিনিট রেখে দিন। বিশুদ্ধ হলে পুরো তেলটাই গ্লাসের মধ্যে জমাট বেঁধে যাবে। আর ভেজাল তেল মেশানো থাকলে, সেই তেলের একটা আলাদা স্তর পড়বে।
মধুতে কৃত্রিম চিনি: একটি কাচের গ্লাসে জল নিয়ে এক চামচ মধু ফেলে দিন। বিশুদ্ধ মধু হলে জলের মধ্যে সেটি মিশবে না। আর চিনির মিশ্রণ থাকলে, সেটি দ্রুত জলের সঙ্গে মিশে যাবে।
চিনির মধ্যে চকের গুঁড়ো: আজকাল বাজারে ভেজাল চিনির বাড়বাড়ন্ত। চিনিতে চকের গুঁড়ো বা গুড় মেশানো রয়েছে কি না জানতে এক গ্লাস জলে ১০ গ্রামের মতো চিনির নমুনা মেশান। যদি চক বা গুড় মেশানো থাকে তাহলে জলের নীচে তার আলাদা একটা স্তর পড়বে।
খাদ্যশস্যের মধ্যে এরগোট: বাজার থেকে কিনে আনা চাল, গমের মধ্যে বেশিরভাগ সময়েই এরগোট মেশানো থাকে। এরগোট হল একরকম ছত্রাকযা শরীরে গেলে নানা রকমের রোগ হতে পারে। একটা কাচের পাত্রে ২০ শতাংশ নুনের মিশ্রণের মধ্যে চাল বা গম ফেলে দিন। এরগোট ভেসে উঠবে। যদি খারাপ চালও থাকে সেগুলিও একই রকমভাবে ভাসতে থাকবে।
আটা/ময়দা/সুজিতে লোহার গুঁড়ো: পরীক্ষার জন্য একটি কাচের পাত্রে ওই নমুনা নিয়ে তার উপর চুম্বক ঘোরান। লোহার গুঁড়ো মেশানো থাকলে সেগুলি চুম্বকে আটকে যাবে।
গোল মরিচের মধ্যে পেঁপে বীজ: গোলমরিচে ভেজাল আছে কি না জানতে এক গ্লাস জলের মধ্যে গোল মরিচ ফেলে দিন। বিশুদ্ধ মরিচ জলের নীচে জমা হবে। আর পেঁপে বীজ মেশানো থাকলে সেগুলি জলের উপর ভেসে উঠবে।
হলুদ গুঁড়োতে কৃত্রিম রং: বিশুদ্ধ আর ভেজাল হলুদের ফারাক বুঝতে এক গ্লাস জলের মধ্যে এক চামচ হলুদ গুঁড়ো ফেলে দিন। বিশুদ্ধ হলে জলের রং হালকা হলুদ হয়ে যাবে, আর ভেজাল মেশানো থাকলে পুরো জলটাই গাঢ় হলুদ রঙের হয়ে যাবে।
লঙ্কায় কৃত্রিম সবুজ রং: সব্জিকে টাটকা এবং তরতাজা দেখাতে প্রায়ই নানা কৃত্রিম রঙের আশ্রয় নেওয়া হয়। সবুজ লঙ্কায় রং মেশানো আছে কি না জানতে, জল বা ভেষজ তেলে তুলো ডুবিয়ে সব্জি বা লঙ্কার গায়ে মুছতে থাকুন। কৃত্রিম রং থাকলে সেটা তুলোর গায়ে উঠে আসবে।