COVID-19

কোভিড রুখতে সহকর্মীর পেনেও হাত নয়! 

কর্মক্ষেত্রে সংক্রমণ রোখার জন্য নির্দেশিকায় প্রযুক্তিগত ও প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছে। প্রযুক্তিগত নিয়ন্ত্রণের (ইঞ্জিনিয়ারিং কন্ট্রোল) ক্ষেত্রে কর্মীদের বসার জায়গায় দূরত্ব-বিধি মানা, প্রয়োজনে দু’জনের বসার জায়গার মধ্যে কাচ বা অন্য কিছু দিয়ে আড়ালের ব্যবস্থা করা, ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা ঠিক মতো কাজ করছে কি না, তা দেখা-সহ একাধিক বিষয়ের উপরে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২০ ০৩:৩৮
Share:

ঘেঁষাঘেঁষি: কোভিডকে এড়াতে অন্যের জিনিস ব্যবহারের বিষয়ে সতর্ক করছে কেন্দ্র। অথচ সংক্রমণের আশঙ্কাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, দূরত্ব-বিধির তোয়াক্কা না করে এ ভাবেই হাতিবাগানের ফুটপাতে চলছে পুজোর কেনাকাটা। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

অফিসে ‘সিগারেট ব্রেক’ বন্ধ করতে হবে। দেখা গিয়েছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ওই ‘ব্রেক’-এ দূরত্ব-বিধি ভাঙা হয়। কর্তৃপক্ষকে এও নিশ্চিত করতে হবে, যাতে কর্মীরা পেন, ফোন, ডেস্ক, কম্পিউটার-সহ অন্য কিছু নিজেদের মধ্যে ‘শেয়ার’ না করেন। কারণ, এই দেওয়া-নেওয়ার মধ্যেই সংক্রমণ ছড়ানোর বিপদ লুকিয়ে। আগের মতোই সহজে ‘ভিজ়িটর’ অফিসে ঢোকানো যাবে না। কর্মক্ষেত্রে কোভিড ১৯ নিয়ন্ত্রণে সম্প্রতি এমনই একগুচ্ছ নির্দেশিকা জারি করেছে কেন্দ্রীয় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রক। আর তার পরেই বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, আদতে এই নিয়মগুলি কতটা মানা সম্ভব।

Advertisement

এমনিতেই আশঙ্কা করা হচ্ছে স্কুল, সিনেমা হল চালু হওয়ার পরে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। সে ক্ষেত্রে নিয়ম পালনই সংক্রমণ রোখার একমাত্র পথ, জানাচ্ছে ওয়াকিবহাল মহল। ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ’-এর (আইসিএমআর) এক গবেষকের কথায়, ‘‘এমনিতেই সংক্রমণ কমার লক্ষণ নেই। এই পরিস্থিতিতে কর্মক্ষেত্রে যদি ঠিক মতো নির্দেশ পালন না করা হয়, তা হলে আক্রান্ত কত হতে পারে, সেটা আর আন্দাজ করা যাচ্ছে না।’’ প্রসঙ্গত, গত এপ্রিলেও মন্ত্রকের তরফে কর্মক্ষেত্রে নিয়ম পালনের জন্য কয়েকটি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল। কিন্তু তা এতটা বিস্তারিত ভাবে নয় বলেই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক পরামর্শদাতার কথায়, ‘‘অনেকেরই দিনের বড় সময় কর্মক্ষেত্রেই কাটে। তাই সারা বিশ্বে কর্মক্ষেত্রে সংক্রমণ চিন্তার বিষয়। ফলে নির্দিষ্ট সময় অন্তর পরিস্থিতি বিশ্লেষণের পরে নির্দেশিকা জারি করাটা জরুরি।’’ যদিও ইসিএমআর-এর প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল নির্মল গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘কর্মক্ষেত্রে নিয়ম পালনের দায়িত্ব কিন্তু প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে। যদি কেউ তা পালন না করেন, তা হলে শাস্তিরও ব্যবস্থা করতে হবে। এ ব্যাপারে কোনও সমঝোতা নয়।’’

কর্মক্ষেত্রে সংক্রমণ রোখার জন্য নির্দেশিকায় প্রযুক্তিগত ও প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছে। প্রযুক্তিগত নিয়ন্ত্রণের (ইঞ্জিনিয়ারিং কন্ট্রোল) ক্ষেত্রে কর্মীদের বসার জায়গায় দূরত্ব-বিধি মানা, প্রয়োজনে দু’জনের বসার জায়গার মধ্যে কাচ বা অন্য কিছু দিয়ে আড়ালের ব্যবস্থা করা, ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা ঠিক মতো কাজ করছে কি না, তা দেখা-সহ একাধিক বিষয়ের উপরে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের (অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কন্ট্রোল) মধ্যে রয়েছে ‘অ্যাপয়েন্টমেন্ট’-এর ভিত্তিতে বাইরের লোককে অফিসে ঢোকার অনুমতি দেওয়া, ভিড় এড়াতে একাধিক দরজায় প্রবেশ ও স্ক্রিনিং-এর ব্যবস্থা করা, কেউ অসুস্থ হলেই তা দ্রুত কর্তৃপক্ষকে জানানোর জন্য কর্মীদের উৎসাহিত করা-সহ একাধিক বিষয়। মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘অনেক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, কী হবে সেই আতঙ্কে নিজেদের অসুস্থতার কথা কর্তৃপক্ষকে গোপন করেন কর্মীরা। গোপন নয়, বরং অসুস্থতার কথা সময় মতো বললে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে, এই আস্থাও অর্জন করতে হবে।’’ এ ছাড়াও নিয়মিত অফিসে জীবাণুনাশ করা, স্যানিটাইজ়ারের ব্যবস্থা রাখা, জঞ্জালের বিন পরিষ্কার করা, দরজার নব এবং সিঁড়ির হাতল বার বার যাতে কেউ স্পর্শ না করেন সে ব্যাপারে সচেতন করা-সহ একাধিক সতর্কতামূলক পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। তবে উল্লেখযোগ্য হল কর্মক্ষেত্রে পানমশলা, গুটখা, তামাক পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা। এমনকি, ‘সিগারেট ব্রেক’-এও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা! সরকারি অফিসের দেওয়াল যে ভাবে পানমশলা ও গুটখার রঙে রঞ্জিত থাকে, সেখানে এই পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন অনেকে। দীর্ঘদিন তামাক বিরোধী প্রচার ও সচেতনতার কাজে যুক্ত নির্মাল্য মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নিষেধাজ্ঞার পরেও গুটখা, পানমশলার ব্যবহার লুকিয়ে লুকিয়ে হয়েই চলেছে। কর্মক্ষেত্রগুলিতে অন্তত পক্ষে যদি এর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তা হলেও অনেকটা কাজ হবে।’’

Advertisement

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২

• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement