হাঁপানি রোগীর সংখ্যা বাড়াচ্ছে আতসবাজি

বিপদের আশঙ্কা থাকে বাতাসে ভাসমান অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণা (পিএম ২.৫) থেকেও।

Advertisement

রাজা ধর (বক্ষরোগ চিকিৎসক)

শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৯ ০৫:৪৪
Share:

জেরবার: দূষণের জেরে মুখে কাপড় বেঁধে স্কুলের পথে। বৃহস্পতিবার, রবীন্দ্র সদনের কাছে। ছবি: সুমন বল্লভ

প্রতি বছর কালীপুজো-দীপাবলির পরে আমরা খেয়াল করে দেখি যে, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানির রোগীদের সংখ্যা তার পরে অনেকটাই বেড়ে যায়। এমন রোগীও তখন আমাদের কাছে আসেন, যাঁদের আগে কখনও শ্বাসকষ্টের সমস্যা ছিল না। আর যাঁদের ইতিমধ্যেই সিওপিডি, হাঁপানি রয়েছে, তাঁদের অনেককে তো হাসপাতালে ভর্তি পর্যন্ত হতে হয়।

Advertisement

এর প্রধান কারণই হল, বাজি ফাটানোর ফলে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার (পিএম ১০) পরিমাণ এক ধাক্কায় অনেকটা বেড়ে যাওয়া। সেই ধূলিকণা শ্বাসনালীর ভিতরে প্রবেশ করে বলে হাঁপানি এবং সিওপিডি হয়। শ্বাসনালী এবং নাকের ভিতরে জ্বালা-জ্বালা ভাব, কাশি— এসবও হয়। সিওপিডি এবং হাঁপানির পিছনে যে দূষকগুলি প্রধানত দায়ী, তাদের মধ্যে অন্যতম কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড এবং ওজ়োন। এদের মধ্যে ওজ়োন বাদে বাকি দু’টি দূষকের পরিমাণই কালীপুজো, দীপাবলির পরে বাতাসে অসম্ভব বেড়ে যায়।

বিপদের আশঙ্কা থাকে বাতাসে ভাসমান অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণা (পিএম ২.৫) থেকেও। কারণ, এই পিএম ২.৫ শুধুমাত্র ফুসফুসেই সীমাবদ্ধ থাকে না। তা কোনও ভাবে মস্তিষ্ক বা হৃদ্‌যন্ত্রে প্রবেশ করে স্ট্রোক এবং হৃদ্‌রোগের কারণ হতে পারে। অর্থাৎ, বাজি যে শুধুমাত্র শ্বাসনালীর উপরেই ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে তা-ই নয়, মস্তিষ্ক, হৃদ্‌যন্ত্র-সহ শরীরের

Advertisement

অন্য অঙ্গের উপরেও এর প্রভাব পড়ে। সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিশুরা ও বয়স্কেরা।

এখন চিন্তার ব্যাপার হল, প্রতি বছরই এই ধরনের রোগীদের সংখ্যা উত্তরোত্তর বাড়ছে। তার কারণ, সরকারের তরফে মূলত শব্দবাজি বন্ধের উপরেই বেশি নজর দেওয়া হয়। কিন্তু আতসবাজিও যে ভাবে বায়ুদূষণ করে, সেই সংক্রান্ত প্রচার অতটা গুরুত্ব পায় না। ফলে দেখা যাচ্ছে, আগে যাঁরা শব্দবাজি ফাটাতেন, তাঁরাই এখন সমসংখ্যক আতসবাজি পোড়াচ্ছেন। আতসবাজির আলো দেখতে সুন্দর লাগলেও এর ফলে বায়ুদূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করছে। আতসবাজি পোড়ানোয় আশপাশের লোকেদের তো বটেই, যিনি পোড়াচ্ছেন তাঁরও মারাত্মক ক্ষতি হয়। এ সম্পর্কে সচেতন না হলে শহরে হাঁপানি বা সিওপিডি রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়তেই থাকবে। এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement