এই গরমেও কিছু নিয়ম মেনে সুস্থ থাকুন।
আবহাওয়া দফতর বৃষ্টির সুখবর শোনাতে পারছে না। অসহ্য গরমে অতিষ্ট হলেও অফিসকাছারি-রান্না-খাওয়া কিছুই তো বাদ দেওয়া যায় না। কাজের প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে যাওয়া তাই বন্ধ রাখা যাচ্ছে না। অন্য দিকে শিশু ও বয়স্করা বাড়িতে থেকেও গরমে কষ্ট পাচ্ছেন। গুমোট গরমে প্যাচপ্যাচে ঘাম অস্বস্তি বাড়াচ্ছে। কারও খাবার হজম হতে অসুবিধা হচ্ছে, কেউ আবার মাথা ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছেন। গরমে আবার সর্দি-কাশি, জ্বর, পেটে ব্যথার মতো রোগের সমস্যাও বাড়ছে। এই সময় শরীর ভাল রাখতে কিছু বাড়তি যত্ন নেওয়া দরকার, বলছিলেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ দীপঙ্কর সরকার।
গরমে কমবেশি সকলেরই কিছু না কিছু সমস্যা হয়। তবে সব থেকে বেশি সমস্যা হতে পারে এক্সট্রিম এজ গ্রুপ অর্থাৎ পাঁচ বছরের কম বয়সি বাচ্চা আর ৬৫ ঊত্তীর্ণ মানুষদের। যাদের হাই ব্লাড প্রেশার, ডায়বিটিস, ক্রনিক কিডনি ডিজিজ, কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ মানে হার্টের অসুখ, আলসারেটিভ কোলাইটিস-সহ কোনও ক্রনিক অসুখ আছে, তাদের গরমে সমস্যা কিছুটা বাড়তে পারে। আবার যাদের ইচ্ছে হলেও বাড়িতে থাকার উপায় নেই সেই সব ওয়ার্কিং মানুষদের এক এক রকম সমস্যা হয়।
দীপঙ্করবাবু জানালেন, যাদের নিয়মিত হাই প্রেশারের ওষুধ, হার্টের অসুখের ওষুধ বা যে কোনও ক্রনিক অসুখের ওষুধ খেতে হয়, গরমে তাদের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। চড়া রোদ্দুরে না বেরনোই ভাল। অবশ্য সকলেরই সকাল ১১ টার পরে সরাসরি রোদ্দুরে যাওয়া ঠিক নয়। ছাতা ব্যবহারের সঙ্গে পর্যাপ্ত জল ও শরবত পান করে বাইরে গেলে ভাল হয়। গাড়িতেও শীততাপ নিয়ন্ত্রিত হয়। সেগুলি ব্যবহার করা উচিত। তবে রোদ্দুর থেকে হঠাৎ ঠান্ডায় না যাওয়াই ভাল। এই সময় কিছু জীবাণুরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। পেটের সমস্যা, টাইফয়েড, ভাইরাল ফিভার, ঠান্ডা লেগে জ্বর, সর্দি, গলা ব্যথা হতে পারে। বৃষ্টিতে ভিজে গিয়ে যেমন ঠান্ডা লাগে, তেমনই ঘাম বসেও ঠাণ্ডা লাগতে পারে। তাই এই ব্যাপারটাও খেয়াল রাখতে হবে।
আরও পড়ুন: একের পরে এক আম খাচ্ছেন! কী ভয়ঙ্কর বিপদ ডেকে আনছেন জানেন?
হাতের কাছেই মজুত রাখুন গরম থেকে বাঁচার জিনিসপত্র। ছবি: শাটারস্টক।
গরমে শরীর অস্থির লাগলে চোখে মুখে ঠান্ডা জলের ঝাপটা দিতে হবে। সম্ভব হলে স্নান করে নিতে পারলে ভাল হয়। অন্যান্য শারীরিক অসুবিধা না থাকলে গরম কালে ৩ থেকে ৪ বার স্নান করলে গরমের কষ্ট অনেক কম হয়। দুপুরের রোদ্দুরে না বেরনোর চেষ্টা করবেন। জেনে রাখুন দুপুর দুটো পর্যন্ত তাপমাত্রা সব থেকে বেশি থাকে। এই সময় বাইরে গেলে অসুস্থ হয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে। খুব কষ্ট হয়। তাই চেষ্টা করবেন দুপুর বারোটা থেকে দুপুর তিনটের মধ্যে অফিসে বা কোনও ঘরে থাকার। পর্যাপ্ত পরিমাণে জল ও জলীয় খাবার খেতে হবে। বাড়িতে পাতা দইয়ের ঘোল, নুন লেবুর শরবৎ, ডাবের জল, যে কোনও টাটকা ফলের রস ( ক্যান বন্দি চিনি দেওয়া ফলের রস নয়) খেলে চট করে ক্লান্ত হবেন না। শশা, জামরুল, তরমুজ, আঙুর-সহ যে কোনও টাটকা ফল খেলে ভাল হয়। এই সময়ে বেশি মশলাদার খাবার ও বেশি মাংস খেলে হজমের সময় শরীরে বাড়তি তাপ উৎপন্ন হয়। তাই হালকা খাবার খেতে হবে। রোজকার ডায়েটে রাখুন টক দই, যা হজমশক্তি বাড়বে। হালকা রঙের সুতির ঢিলে পোশাক পরতে হবে। আর সকলেরই উচিত সানস্ক্রিন মেখে বাইরে বেরনো।
আরও পড়ুন: গর্ভাবস্থায় ডায়াবিটিস চরম ক্ষতি করতে পারে ভ্রূণের, কী ভাবে ঠেকাবেন?
আম থেকে আনারস, মরসুমি ফলেই শরীরকে রাখুন ঠান্ডা। ছবি: শাটারস্টক।
গরমে ব্যায়াম করলে কষ্ট বাড়ে। চেষ্টা করুন সাঁতার কেটে বা সন্ধেবেলা ব্যায়াম করে ফিট থাকার। যাদের ক্রনিক কিডনির অসুখ বা হার্টের সমস্যা আছে, তাদের জল খেতে হয় মাপ অনুযায়ী। কষ্ট হলে চিকিৎসককে অসুবিধার কথা জানান। আর শশা, জামরুল, পাকা পেঁপে জাতীয় ফল খেয়ে জলের ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা করুন। গরমে ভয়ানক ঘাম হলে, চোখে অন্ধকার দেখলে অথবা শ্বাসের কষ্ট হলে দেরি না করে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। গরমে ভয়ানক বিপদে পড়তে হয় পার্কিং করা গাড়ির মধ্যে বসে থাকলে। এর থেকে মারাত্মক বিপদের ঝুঁকি থাকে। রোদ্দুরে গাড়ি পার্ক করে রাখলে ১০ মিনিটের মধ্যেই গাড়ির মধ্যেই গাড়ির ভিতরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় প্রায় ২০ ডিগ্রি ফারেনহাইট। বিদেশে অনেকেই বাচ্চাদের পার্কিং করা গাড়িতে রেখে শপিং করতে যান। এতে প্রবল গরমে মানুষ বেহুঁশ হয়ে যান, প্রাণ হারানোর মতো ঘটনাও ঘটে। সুতরাং এই ব্যাপারটা ভুলবেন না।