রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়লে তা হৃদ্রোগের আশঙ্কা বাড়ায়। তাই শরীরে কোলেস্টেরলের বাড়বৃদ্ধি হচ্ছে কি না, তা একটা বয়সের পরে যেমন নিয়মিত পরীক্ষা করা দরকার, তেমন নিয়ন্ত্রণেও রাখা দরকার।
কোলেস্টেরল আসলে কী?
জেনারেল ফিজ়িশিয়ান ডা. সুবীর কুমার মণ্ডল বললেন, ‘‘ট্রু কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড, এইচডিএল (হাই ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন), এলডিএল (লো ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন) এই চারটি মিলেই তৈরি হয় কোলেস্টেরল পরিবার। কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে গেলে এলডিএল লেভেলের বাড়বৃদ্ধির উপরে কিন্তু নজর রাখতে হবে। শরীরে কোলেস্টেরলের দরকারও আছে। বেশ কিছু হরমোন তৈরিতে কোলেস্টেরল জরুরি।’’ ফ্যাটের মতোই কোলেস্টেরল জলে দ্রাব্য নয়। শরীরে এদের চলাচল লিপোপ্রোটিনের উপরে নির্ভরশীল। রক্তবাহে কোলেস্টেরল জমতে লো ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন সহায়তা করে। রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হওয়ার ফলে স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। এইচডিএল আবার ভেসলের দেওয়াল থেকে কোলেস্টেরল সরিয়ে বার করে দেয়। এক দিকে এলডিএল শরীরের ক্ষতি করার চেষ্টায় থাকে আর এইচডিএল তার কাজে বাধা দেয়। তাই কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ছে কি না তা বোঝার জন্য এই পুরো গ্রুপটার পরিমাপ প্রয়োজন, কেবল ট্রু কোলেস্টেরল নয়।
কোলেস্টেরল বাড়ে কেন?
অনেকের ধারণা চর্বি জাতীয় খাবার বেশি খেলেই কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়। এ ধারণা কিছুটা ভুল। একই খাবার পরিবারের তিন জন খেলেও একজনের কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকতে পারে, অন্যদের স্বাভাবিক হতে পারে। ডা. সুবীর কুমার মণ্ডলের কথায়, ‘‘এটা নির্ভর করে প্রত্যেকের শরীরের মেটাবলিজ়মের উপরে। আর কারও যদি ডায়াবিটিস থাকে, তারও ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বাড়ার ভয় থাকে।’’
কী ক্ষতি হয়?
কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়লে তা রক্তবাহের মধ্যে সঞ্চিত হয়। রক্তবাহকে সরু ও শক্ত করে ফেলে। রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে। হৃদ্রোগের সম্ভাবনা বাড়তে পারে। স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কাও বেড়ে যায়।
কী ভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন?
• কোলেস্টেরলের মাত্রা থাকতে হবে ২০০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটারের মধ্যে ও এলডিএল-এর ১০০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটারের মধ্যে। কো-মর্বিডিটি থাকলে এলডিএলের মাত্রা ৮০-র মধ্যে রাখতে হবে। মাত্রা ছাড়ালেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খেতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে কিন্তু কোলেস্টেরলের ওষুধ নিজে থেকে বন্ধ করবেন না।
• কোলেস্টেরলের ওষুধ শুরু করার পরে লিভার ফাংশনের দিকে নজর রাখুন। কোনও অসুবিধে দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ বা তার মাত্রা বদলাতে হবে।
• অনেকেরই ধারণা, কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়লে মাংস, ডিম বন্ধ করে দিতে হবে। তাই কোন খাবার খেলে কী হতে পারে, সে ধারণা স্পষ্ট হওয়া জরুরি। মাংসের চেয়েও তার চর্বি কিন্তু বেশি ক্ষতিকর। তাই কোলেস্টেরল হয়েছে বলে মাংস না খেয়ে মাংসের ঝোল খেলে ক্ষতি আরও বেশি হবে। কারণ রান্নার সময়ে চর্বি গলে ঝোলে মিশে যায়। তার চেয়ে মাংস এক টুকরো খেলে ক্ষতি কম হয়। ডিমও ঘুরিয়েফিরিয়ে খেতে পারেন। তবে ট্রান্স ফ্যাট এড়িয়ে চলতে হবে। চর্বিজাতীয় খাবার, চিপ্স, ভাজাভুজি বেশি না খাওয়াই ভাল।
• শারীরচর্চার কোনও বিকল্প নেই। ঘাম ঝরে এমন ব্যায়াম করতে হবে নিয়মিত। বয়সের কারণে খুব বেশি ব্যায়াম করতে না পারলেও রোজ হাঁটা জরুরি।
• ডালডা, মাখন জাতীয় স্নেহপদার্থ খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিলেই ভাল। রান্নার জন্য সরষের তেল, অলিভ অয়েল বেছে নিন।
• আনাজপাতি, সিট্রাস ফল, ওট্স, বার্লি জাতীয় খাবার খেতে পারেন। সব ধরনের খাবার ঘুরিয়েফিরিয়ে খাওয়া উচিৎ। এতে প্রকৃতির নির্যাস ঠিক মতো শরীরে পৌঁছয়। শরীর সুস্থ রাখে। ডায়াবেটিক রোগীকে মিষ্টি ফল বাদ দিতে হবে। কারণ ফ্রুক্টোজ় ট্রাইগ্লিসারাইড বাড়িয়ে দেয়।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বা ডায়াবিটিস বা অন্য কোনও অসুখ থাকলে কোলেস্টেরল সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।