হয়তো এই লেখাটাও আপনি বসে বসেই পড়ছেন। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। হয়তো এর পরের কাজগুলোও বসে বসেই সারতে হচ্ছে। আর সেখান থেকেই শুরু সমস্যা। এখন অনেকেই সেডেন্টারি লাইফস্টাইলে অভ্যস্ত। অর্থাৎ দিনের বেশির ভাগ সময়ই কাটে বসে বসে। অফিসে হয়তো ডেস্কওয়র্ক করে থাকেন। হিসেব করে দেখুন, সারা দিনে কতক্ষণ আপনাকে বসে থাকতে হয়। অফিসে আট ঘণ্টা, তার পরে যাতায়াতের সময়ে যানবাহনে আরও এক ঘণ্টা। বাড়ি ফিরেও ঘরের মধ্যে ঘোরাঘুরি ছাড়া তেমন এক্সারসাইজ় করা হয়ে ওঠে না। কিন্তু তা তো শরীর বুঝবে না। ক্রমশ শরীর ফিটনেস হারাবে। ফলে বসে বসেই বাসা বাঁধবে নানা অসুখ, আধুনিক ভাষায় যাকে বলে ‘সিটিং ডিজ়িজ়’।
সমস্যা কোথায়?
টানা একই পজ়িশনে বসে থাকতে থাকতে স্পন্ডিলোসিসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তা ছাড়া ওবেসিটি তো রয়েছেই। এমনকি শারীরচর্চার অভাবে ডায়াবিটিস হওয়ার ভয়ও দেখা দিতে পারে। ফিটনেসও অনেক কমে যায়। এক দিন একটু খাটুনি হলেই হাঁপিয়ে পড়বেন।
তা হলে উপায়?
উপায় একটাই, শারীরচর্চা। তার জন্য সময় বার করতে হবে অফিস ও বাড়ির কাজের ফাঁক থেকে। অল্প অল্প করে সময় বার করে ব্যায়াম শুরু করুন। দেখবেন, কিছু দিন পরে শারীরচর্চার সময়টা বেড়ে যাবে। তবে সকলের আগে জরুরি নিজেকে অ্যাক্টিভ রাখা। তার জন্য অফিস ও বাড়িতে আপনার সময় ও কাজ প্রথমে ভাগ করে নিতে হবে। সেই অনুযায়ী রুটিন তৈরি করুন।
অফিসে যখন
শুরু করতে হবে অল্প অল্প করে। ধরুন প্রত্যেক ঘণ্টায় দশ মিনিটের ব্রেক নিয়ে অফিসের মধ্যেই হেঁটে আসুন। সময় একটু বেশি থাকলে অফিসের সামনে কোনও পার্ক থেকে মিনিট কুড়ি হেঁটে আসতে পারেন। অফিসের সময় নষ্ট করতে না চাইলে ফোনে কথা বলার সময়ে করিডোরে হেঁটে হেঁটে কথা বলতে পারেন।
লাঞ্চ ব্রেকে খাওয়ার সময় কমিয়ে পরে বাড়তি সময় নিয়ে ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ় সেরে নিতে পারেন। কোথায় করবেন, সেই জায়গা আপনাকেই বেছে বার করতে হবে।
চেয়ারে বসেও অনেক ধরনের ব্যায়াম করা যায়। সে ধরনের ব্যায়ামও একটু করে নিতে পারেন।
নিজের বসার ভঙ্গি বারবার পালটাতে থাকুন। তা হলে নিজের মেরুদণ্ড বা শরীরের একটা কোনও অংশের উপরে বেশি চাপ পড়বে না।
অফিস যাওয়া বা বাড়ি ফেরার পথে হাঁটার সুযোগ হারাবেন না। অনেকেই বাস স্ট্যান্ড বা মেট্রো স্টেশন থেকে রিকশা নেন। সেই পথটা নাহয় হেঁটেই ফিরুন। এতে শরীরই সুস্থ থাকবে।
