আধুনিক জীবনযাপনের চাপে মাঝ বয়সেও আজকাল হাড়ের অসুখ হানা দিচ্ছে ঘরে ঘরে। ছবি: আইস্টক।
ব্যথা-বেদনা বাঙালির রোজের সঙ্গী। তা নিয়েও দৈনিক চরকিপাক বা বছরের দু’-একটা বেড়ানো সেরে ফেলার পরিকল্পনা তার থাকেই। বয়স বাড়ার সঙ্গে হাঁটু বা কোমরের ব্যথাকে এড়িয়ে চলতে পারেন না বেশির ভাগই। কেউ বা সারা বছরই চিকিৎসকদের পরামর্শে চলেন, কেউ আবার ব্যথা বাড়লে তবেই যত্ন নেওয়া শুরু করেন। তবু বেড়ানোর সময় সে তার সব ব্যথাবেদনাকে নিয়ন্ত্রণে রেখে বেড়ানোর আনন্দে মাততেই পছন্দ করে।
বাড়িতে থাকা ব্যস্ত সদস্যরাই শুধু নন, আধুনিক জীবনযাপনের চাপে মাঝ বয়সেও আজকাল হাড়ের অসুখ হানা দিচ্ছে ঘরে ঘরে। তবে ব্যথার সমস্যাকে কব্জা করে পাহাড়ি পথের হাতছানি বা সমুদ্র স্নানের আনন্দ দুই-ই নেওয়া সম্ভব, জানালেন অর্থোপেডিক সার্জেন রাজীব চট্টোপাধ্যায়।
ব্যথার চোখরাঙানির চোটে অনেকেই একটা বয়সের পর আর বেড়াতে যেতে চান না। তবে ব্যথার দোহাই দিয়ে ঘরবন্দি না থেকে একটু নিয়মকানুন মানলেই বেড়ানো সম্ভব। খুব কষ্ট করে হাঁটেন, এমন মানুষও গাড়িতে বেড়ানো যায় এমন কিছু জায়গা ঘুরে আসতেই পারেন। তবে সেখানেও তাঁদের জন্য রয়েছে কিছু সতর্কতা।
আরও পড়ুন: পুজোর আগে এ সব রান্নার উপকরণেই ত্বক হবে নিখুঁত, ফেসিয়ালের চেয়েও উজ্জ্বল
হাঁটুর ব্যথা
শরীরের পুরো ভার বহন করে হাঁটু দুটো। আর্থ্রাইটিস থাকলে এই ব্যথা স্বাভাবিক, কিন্তু অনেক সময় কোনও অসুখবিসুখ ছাড়াই এই সমস্যা ডেকে আনি আমরা। ভুল ভঙ্গিতে হাঁটাচলা, পায়ের অনুপযুক্ত জুতো পরা, শরীরচর্চা না করা ও বাড়তি ওজন কমানোর অনীহা হাঁটুর ব্যথার অন্যতম কারণ।
কোমরে ব্যথা
অসুখের প্রসঙ্গে আলাদা। কিন্তু শুধু যদি জীবনযাপনের কারণে এই ব্যথা ভোগায়, তা হলে তা নির্মূল করতে কঠোর হতে হবে আপনাকেই। তুলতুলে নরম গদিতে বেঁকেচুরে বসে কাজ সারা, সারা দিন গদি আঁটা চেয়ারে বসে কাজ, শরীরচর্চার ধারপাশ দিয়ে না যাওয়া, হাঁটাহাঁটি না করা সবগুলোই কোমরের ব্যথা ডেকে আনে।
তবে এই সব ব্যথা সঙ্গে নিয়েও বেড়াতে যাওয়া সম্ভব, যদি সারা বছরই কমবেশি নিয়ম মানেন। এতে অবশ্য ব্যথাও থাকবে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে।
বেড়ানোর সাবধানতা
বেড়াতে যাওয়ার আগে অবশ্যই সম্পূর্ণ চেক আপ করান ও চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সচেতনতা অবলম্বন করুন। বেড়াতে গেলেও প্রয়োজনীয় ওষুধ, নি ও অ্যাঙ্কল ক্যাপ, বেল্ট ও চিকিৎসকের পরামর্শ মতো হাড়ের সাপ্লিমেন্টস সঙ্গে রাখতে হবে। ফ্যাশন করতে হবে হাড় বাঁচিয়ে। নরম সোলের জুতো, গ্রিপ ও স্ট্র্যাপ-সহ জুতো পরাই উচিত। হাড়-কোমরে সমস্যা থাকলে অবশ্যই হিল এড়াতে হবে। চেয়ারে বসার সময় পায়ের পাতা যেন মাটিতে ঠেকে থাকে। শরীরচর্চা ও হাঁটাহাঁটি বাদ দিলে চলবে না।
আরও পড়ুন: ভাদ্রের ভ্যাপসা গরমে পুজোর আগে অসুখ এড়ান, মেনে চলুন এ সব নিয়ম
ঘরে পরার চটি যেন স্লিপারি না হয় সে খেয়াল রাখতে হবে। ব্যথার রোগীর জন্য ট্রেনে লোয়ার বার্থ বুকিং করবেন। গাড়িতেও কম ঝাঁকুনি হবে এমন সিটে বসান। খুব অসুস্থ হলে হুইল চেয়ার বুক করে রাখুন আগে থেকেই। পাহাড়ি পথে অল্প রাস্তা হাঁটলেও কষ্ট হতে পারে। তাই ব্যথা কমানোর স্প্রে, ওষুধ সঙ্গে রাখুন। বরফ সেঁক দেয়া সম্ভব হলে রাতে ঘুমনোর আগে আইস প্যাক দিন। অশান্ত সমুদ্রে নামবেন না, পাড়ে দাঁড়িয়ে বা খুব অল্প কিছুটা নেমেও আনন্দ করতে পারেন। বড় ঢেউয়ের আঘাত এড়াতে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। সাবধানে হাঁটাচলা করতে হবে, তবু চোট পেলে বেদনানাশক ওষুধ ও বরফ সেঁকে আস্থা রাখুন।