Autoimmune Diseases

অটোইমিউন ডিজ়িজ়ে আক্রান্তদের জন্য

নিয়মিত শারীরচর্চা এই রোগে আক্রান্তদের ভাল রাখতে পারে। জেনে নিন কী কী ব্যায়াম করবেন?

Advertisement

কোয়েনা দাশগুপ্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২৪ ০৬:৪৩
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

“হাল ছেড়ো না বন্ধু, বরং...”

Advertisement

ধৈর্য ধরা জরুরি। অটোইমিউন ডিজ়িজ় হল এমন একটা রোগ যেখানে নিজের কোষকে চিনতে পারে না শরীর। ফলে শরীরের কোষগুলো একে অপরের শত্রু হয়ে ওঠে। ডা. সুবীর মণ্ডল বলছেন, “জন্মের পর থেকে কয়েক বছরের মধ্যেই বাচ্চার শরীর নিজের কোষ ও ফরেন বডির মধ্যে পার্থক্য করতে পারে। সাধারণত অ্যান্টিজেন শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করে জীবাণু ধ্বংসের মাধ্যমে অনাক্রম্যতা বাড়ায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে শরীর নিজের কোষের বিরুদ্ধে একটা প্রোটিন তৈরি করে নিজেরই ক্ষতি করতে শুরু করে। দেহে সৃষ্ট অ্যান্টিবডি শরীরের নানান যন্ত্রাংশকে ভুল করে অ্যান্টিজেন ভেবে বসে ও জীবাণুর ন্যায় ধ্বংস করে দিতে থাকে।” অটোইমিউন ডিজ়িজ় যেমন অনেক ধরনের হয়, তেমনই শরীরের কোন অংশে হচ্ছে তার উপরেও নির্ভর করে রোগের গুরুত্ব ও চিকিৎসা। রোগের প্রকোপ কতটা হবে, তা রোগীর শরীরের উপরেও নির্ভর করে। কারও ক্ষেত্রে অটোইমিউন ডিজ়িজ় খুব একটা কাবু করতে পারে না, অনেকের আবার সারা জীবনই অসুখ কখনও বাড়ে, কখনও কমে। তাই শত্রু যখন ঘরে, তখন সতর্ক থাকা জরুরি।

শারীরচর্চায় জয়

Advertisement

কিন্তু এ তো গেল রোগের কথা। আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যায় অটোইমিউন ডিজ়িজ় অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। ফিটনেস বিশারদ সৌমেন দাস বলছেন, “ওষুধ, সতর্কতা যেমন এই রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে, তেমনই নিয়মিত নির্দিষ্ট কিছু ধরনের শারীরচর্চাও এই রোগীদের ভাল থাকতে সাহায্য করে।”

এই রোগে অধিকাংশ সময়েই পেশি তার স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারায়। সঙ্গী হয় শারীরিক দুর্বলতা। ইমিউনিটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে রোগীদের স্টেরয়েড দেওয়া হয়। তাতে বাড়তে থাকে ওজন। তা ছাড়া, এই রোগে আক্রান্তরা বেশি এক্সপোজ়ড হলে ইনফেকশনের আশঙ্কা বেড়ে যায়। ফলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে থাকতে আসে মানসিক দুর্বলতা, আত্মবিশ্বাসের অভাব। সৌমেন বলছেন, নিয়মিত শারীরচর্চা পুনরায় ফিরিয়ে দিতে পারে সেই হারিয়ে যাওয়া আত্মবিশ্বাস।

—প্রতীকী চিত্র।

কী করবেন?

ওয়াকিং বা হাঁটা, অ্যারোবিক্স, জ়ুম্বা, পিলাটে, স্কোয়াট, জাম্পিং জ্যাক, প্ল্যাঙ্কস, ক্যালাসথেনিক্স... অটোইমিউন ডিজ়িজ়ে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রশিক্ষকের পরামর্শ মতো করতে পারেন সব ধরনের ব্যায়ামই। তবে পেশির জোর কম থাকায় এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের এক জায়গায় বসে বা শুয়ে শারীরচর্চা করাই নিরাপদ। নতুবা সামান্য ব্যায়ামের পরে পেশির জোর হারিয়ে পড়ে গিয়ে ঘটতে পারে অন্য বিপদ।