অফিসে, মেট্রো স্টেশনে বেশির ভাগ সময়েই আমরা লিফ্ট ব্যবহার করি। খুব দরকার না পড়লে লিফ্ট ব্যবহার করবেন না। বরং সিঁড়ি ভেঙে হেঁটে উঠুন।
বাড়িতেও শুধু বিশ্রাম নয়
বাড়ি বা ফ্ল্যাটে বাগান থাকলে বাগানের কাজে মন দিন। গাছ লাগানো, মাটি তৈরি করা, সেই মাটি জোগাড় করা... এই ধরনের কাজে অনেকটাই খাটুনি হয়। তার সঙ্গে শরীরও সচল থাকে।
বাড়ির খুদেটিকে বা পোষ্যকে নিয়ে হাঁটতে বেরোতে পারেন। তাদের সঙ্গে সামনের মাঠেও খেলতে যেতে পারেন। এতে সে তো খুশি হবেই, তার সঙ্গে দৌড়াদৌড়ি করে আপনারও ঘাম ঝরবে।
বাড়ির সাইকেল বা বন্ধুর সাইকেলটি টেনে নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন। পাড়ার মধ্যে যাতায়াত, দোকান বাজার করার জন্য রিকশায় না উঠে সাইকেল বা পদযুগলেই ভরসা রাখুন। এতে কাজ করতে করতেই শারীরচর্চা হয়ে যাবে। অতিরিক্ত সময়ও নষ্ট হবে না।
বাড়ির ক্লিনিং-ডাস্টিংয়েও হাত লাগাতে পারেন। ঘরের ঝুল ঝাড়া থেকে শুরু করে, জানালার কাচ মোছার মতো কাজও মাঝেমাঝে নিজে হাতে করতে পারেন। এতে শরীর সক্ষম থাকবে।
ছুটির দিনে বিকেলে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ুন। তবে শুধুই গাড়ি চেপে রেস্তরাঁ বা প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে বসে থাকা নয়। বরং বেছে নিন কোনও পার্ক বা লেকের ধার। সেখান থেকে হেঁটে ঘুরে আসুন। এতে প্রকৃতি যেমন আপনার মনকে তরতাজা করে তুলবে, হাঁটাচলায় শরীরও থাকবে স্বতঃস্ফূর্ত।
মনে রাখবেন, মেশিন সচল রাখা জরুরি, না হলে মরচে ধরতে সময় লাগে না। একই কথা প্রযোজ্য শরীরেও। শরীর যত সচল থাকবে, ততই সক্ষম থাকবে। তাই হাজারো কাজের মাঝেও সময় বার করতে হবে শারীরচর্চার জন্য।
শিশুদের প্রতি নজর দিন
সেডেন্টারি লাইফস্টাইল কিন্তু থাবা বসাচ্ছে শৈশবেও। এখন অনেক শিশুই বাইরে আর ছোটাছুটি করে খেলা করে না। বরং বাড়িতে বসে টিভি বা মোবাইল দেখতেই তারা স্বচ্ছন্দ। তাদের হাতে ফুটবল বা ব্যাডমিন্টন তুলে দিন
সপ্তাহে দু’-এক দিন সময় বার করে তাদের নিয়ে যান কোনও মাঠে বা পাড়ার গলিতে। সেখানে তাদের সঙ্গে নিজেও খেলতে পারেন সাঁতারও খুব ভাল ব্যায়াম। তাই পুলেও নেমে পড়তে পারেন সপরিবার বাড়ির সামনে খেলার মতো উপযুক্ত জায়গা না থাকলে সন্তানকে কোনও ফুটবল, ক্রিকেট, ক্যারাটে বা ব্যাডমিন্টনের মতো খেলায় ভর্তি করে দিতে পারেন। নিদেনপক্ষে সাঁতারে। এতে তার শরীর বেশ অ্যাক্টিভ থাকবে
মডেল: ত্বরিতা চট্টোপাধ্যায়, স্নেহা বসু; ছবি: দেবর্ষি সরকার, অমিত দাস (স্নেহা); মেকআপ: প্রিয়া গুপ্ত (স্নেহা)
লোকেশন: দ্য ভর্দে ভিস্তা ক্লাব, চকগড়িয়া