যত দোষ, সব একা শুয়োরেরই নয়। আক্রান্ত এলাকায় বক, সারস, এমনকী মানুষের খুব কাছাকাছি থাকা কাক-চড়ুইয়ের মতো পাখির শরীরেও এনসেফ্যালাইটিসের জীবাণু বাসা বাঁধে বলে দাবি করেছেন এ রাজ্যে এনসেফ্যালাইটিস চিকিৎসার পথিকৃৎ, জীবাণুবিজ্ঞানী বিজয় মুখোপাধ্যায়।
নব্বইয়ের দশকে বর্ধমানে এলসেফ্যালাইটিস যখন প্রায় মহামারির চেহারা নিয়েছিল, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের তখনকার অধ্যক্ষ বিজয়বাবু ওই মারণ রোগ প্রতিরোধে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন। হিমাচলপ্রদেশে তৈরি জীবাণু প্রয়োগ করে সফল হন ওই জীবাণুবিজ্ঞানী।
বিজয়বাবু এখন কাটিহার মেডিক্যাল কলেজের সঙ্গে যুক্ত। মঙ্গলবার তিনি বলেন, “আক্রান্ত এলাকায় সারস-বকের মতো কাক-চড়ুইয়ের শরীরে এনসেফ্যালাইটিসের জীবাণু বাড়ে। কিউলেক্স বিষনোই মশা ওই পাখিদের কামড়ালে জীবাণু সেই মশার মধ্যে চলে আসবে। তার পরে সেই মশার মাধ্যমেই সংক্রমণ ঘটবে মানুষের মধ্যে।” সংক্রমণের এই চক্র ভাঙতে না-পারলে এনসেফ্যালাইটিস থেকে মুক্তি মিলবে না বলে মনে করেন ওই প্রবীণ বিজ্ঞানী।
উত্তরবঙ্গে রোগটি ভয়াবহ আকার নিয়েছে। এই অবস্থায় কী করণীয়?
এনসেফ্যালাইটিস এক বার যখন ছড়িয়ে পড়েছে, তখন তা নিয়ন্ত্রণ করার কোনও পদ্ধতি আপাতত নেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন বিজয়বাবু। তিনি বলেন, “এখন এই রোগ থেকে বাঁচার উপায় একটাই। এই মুহূর্তে আক্রান্ত এলাকায় যাঁরই জ্বর হবে, হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে তাঁর চিকিৎসা শুরু করে দিতে হবে। এক বার খিঁচুনি শুরু হয়ে গেলে বাঁচানো মুশকিল।”
উত্তরবঙ্গের এনসেফ্যালাইটিস-পরিস্থিতির দিকে তিনি নিয়মিত নজর রাখছেন বলে দাবি প্রবীণ ওই জীবাণুবিজ্ঞানীর। নব্বইয়ের দশকে বর্ধমান, বাঁকুড়ায় টিকাকরণ কর্মসূচির মাধ্যমে এনসেফ্যালাইটিসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা গিয়েছিল। সেই টিকা থাকা সত্ত্বেও উত্তরবঙ্গে কেন রোখা গেল না এনসেফ্যালাইটিস?
বিজয়বাবুর মনে হয়েছে, গত বছর বা তার আগের বছরও যে উত্তরবঙ্গে এলসেফ্যালাইটিস হানা দিয়েছিল, স্থানীয় স্বাস্থ্য দফতর সেটা বুঝতে পারেনি। টিকাকরণ কর্মসূচি কোথাও কোথাও চালানো হলেও তা যথাযথ ভাবে হয়েছে কি না, সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। ঠিকঠাক টিকাকরণ হলে এ ভাবে রোগটা ছড়াত না। “মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য ঠিক ব্যবস্থাও (বাড়ি বাড়ি স্প্রে করা ইতাদি) যথাসময়ে নেওয়া হয়েছে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। প্রচার চালিয়ে মানুষকে যতটা সচেতন করে তোলা যেত, সম্ভবত তা-ও হয়নি,” মন্তব্য বিজয়বাবুর।
সাধারণত শিশু থেকে শুরু করে সদ্য প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে ওঠা তরুণ-তরুণীদের মধ্যে এনসেফ্যালাইটিসের সংক্রমণ হয়। তাই প্রতিষেধক টিকাও দেওয়া হয় শিশু-কিশোরদের। কিন্তু এ বার বয়স্কদের মধ্যেও ওই রোগ ছড়িয়ে পড়ায় স্বাস্থ্যকর্তারা উদ্বিগ্ন। তাঁরা এমন সংক্রমণের ব্যাখ্যা খুঁজে পাচ্ছেন না। বিজয়বাবু অবশ্য জানাচ্ছেন, শরীরে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কমে গেলে বয়স্কেরাও এলসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত হতে পারেন।