  • বসে হাঁটা: চেয়ারে বসে করতে পারেন ওয়াকিং, জগিং, রানিং। হাঁটা কিংবা দৌড়ানোর ভঙ্গিমায় হাত-সহ শরীরের উপরের অংশের গতিবিধিতে বাইসেপ, ট্রাইসেপ, চেস্ট, স্ক্যাপুলা ইত্যাদি শরীরের নানা অংশের ব্যায়াম সম্ভব। সব মিলিয়ে অন্তত মিনিট দশেক নিয়মিত এই ব্যায়াম করা জরুরি।
  • অ্যারোবিক্সেও উপকার: চেয়ারে বসেই পা স্ট্রেচ করে দিন সামনে। প্রশিক্ষকের পরামর্শে মিউজ়িকের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সামনে, পিছনে, ডান দিক, বাঁ দিকে শুধু পায়ের মুভমেন্ট করুন। এতে শরীরের নিম্নাঙ্গের পেশি, কোমরের জোর বাড়বে।
  • করুন স্কিপিং: বসে কিন্তু করতে পারবেন স্কিপিংও। পায়ের পাতার উপরে ভর দিয়ে পা দু’টি ক্রমাগত উপর-নীচ করুন। সঙ্গে হাত মুঠো করে স্কিপিংয়ের দড়ি ঘোরানোর ভঙ্গিতে কব্জি ঘোরান। লক্ষ রাখবেন গোড়ালি যেন মাটিতে না ঠেকে যায়। এতে পায়ের কাফ, গ্লুটার মাসল, থাইয়ের পাশাপাশি শরীরের সার্বিক তালমিলও বাড়বে। দিনে অন্তত ৫০ বার করুন এই স্কিপিং।
  • স্কোয়াটও উপকারী: করতে পারেন স্কোয়াটও। দাঁড়ানো অবস্থা থেকে সে ক্ষেত্রে পুরোপুরি চেয়ারে বসবেন না। অর্ধেক বসুন, আবার দাঁড়ান। এ ভাবে অন্তত দশ বার করুন। সামান্য বিশ্রাম নিয়ে দু’ থেকে তিন সেট করুন।
  • হ্যামস্ট্রিং জরুরি: চেয়ারে বসে শরীরের সঙ্গে সমকোণে পা স্ট্রেচ করে দিতে পারেন সামনে। খেয়াল রাখবেন পা যেন মাটিতে না ঠেকে। এই অবস্থায় পা ধরে রেখে দশ গুনুন। নামিয়ে নিয়ে একই ভাবে অন্য পায়ে করুন।

এ ছাড়াও, বাইসেপ, ট্রাইসেপ, কোর মাসল, গ্লুটার মাসলের জোর বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন ওয়ার্ক আউট, ক্যালাসথেনিক্স করতে পারেন। শরীর নিতে পারলে প্ল্যাঙ্কও করা যেতে পারে।

খেয়াল রাখবেন

অটোইমিউন ডিজ়িজ়ে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে কিন্তু হাই ইন্টেনসিটি ইন্টারভ্যাল ট্রেনিং ক্ষতিকর। এই রোগীদের জন্য দরকার লো ইন্টেনসিটি সার্কিট ট্রেনিং।

যে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত

দীর্ঘক্ষণ যাবৎ শারীরচর্চা এই রোগীদের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর। প্রাথমিক ভাবে শরীর ঠিক যতটুকু নিতে পারবে, সেটুকু করাই ভাল। ধীরে ধীরে সময় বাড়ানো দরকার। প্রথম দিকে ২০ মিনিট ব্যায়াম করাই ভাল, পরে সময় বাড়ালেও, দিনে ৪৫ মিনিটের বেশি শারীরচর্চা না করাই উচিত। অত্যধিক শারীরচর্চাও কিন্তু এই রোগীদের ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে।

তবে শারীরচর্চা শুরুর আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ফিটনেস প্রশিক্ষকেরও রোগীর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল থাকা এবং সেই অনুযায়ী এক্সারসাইজ় সাজানো জরুরি। ওষুধের পাশাপাশি নিয়মিত এই শারীরচর্চায় পেশির জোর বাড়বে। ফলে সহজেই কাবু না হয়ে, নিয়ন্ত্রণ বাড়বে শরীরের উপরে। অন্যান্য কাজকর্ম করাও সহজ হবে। একই সঙ্গে আত্মবিশ্বাস ও রোগের মোকাবিলা করার জন্য মনোবল বাড়বে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement