পলকে ইটালির রাস্তায় এসে পড়তে পারেন। পরিবেশে তো বটেই। খাবারের স্বাদে-গন্ধেও। —নিজস্ব চিত্র।
গলিতে ঢুকেই ডান দিকে দরজাটা। ধূসর পিচের রাস্তা ঘেঁষা বেজরঙা দেওয়াল। উল্টোনো ‘ইউ’-এর মতো দেখতে জানলা। দরজাটা বড়। কাঠের। সেটি ঠেলে ভিতরে ঢুকলেই চোখে পড়বে এক ঝলক ইটালি!
কোথাও পাথুরে রাস্তার ধারে সার দেওয়া চেয়ারে খোশগল্পে মেতেছেন কয়েক জন মধ্যবয়সি ‘যুবক’। তাদের পরনে আলগা কোট-প্যান্ট। মাথায় টুপি বা হ্যাট। কোথাও রাস্তার ধারে মন দিয়ে চলছে অলিভের কেনাবেচা। তাজা অলিভের গন্ধ নিচ্ছেন ক্রেতারা। একটু দূরেই উল্টোনো ‘ইউ’ আকৃতির একটি জানলা থেকে বেরিয়ে থাকা এক জোড়া হাত তালি দিচ্ছে। কারণ, জানলার নীচে রাস্তায় আপনমনে নেচে চলেছেন এক পুরুষ ও নারী। উল্টো দিকের রাস্তাতেও পিৎজ়া খেতে খেতে হঠাৎ উঠে পড়েছেন দুই প্রৌঢ়। পরনে সাদা স্যান্ডো গেঞ্জির সঙ্গে কেজো ওভারঅল। বোঝাই যায়, একটু পরে কাজে যাবেন। কিন্তু আপাতত দু’জনে নাচছেন ইটালির লোকনাচ ‘টারানটেলা’।
পিৎজ়া মুখের সামনে আসতেই আলাদা করা গেল বেসিল, তাজা টম্যাটো, অলিভ অয়েল আর মোষের দুধের মোৎজ়ারেলা চিজ়ের স্বাদ-গন্ধ। —নিজস্ব চিত্র
ফ্রেমে বাঁধানো ইটালির সাদা-কালো এক-একটা ছবি এক-একটা ছোট গল্পের মতো আগলে আছে দেওয়াল। তার নীচে ইটালির স্টোনফিনিশ ফ্লোরিং। সার দেওয়া কাঠের চেয়ার, কাঠের টেবিল। ফাইন ডাইনিংয়ের আয়োজন। পাশে মেরুন রঙের লম্বাটে মেনুকার্ডে রেস্তরাঁর নাম— ‘ফ্যাব্রিকা অরজিন্যাল’।
এক-একটা ছবি এক-একটা ছোট গল্পের মতো আগলে আছে দেওয়াল। —নিজস্ব চিত্র
শহরে ইটালির খাবার পাওয়া যায় বেশ কয়েকটি রেস্তরাঁয়। সেই সব খাবারের মধ্যে পিৎজ়া আর পাস্তার জনপ্রিয়তাই বেশি। অতিচেনা ওই দুই ইটালীয় পদের বাইরেও বহু খাবার রয়েছে সে দেশে। যা পাওয়া যায় কিছু কিছু রেস্তরাঁতেই। খাস মধ্য কলকাতাতেই তেমন দু’-একটি রেস্তরাঁ রয়েছে। ফ্যাব্রিকা সেই তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। সল্টলেকে বছর সাতেক আগেই একটি রেস্তরাঁ খুলেছিল তারা। এ বার এসেছে পার্ক স্ট্রিটেও।
গানোচি বাটার সেজ। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
রেস্তরাঁ কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁরা অতিথিদের পলকে ইটালির রাস্তায় নিয়ে গিয়ে ফেলতে পারেন। পরিবেশে তো বটেই। খাবারের স্বাদে-গন্ধেও। প্রমাণ পাওয়া গেল পিৎজ়ায়। ইটালির আসল স্বাদ আর গন্ধ নাকি পাওয়া যায় মার্গারিটা পিৎজ়ায়। ফ্যাব্রিকায় ইটের উনুন থেকে বেরিয়ে ধোঁয়া ওঠা সেই পিৎজ়া মুখের সামনে আসতেই আলাদা করা গেল বেসিল, তাজা টম্যাটো, অলিভ অয়েল আর মোষের দুধের মোৎজ়ারেলা চিজ়ের স্বাদ-গন্ধ।
কফি মেশানো ককটেল ‘ভেরানো’র স্বাদ এক বার নিলে ভোলা কঠিন। ছবিতে রোসা এবং গ্রেপফ্রুট স্প্রাইৎজ়ার। —নিজস্ব চিত্র
পুজোয় যদি এখানে খেতে আসতে চান তবে পিৎজ়ার পাশাপাশি চেখে দেখতে পারেন গানোচি বাটার সেজ, মাফালডিন রাগু, অ্যাসপারাগাস রিসোটো। তবে খাবার যা-ই খান, শেষ পাতে এদের তিরামিসু রাখতে ভুলবেন না। চকোলেট আর টলমলে ক্রিমের মুখে মিলিয়ে যাওয়ার অনুভূতি লিখে বোঝানো সম্ভব নয়। এ রেস্তরাঁয় একটি ককটেল কাউন্টারও রয়েছে। চোখের সামনেই আপনার পছন্দের ককটেল বানিয়ে দেবেন বারটেন্ডার। গ্রেপফ্রুট স্প্রাইৎজ়ার, রোসা, ভেরানো, ভার্দে অন ভার্দে— তালিকায় অনেক কিছুই আছে। তবে এর মধ্যে কফি মেশানো ককটেল ‘ভেরানো’র স্বাদ এক বার নিলে ভোলা কঠিন।
তিরামিসু: চকোলেট আর টলমলে ক্রিমের মুখে মিলিয়ে যাওয়ার অনুভূতি লিখে বোঝানো সম্ভব নয়। —নিজস্ব চিত্র