রান্নার তেলে নজর রাখলে এড়ানো যায় নানা অসুখ। ছবি: আইস্টক।
বাঙালির রান্না সচরাচর তেলে–ঝালে ভরপুর থাকে। সেদ্ধ খেলেও আমাদের তেল লাগে, স্যালাডেও লাগে। ভাজাভুজি–মাছ–মাংস হলে তো কথাই নেই৷ চিকিৎসকরা যতই দিনে ৩–৪ চামচ খাওয়ার কথা বলুন না কেন, সে লক্ষ্মণরেখা প্রায়শই পার হয়ে যায়৷ ফলত সমস্যাও বাড়ে৷
আবার শুধু যে বেশি তেল খাওয়া হয় বলে সমস্যা হয় তাও নয়, কখন কোন তেল কী ভাবে ব্যবহার করতে হয় সে সম্বন্ধে ধারণা থাকে না বলেও বিপদ বাড়ে৷
যে তেলে স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও ট্রান্স ফ্যাট বেশি থাকে, সেই তেলে রান্না করা খাবার খেলে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল বাড়তে পারে৷ খারাপ হতে পারে হার্টের কলকব্জাও৷
আরও পড়ুন: বর্ষায় ভাইরাল ফিভারের হানা শুরু, উপসর্গ কী কী? ঠেকাবেনই বা কী ভাবে?
বাদাম তেল স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী।
তেলের ভাল–মন্দ
মূলত তিনটি ফ্যাটি অ্যাসিড মিলে তৈরি হয় তেল৷ স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড বা এসএফএ, পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড বা ‘পুফা’ (মূলত ওমেগা থ্রি ও ওমেগা সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিড মিলে তৈরি হয়) ও মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড বা ‘মুফা’ তাদের নাম৷ ট্রান্স ফ্যাট নামে একটি ক্ষতিকর উপাদানও কখনও কখনও মেশানো হয় তাতে৷ এ বার এদের মধ্যে কোনটা কী মাত্রায় আছে তার উপর নির্ভর করে তেলের ভাল–মন্দ৷ ১০ গ্রাম তেলের মধ্যে—
ক) ২ গ্রামের কম স্যাচুরেটেডে ফ্যাট থাকলে
খ) ট্রান্স ফ্যাট না থাকলে
গ) মুফার চেয়ে পুফা বেশ খানিকটা কম থাকলে তবেই সেই তেল হবে উঁচু জাতের৷ সেই তেলে রান্না করা খাবার খেলে রক্তে ভাল কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়ে, খারাপ কোলেস্টেরল কমে৷ দুইয়ের প্রভাবে ভাল থাকে হার্ট৷
আর এক বিচার্য বিষয় হল ওমেগা সিক্স ও ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের অনুপাত৷ বিজ্ঞানীদের মতে এই অনুপাত ২ : ১ থেকে ৪ : ১–এর মধ্যে হওয়া উচিত৷ সানফ্লাওয়ার তেলে স্যাচুরেটেড ফ্যাট খুব কম থাকে৷ ওমেগা সিক্স ও ওমেগা থ্রি–র অনুপাত থাকে নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে৷ ভিটামিন ই–ও থাকে প্রচুর৷ কাজেই হার্টের রোগীরা অনায়াসে এই তেলে রান্না করা খাবার খেতে পারেন৷ ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ’-এর মত অনুযায়ী, সেই তেলই হল আদর্শ তেল যাতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট, মুফা, পুফার অনুপাত হবে যথাক্রমে ২.৭–৩% : ৩.৩–৪% : ২.৭–৩%–এর মধ্যে৷ রাইস ব্র্যান অয়েলও খুবই উপকারি৷ এতে গামা ওরাইজেনোল নামে যে রাসায়নিক আছে রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে তার ভূমিকা বিরাট৷ অলিভ অয়েলের তো তুলনাই নেই৷ এক্সট্রা ভার্জিন ভ্যারাইটি খাওয়া খুবই ভাল৷ তবে স্মোক পয়েন্ট কম বলে বাঙালি রান্নায় এর খুব একটা ব্যবহার নেই৷ তেলের উপকার পূর্ণ মাত্রায় পেতে গেলে দিনের এক একটা পদ এক একটা তেলে রান্না করা ভাল৷ কিংবা ১৫ দিন-এক মাস এক ধরনের তেল ব্যবহার করে পরের পর্বে অন্য তেল ব্যবহার করতে পারেন৷ কোন তেল কত তাপ সহ্য করতে পারে অর্থাৎ কত তাপমাত্রায় জ্বলে গিয়ে ক্ষতিকর রাসায়নিক তৈরি করতে শুরু করে— যাকে বলে ‘স্মোক পয়েন্ট’, সেটা দেখেও ভাল–মন্দ বিচার করা হয়৷
আরও পড়ুন: বর্ষায় জামাকাপড় শুকোতে সমস্যা? পোশাকে ছত্রাক হানা? রইল উপায়
স্যালাড বা সতে-য় ব্যবহার করুন অলিভ অয়েল।
কোন তেল কী ভাবে
ভাল করে ভাজাভুজি করে রান্না করতে গেলে এমন তেলে করা উচিত যা উচ্চ তাপে ভেঙে গিয়ে খারাপ রাসায়নিক তৈরি করতে না পারে৷ যেমন, বাদাম, সর্ষে, ক্যানোলা, সানফ্লাওয়ার, সয়াবিন, রাইস ব্র্যান বা তিল তেল৷ অলিভ অয়েলের স্মোক পয়েন্ট বেশ কম৷ সে কারণে সাধারণ ঝাল–ঝোল বা ভাজাভুজিতে ব্যবহার না করে শাক–সব্জি–মাছ, স্টিম বা সতে করার জন্য বা স্যালাড বানানোর সময় ব্যবহার করা ভাল৷ সব রকম ফ্যাটি অ্যাসিডের গুণ পেতে তেল মিলিয়ে–মিশিয়ে ব্যবহার করা উচিত৷ যেমন সর্ষে, রাইস ব্র্যান ও অলিভ অয়েল বা সয়াবিন, রাইস ব্র্যান ও সানফ্লাওয়ার অয়েল।
ভাজাভুজির পর বেঁচে যাওয়া তেল পরে আর ব্যবহার করবেন না৷ এতে প্রচুর ক্ষতি হয় শরীরের৷ যার মধ্যে অন্যতম হল ক্যানসার৷ কাজেই রাস্তার চপ–কাটলেট যে এড়িয়ে চলাই বাঞ্ছনীয়।