চিকেন পক্স হলে মেনে চলুন বেশ কিছু জরুরি সতর্কতা। ছবি: শাটারস্টক।
শীত শেষে বসন্তের আগমন মানেই আবহাওয়া পরিবর্তনের সব রকম অসুখের সঙ্গে চিকেন পক্সের হানা দেওয়ার সময়। এ অসুখ একাধিক বার হতেই পারে। তবে এর আগে এই অসুখে আক্রান্ত না হলে আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থার শরণ নিয়ে ভ্যাক্সিন নেওয়া যেতে পারে।
ভ্যারিসেল্লা ভাইরাসের আক্রমণে ঘটা এই অসুখ অত্যন্ত সংক্রমিতও বটে। তাই এই রোগে আক্রান্ত হলে রোগীকে বেশ কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। বায়ুবাহিত অসুখ হওয়ায় এই রোগকে আটকানোর তেমন কোনও উপায় থাকে না ঠিকই, তবে আক্রান্ত রোগী থেকে যতটা সম্ভব দূরে থেকে ও এই সময়টা বাইরে বেরলে মাস্ক ব্যবহার করে অসুখকে কিছুটা রুখে দেওয়া যায়।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ গৌতম গুপ্তর মতে, এই অসুখ থেকে বাঁচতে ভাল না হওয়া পর্যন্ত রোগীকে হাওয়া-বাতাস চলাচল করে এমন পরিষ্কার ঘরে রাখুন এবং তাঁর ব্যবহৃত সব জিনিসপত্রও আলাদা করুন। রোগীর শ্বাস, হাঁচি-কাশি থেকে ছড়ায় এই অসুখ। সারা শরীরে জল-সমেত ফোস্কা দেখলে সচেতন হন। এই অবস্থায় বাইরে বেরনো একেবারে উচিত নয়।
আরও পড়ুন: নিয়ম করে প্রতিষেধকই হাম, পক্স ঠেকানোর অন্যতম উপায়
শিশুদের অবশ্যই পক্স থেকে বাঁচার ভ্যাক্সিন নেওয়ান। ছবি: শাটারস্টক।
বসন্তের মরসুমে এই অসুখের সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা বাড়াতে ও রোগ প্রতিরোধ করতে প্রতি দিন স্নানের জলে নিমপাতা ফেলে, হলুদ মেখে স্নান করুন। খাবার পাতে তেল-মশলা ও ফ্যাট-জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন। বরং তার পরিবর্তে তেতো রাখুন বেশি করে, এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।
তবে এই অসুখ হলে বেশ কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। রোগীর যত্নেও সেই ছাপ না থাকলে তা সারতে যেমন দেরি হয়, তেমনই ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও থাকে। কেমন হবে সেই যত্ন? মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অরিন্দম বিশ্বাসের মতে, “প্রথমেই মনে রাখতে হবে এই অসুখ কিন্তু কারও ক্ষেত্রেই পুরোপুরি সারে না। শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে একে রুখে সুস্থ হওয়া যায়। তবে এই রোগ হলে বেশ কিছু নিয়ম মেনে চললে সহজেই সুস্থ হতে পারবেন।’’ দেখে নিন চিকিৎসকের পরামর্শ।
রোগীকে কখনও নোংরা বা স্যাঁতসেঁতে ঘরে রাখবেন না। বরং তাঁর ঘরে যেন যথেষ্ট আলো-বাতাস চলাচল করে ও পরিষ্কার হয়। এই সময় নিজের ইচ্ছামতো যখনতখন ওষুধ কিনে খাবেন না। শরীরে জ্বরের সঙ্গে বেদনাদায়ক ফোস্কা থাকায় প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ দিন। ত্বকের প্রদাহ কমাতে ক্যালামাইন লোশন লাগান। কখনও সখনও রোগীর শারীরিক অবস্থা বুঝে কিছু অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ খেতে হতে পারে। তবে যে কোনও ওষুধ খাওয়ার আগে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করবেন।
আরও পড়ুন: হার্টের অসুখ? কী কী ব্যায়াম কেমন ভাবে অভ্যাস করলে সুস্থ থাকবেন
তেল-মশলা এড়িয়ে তেতো খান বেশি করে। ছবি: শাটারস্টক।
রোগীর হাতের নখ কেটে দিন। ঘুমের মধ্যে বা অসাবধানে ফোস্কায় নখ লেগে গেলে তা থেকে রক্তপাত হতে পারে। সংক্রমণও ছড়াবে এমন হলে। প্রদাহ শুকানোর সময় ফোস্কার চামড়া ওঠার সময় সেই স্থান চুলকায়। কিন্তু নখ বা ধারাল-ভোঁতা কিছু দিয়েই চুলকানো বা খোঁটা যাবে না কখনওই। বরং আরাম পেতে ক্যালামাইন লোশন ও অ্যান্টি অ্যালার্জিক ওষুধ খান। বাড়িতে শিশুদের অবশ্যই পক্স থেকে বাঁচার ভ্যাক্সিন নেওয়াতে হবে। বড়রাও যাঁরা এই অসুখের শিকার হননি তাঁরা ভ্যাক্সিন নিন। খাবারদাবার খুব হালকা রাখুন, তেল-মশলা এড়িয়ে তেতো খান বেশি করে। বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে এই অসুখ হলে অনেক সময় তা থেকে নিউমোনিয়া বা এনসেফেলাইটিস হতে পারে। তাই সাবধান হোন ও রোগ কমানোর জন্য চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। ক্যানসার আক্রান্ত রোগী, গর্ভবতী বা ক্রনিক ফুসফুস ও চর্মরোগে আক্রান্তদের চিকেন পক্স হলে অ্যাসাইক্লোভির জাতীয় অ্যান্টি ভাইরাল ওষুধ দেওয়া হয়। এতে পক্সের কষ্ট অনেকটা তাড়াতাড়ি কমিয়ে দেওয়া যায়। তবে এই ওষুধ খাওয়ার আগেও অবশ্যই সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
(শুরু হয়েছে আমাদের নতুন বিভাগ 'HELLO DOCTOR'। এ বারের বিষয় ‘ব্রণর সমস্যা’। এ বিষয়ে আপনার প্রশ্ন পাঠান query@abpdigital.in এই মেল আইডি তে। উত্তর দেবেন ত্বক বিশেষজ্ঞ সঞ্জয় ঘোষ।)